সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মহম্মদ ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত। মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত কবিগুরুর পৈতৃক ভিটে কাছারি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে ঐতিহাসিক বাড়িটির নিরাপত্তা ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ভারত। দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এবার সাফাই গেয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলল, পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তদন্ত চলছে। কোনও নিদর্শন নষ্ট হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সয়াল এই ঘটনাকে ‘জঘন্য’ উল্লেখ করে বলেন, “কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারি বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা চায় ভারত। এটা দুঃখের বিষয় এমন ঘটনা বারবার ঘটে চলেছে। উগ্রপন্থীরা বাংলাদেশের সহনশীলতা ও সমন্বয়মূলক সংস্কৃতির প্রতীকগুলো যেভাবে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে চলেছে, এই আক্রমণ তারই অংশ। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।” প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
এরপর আজ এক বিবৃতিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে। এর বাইরে কোনও সাম্প্রদায়িক কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।
এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আজ থেকে কাছারি বাড়ি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। প্রতিবছর কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত স্থানটি দর্শন করতে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীর আসেন। গত ৮ জুন কাছারি বাড়ির দায়িত্বরত কর্মচারী ও একজন দর্শনার্থীর মধ্যে পার্কিং টিকিট নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি ও কথা কাটাকাটির জেরে হাতাহাতি এবং মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জনৈক শাহনেওয়াজ নামে একজন দর্শনার্থীকে মারধর করে আটকে রাখার অভিযোগও পাওয়া যায় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাস্টডিয়ান হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এ বিষয়ে তদন্ত চলার মধ্যেই ১০ জুন দর্শনার্থী শাহনেওয়াজের পক্ষে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি মানববন্ধন করে। যেখান থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাস্টডিয়ান হাবিবুর রহমান ও অন্যান্য দায়ী কর্মচারীদের শাস্তির দাবি জানানো হয়। মানববন্ধন থেকে উত্তেজিত জনতা কাছারিবাড়িতে প্রবেশ করে মূলত কাছারিবাড়ির কর্মচারীদের মারধর করার উদ্দেশ্যে। রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি।
প্রসঙ্গত, ১৯৪০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর শাহজাদপুরের জমিদারি কিনে নেন। সেই সময়ই কাছারিবাড়ি ঠাকুর পরিবারের হাতে আসে। কবিগুরুও জীবনের বেশ কিছুটা সময় এই বাড়িতে কাটিয়েছেন। এরপর ১৯৬৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটিকে সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়। পরে এটিকে মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়। বাড়িটি বর্তমানে রবীন্দ্র যাদুঘর হিসেবে পরিচিত। এই ঐতিহাসিক জায়গায় এমন ঘটনায় নিন্দা হচ্ছে নানা মহলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.