সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণ নিয়ে টানাপোড়েন তুঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে। মুজিবকন্য়াকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে চিঠিও দিয়েছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। এদিকে, গত বছর বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে মানবতা বিরোধী অপরাধ মামলায় হাসিনা-সহ তিনজনের বিরুদ্ধে শুনানি শেষ। চার্জ গঠনের দিনক্ষণ ধার্য করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১০ জুলাই তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হবে। এর মাঝেই মুজিবকন্যার নাম না করে ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বললেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তিকে আর রক্ষা করার সুযোগ নেই ভারতের।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ‘গণ অভ্যুত্থানে’ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন হাসিনা। বোন রেহানাকে নিয়ে তড়িঘড়ি চলে আসেন ভারতে। দেশ ছাড়ার পর থেকে দিল্লিতে বসেই একাধিকবার বার্তা দিতে দেখা গিয়েছে হাসিনাকে। এমনকী বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে ফিরবেন। যা হয়েছে তার বিচার আল্লা করবে। ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনি আদালতে হাজিরা না দিলে তাঁকে ছাড়াই চার্জ গঠন, শুনানি হবে। এই আজ বুধবার এক বিবৃতিতে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা এখন ভারতের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন বিবেক ও নৈতিক স্পষ্টতা নিয়ে কাজ করে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার প্রত্যার্পণের যে আইনগত অনুরোধ জানিয়ে আসছে, তা মেনে নিতে ভারত অস্বীকার করেছে। এ অবস্থান আর গ্রহণযোগ্য নয়। আঞ্চলিক বন্ধুত্ব, কৌশলগত হিসাব কিংবা কোনও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার—কোনও কিছুই বেসামরিক নাগরিকদের পরিকল্পিত হত্যার অজুহাত হতে পারে না।’
সম্প্রতি একটি অডিও প্রকাশ্যে এসেছে। বিবিসি সেই অডিওটির সত্যতা যাচাই করেছে। সেখানে হাসিনাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ”যেখানেই ওদের দেখবে গুলি করে মারো।” স্বাভাবিকভাবেই, এমন অডিও ঘিরে বিতর্ক নতুন দানা বেঁধেছে। ওই অডিও গত ১৮ জুলাইয়ের। সেই সময়ে গণভবন থেকে ফোনে কথা বলছিলেন হাসিনা। এবং এর কয়েক ঘণ্টা পরই দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে সেনার মানের রাইফেল ব্যবহার করা হয়। বিবিসি পুলিশ নথি দেখিয়ে এমনটাই দাবি করেছে। রাষ্ট্রসংঘের দেওয়া তথ্য অনুসারে, অন্তত ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল গত বছরের জুলাই ও আগস্টে। এই প্রসঙ্গে টেনে শফিকুল আলম বলেন, ‘ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিং, যা বিশ্বমানের অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা যাচাই করেছেন, তা প্রমাণ করে যে এ তাৎক্ষণিক বা দুর্ঘটনাবশত সহিংসতা ছিল না। এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত, অনুমোদিত হত্যাকাণ্ড। যখন বিবিসির মতো একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সংঘটিত অপরাধ উদ্ঘাটনে তাদের পূর্ণ তদন্ত সক্ষমতা কাজে লাগায়, তখন বিশ্বকে তা আমলে নিতেই হয়।’
উল্লেখ্য়, হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক গণহত্যার মামলা-সহ শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও। তাই মুজিবকন্যাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে চিঠি পাঠায় ইউনুস সরকার। যার কোনও উত্তর দিতে চায়নি ভারতের বিদেশমন্ত্রক। পরে হাসিনার ভিসা বাতিল করে দেয় ঢাকা। কিন্তু তাঁর দিল্লিতে থাকার মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় ভারত। এনিয়ে দুদেশের মধ্যে সংঘাতের আবহ আরও বাড়ে। এবার ফের একবার হাসিনাকে নিয়ে ভারতকে বার্তা দিলেন ইউনুসের প্রেস সচিব। হাসিনার একের পর এক হুঙ্কারে অস্বস্তি বেড়েছে ইউনুসের। আওয়ামি লিগ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের দোহাই দিয়ে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এবার তারা বিচারের নামে হাসিনাকে গরাদের পিছনে ভরতে চায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.