সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঢাকার কাছে এবার এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) বিক্রি করবে পাকিস্তান। সূত্রের খবর এমনই। শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ ছিল ‘ভারতবন্ধু’। কিন্তু মহম্মদ ইউনুস ক্ষমতায় আসার পর কূটনীতির ময়দানে বদলে গিয়েছে সেই সংজ্ঞা। একাত্তরের গণহত্যা, ধর্ষণ এই সমস্ত কিছুর কালো অধ্যায় ভুলে গিয়ে ‘নতুন’ বাংলাদেশ এখন আলিঙ্গন করছে পাকিস্তানকে। প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস মজে ‘পাক প্রেমে’। ইসলামাবাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত করতে উঠেপড়ে লেগেছে ঢাকা। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে প্রতিরক্ষা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত আহ্বান জানানো হচ্ছে। দেশে ভারত বিরোধিতার হাওয়া তুলে এখন আরও বেশি করে পাকিস্তানের থেকে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়াচ্ছে ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার।
শেখ হাসিনাকে নিয়ে এখন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ তুঙ্গে। পাশাপাশি হিন্দু নির্যাতন, অনুপ্রবেশ এরকম একাধিক বিষয়ে দুদেশের সম্পর্কে ফাটল বাড়ছে। আর এই ঘোলা জলেই মাছ ধরতে নেমে পড়েছে পাকিস্তান। হাসিনাহীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে তৎপর ইসলামাবাদ। সম্প্রতি পাকিস্তান জানিয়েছে, তাদের কাছে বর্তমানে অন্তত তিনটি অতিরিক্ত এলএনজি কার্গো রয়েছে। যা তারা কাতার থেকে আমদানি করেছিল। এগুলোর প্রয়োজন হচ্ছে না আপাতত। তাছাড়া এলএনজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় স্থানীয় ব্যবহারকারীদের কাছে জ্বালানি পণ্যটি ছাড়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় উৎপাদকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। স্থানীয় উৎপাদকদের বার্ষিক ৩৭ কোটি ৮০ লক্ষ ডলার ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় পরিসরে এলএনজি ব্যবহার করে আসছিল পাকিস্তান। কিন্তু টানা তিন বছর জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহার কমেছে। পরিবর্তে ব্যবহার বেড়েছে সৌরশক্তির। কারণ নবায়নযোগ্য শক্তির এ উৎসের ব্যবহার তুলনামূলক সস্তা। কিন্তু এ কারণে দেশীয় গ্যাস সরবরাহকারীরা উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছেন। স্থানীয় সরবরাহের উন্নতি না হলে আগামী ১২ মাসে ব্য়বসায়ীরা ৩৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। এদিকে, এলএনজি আমদানিকে সামনে রেখেই পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। কেননা গত কয়েক বছর ধরে দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় এলএনজি আমদানি বাড়াতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলার পরিকল্পনায় বলা হয়েছে— আগামী ছয় থেকে সাত বছরের মধ্যে দেশের মোট ব্যবহৃত গ্যাসের ৭৫ শতাংশই আমদানি করতে হবে। সূত্র বলছে, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোকে পেট্রোবাংলার পাঠানো গত ৬ ও ৯ জানুয়ারির দুটি চিঠিতে আমদানি নির্ভরতার এই চিত্র উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র বলছে, বাংলাদেশের স্থলভাগে আর কোনও সেরকম গ্যাসের বড় খনি নেই। কেবল ভোলা ছাড়া অন্য কোথাও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে আপাতত দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব না। স্থলভাগে সামান্য কিছু উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলেও তা দিয়ে ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিদিন ২৭০০ থেকে ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে আমদানি করা এলএনজি থেকে ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট, বাকিটা দেশীয় উৎস থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এলএনজির সরবরাহ বাড়াতে হচ্ছে। দেশে তেল-গ্যাসের অনুসন্ধান আগে যেমন হয়নি, এখনও হচ্ছে না। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিং রাউন্ডে কোনও কোম্পানি অংশ নেয়নি। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিদেশি কোম্পানিগুলো হয়তো বড় বিনিয়োগের ঝুঁকি নিচ্ছে না। ফলে পেট্রোবাংলার সামনে আমদানি করে চাহিদা মেটানোর কোনও বিকল্প নেই। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ইউনুস সরকারকে হাত করতে চাইছে পাকিস্তান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.