নিজস্ব ছবি
সুকুমার সরকার, ঢাকা: আশ্বিনের আলো-আঁধারীর সকালে ঘুমভাঙা চোখ নিয়ে অনেকেই ছুটে গেছেন ‘লাল দুর্গা’র মণ্ডপে প্রতিমা দশনে। ভিড় কম হবে, মনে করেই সাতসকালে ভক্তদের ছুটে যাওয়া। তাতেও কমছে না ভিড়। বাংলাদেশের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ের এই ‘লাল দুর্গা’ তিনশ বছর ধরে সনাতন ধর্মের মানুষের কাছে আলাদা গুরুত্ব পায়। ভক্তদের বিশ্বাস, এই দুর্গাবাড়িতে স্বয়ং দেবী অধিষ্ঠান করেন। এই বিশ্বাস থেকেই দুর্গাপুজোয় এই মণ্ডপে আসেন ভক্তরা। প্রতিবছর দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠে এই উৎসব প্রাঙ্গণ।
মহাষ্টমীতে রাজনগরের পাঁচগাঁও গ্রাম নানা বয়সের মানুষের পদচারণায় মুখর। মণ্ডপের প্রবেশপথের দু’পাশে বসেছে বহু দোকান। এরমধ্যে কিছু দোকান স্থায়ী হলেও বেশিরভাগ দোকানই উৎসবকেন্দ্রিক। আছে তিলুয়া-বাতাসা, খাজা, গজা, জিলাপি, মিষ্টি, ফুচকা-সহ বিভিন্ন রকমের খাবারের দোকান। মণ্ডপে বাজছে ঢোল-কাঁসর। প্রতিমার সামনে জ্বলছে মোমবাতি, ধূপ-ধুনো। ভক্তরা তাঁদের মনস্কামনা জানিয়ে জালাচ্ছেন প্রদীপ।
পাঁচগাঁওয়ের এই প্রতিমা নিয়ে ভক্তদের কৌতূহলের পেছনে রয়েছে প্রায় ৩০০ বছরের ইতিহাস। বলা হয়, সর্বানন্দ দাস নামে একজন সাধক পুরুষ ভারতের অসমে মুনশি পদে চাকরি করতেন। তিনি একবার পুজোর জন্য কামাখ্যা মন্দিরে স্থানীয় মানুষের কাছে পাঁচ বছর বয়সের একটি মেয়েকে চান। পুজো চলাকালীন ধীরে ধীরে মেয়েটির শরীরের রং বদলে যায় বলে জানা জায়। তাঁর শরীরের রং লাল হতে শুরু করে। কথিত আছে পুজো চলাকালীন সর্বানন্দকে বর চাইতে বলেন সেই দেবী। জানা যায়, প্রতিবছর শারদীয় দুর্গাপুজোর সময় পাঁচগাঁও দুর্গামণ্ডপে স্বয়ং দেবীকে আসতে হবে এমন বর চেয়েছিলেন সর্বানন্দ। দেবী নির্দেশ দেন, পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রং হবে লাল। সেই থেকেই পাঁচগাঁওয়ে লাল বর্ণের প্রতিমার পুজো হয়ে আসছে।
আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে একমাত্র পাঁচগাঁওয়ের দুর্গাবাড়িতেই দেবী দুর্গার রং লাল হয়। তবে কামাখ্যায় লাল বর্ণের প্রতিমা আছে। পাঁচগাঁওয়ে ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে ভক্তদের ভালোবাসা পাচ্ছেন এই লাল বর্ণের দেবী। পুজোর এই সময়টিতে হাজারো মানুষ তাঁদের মনোবাসনা নিয়ে এখানে আসেন। অনেক পরিবারের কাছে দুর্গাপুজোয় পাঁচগাঁওয়ের দেবী-দর্শন নিয়মিত বিষয়। অন্য ধর্ম এবং সম্প্রদায়ের মানুষও এই উৎসবে আসেন। স্থানীয় মানুষ বলেন, পুজোকে কেন্দ্র করে এই চার-পাঁচ দিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভক্তরা ভিড় করেন এখানে।
সর্বানন্দ দাসের এক উত্তরসূরি, পাঁচগাঁও দুর্গাপুজোর পরিচালক সঞ্জয় দাস বলেন, তিনি হচ্ছেন পুজো পরিচালনায় ষষ্ঠ পুরুষ। বংশানুক্রমিকভাবে তাঁরা এই পুজো পরিচালনা করছেন। তবে ১৯৭১ সালে এই পুজোয় ছেদ পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিমা নির্মাণ করে পুজো করা সম্ভব হয়নি। সেবার ঘটে পুজো করা হয়েছিল। সঞ্জয় দাস বলেন, ‘পুজো ঠিকঠাক শুরু হয়েছে। প্রশাসন থেকে সব সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.