Advertisement
Advertisement
Probashe Durga Puja

৫০০ বছরের ঢাকের হাট! দুর্গাপুজোয় অন্য উৎসবে মাতোয়ারা বাংলাদেশের এই অঞ্চলে

ষোড়শ শতকে শুরু হওয়া এই উৎসবের ইতিহাস জানেন?

Probashe Durga Puja: Dhaker haat in this place of Bangladesh is different festival during Durga puja
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 27, 2025 5:52 pm
  • Updated:September 27, 2025 5:54 pm   

সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজোয় মেতে উঠেছে ওপার বাংলাও। এই দুর্গাপুজোয় ধর্মের কোনও বাধা নেই। সেই কবে থেকে বাংলায় হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সর্বধর্মের মানুষ এক সারিতে শামিল হয়ে দুর্গোৎসব পালন করেন। আর দশভুজার আরাধনায় উলুধ্বনি, ধুনুচি নাচ, ঢাক-ঢোলের সমারোহ তো থাকবেই। তবে বাংলাদেশের কটিয়াদিতে ঢাকের বোলের গুরুত্ব অনেকটা বেশি। শারদোৎসবের সময়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি মেতে ওঠে বিশেষ উৎসবে। ৫০০ বছর ধরে এখানে চলছে ‘ঢাকের হাট’। এই হাটে গেলে চোখে পড়বে অন্যরকম বাদ্যযন্ত্রের প্রতিযোগিতা। বাদক বা যন্ত্রীরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেচে-গেয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন। সর্বত্রই উৎসবের রং। দুর্গাপুজো উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে এবারও বসেছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দেশের একমাত্র ঢাকের হাট। ঢাক ছাড়াও ঢোল, ড্রাম, বাঁশি, সানাই, মন্দিরা, কাঁসি, ঝনঝনি-সহ বাহারি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বাজনাদাররা আসেন এই হাটে।

Advertisement

কটিয়াদির পুরানবাজার এলাকায় ছ’দিন ধরে চলে ঢাকের হাট। নাম ঢাকের হাট হলেও এখানে ঢাক বা বাদ্যযন্ত্র কেনাবেচা হয় না। বাদকরা তাঁদের বাদ্যযন্ত্র সুমধুর সুরে বাজিয়ে লোকজনকে আকৃষ্ট করেন। পরে অর্থের বিনিময়ে শুধু পুজো চলাকালীন আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। পুজো শুরুর আগে দরদাম ঠিক করে বায়নার টাকা দিয়ে বাদ্যযন্ত্র-সহ যন্ত্রীদের সঙ্গে করে নিয়ে যান পুজোর আয়োজকরা। কার চুক্তিমূল্য কত হবে, তা নির্ধারণ হয় ঢাকিদের দক্ষতার উপর।

কটিয়াদিতে ৫০০ বছরের পুরনো ঢাকের হাট। নিজস্ব ছবি।

এই হাটে আগত ঢাকিরা জানান, একেকজন ঢাকী ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার, বাঁশিবাদক ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। আর ছোট ব্যান্ডদল ১৫ হাজার থেকে ২০ এবং ৭/৮ জনের বড় দল ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকায় চুক্তি পাচ্ছেন। ঢাকের হাটে বাহারি রং আর আকারের ঢাকঢোল, বাঁশি, কাঁসি, খোল-সহ অসংখ্য বাদ্যযন্ত্রের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তাঁরা এসেছেন ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ-সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে।

এহেন অভিনব ঢাকের হাটের তত্ত্বাবধান করছে স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনের সভাপতি শীতলচন্দ্র সাহা জানালেন, ”এই হাট শুরু হয় সেই ষোড়শ শতকে, সামন্তরাজা নবরঙ্গ রায়চৌধুরীর আমলে। চারিপাড়ার রাজপ্রাসাদে তিনিই প্রথম দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন। সেবার পুজোর জন্য সেরা ঢাকি খুঁজতে ঢাকার পাশের বিক্রমপুরে বার্তা পাঠান তিনি। নৌকায় ঢাকি আসে কটিয়াদিতে। রাজা নিজে বাজনা শুনে বেছে নেন দল। সেই থেকেই শুরু হয় ঢাকের হাট, যা আজ হয়ে উঠেছে শ্রুতির উৎসব, ছন্দের প্রতিযোগিতা আর সংস্কৃতির মিলনমেলা।”

ঢাকের হাটে দেখা হয়ে গেল বাজিতপুরের অজিত দাসের সঙ্গে। এক ঢাকির সঙ্গে ১৪ হাজার টাকায় চুক্তি করেছেন তিনি। বললেন, ‘‘সবার বাজনা শুনেছি। যেটা মন ছুঁয়েছে, তাকেই নিয়েছি।’’ নেত্রকোনার বারহাট্টা থেকে রিপন কর্মকার ও সুনীল রবিদাস এসেছেন তাঁদের পুজোয় বাদক দল নেবেন বলে। তাঁদের কথায়, ‘‘এই প্রথম ঢাকের হাটে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। চেষ্টা করছি সাধ্যের মধ্যে ভালো একটা দল নিতে।’’ এ হাটে একজনের ঢাকি যেমন আছে, তেমনি দলগত বাজনার দলও রয়েছে। একজন ঢাকীর পারিশ্রমিক ১৪-১৫ হাজার টাকা। দলের ক্ষেত্রে তা ৫০ হাজার থেকে দেড়-দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত চড়ে। বিক্রমপুরের পরিমল দাস বললেন, ”২০ বছর ধরে এখানে আসছি। ফোনে চুক্তি করলেও পারতাম, কিন্তু ঢাকের হাটে না এলে মন ভরে না।’’ তবে তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমরা এদিনটির জন্য অপেক্ষা করি। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। খাটাখাটনির তুলনায় পারিশ্রমিক পাওয়া যায় না। তবু পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রেখেছি। আগে বাপ-দাদারা আসতেন, এখন আমি আসি।’’

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ