Advertisement
Advertisement
Probashe Durga Puja

বাংলাদেশে বেড়েছে দুর্গাপুজোর সংখ্যা! প্রতিমার জোগান দিতে হাত লাগাচ্ছেন মহিলারাও

প্রতিমার চাহিদা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে তাই কাজে হাত লাগাতে হচ্ছে মহিলাদেরও।

Probashe Durga Puja women also making durga idol in bangladesh
Published by: Anustup Roy Barman
  • Posted:September 27, 2025 7:07 pm
  • Updated:September 27, 2025 7:16 pm   

সুকুমার সরকার, ঢাকা: সংসারের নিত্যকাজ সামলে খুব অল্প সময় পাওয়া যায় নিজের জন্য। এই স্বল্প সময়ের অবসরেই বাংলাদেশের গ্রামীণ নারীদের হাতে উঠে আসছে ভেজা কাদামাটি। ধীরে ধীরে সেই মাটির ছোঁয়ায় জন্ম নেয় দেবীমূর্তির কাঠামো। খড়ের গায়ে মাটি মাখিয়ে আকার দেন, রোদে শুকিয়ে গড়ে তোলেন প্রতিমা। আবার কখনো তুলির আঁচড়ে রঙ দেন কাঠামোর গায়ে। সংসারের চেনা পরিসরে এবার নতুন দৃশ্য ফুটে উঠছে বাংলাদেশে। নারীর হাতেই তৈরি হচ্ছে মা দুর্গার প্রতিমা।

Advertisement

বাংলাদেশের উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রামে প্রতিমা গড়ার চরম ব্যস্ততা দেখা যায়। যুগ যুগ ধরে পুরুষরাই এই শিল্পের প্রধান কারিগর ছিলেন। কিন্তু এবার প্রতিমা গড়ার ক্ষেত্রে অন্য মাত্রা চোখে পড়ছে কুড়িগ্রামে। জেলায় প্রতিমার চাহিদা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এর ফলে ঘরের মহিলারাও সংসারের কাজ সামলে হাত লাগিয়েছেন প্রতিমা গড়ার কাজে। তাদের হাতেই চলছে প্রতিমার কাঠামো গড়া থেকে শুরু করে রঙ, অলংকার, শাড়ির কাজ সবই। এই দৃশ্য শুধু নতুন নয়, এক অর্থে সাহসীও বটে! পারিবারিক পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা আর সহজাত নেশার টানে নারীরা এগিয়ে এসেছেন পুরুষদের পাশে দাঁড়াতে।

জেলার রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজার গ্রামের বেবি মালাকার বলেন, “এবার জেলায় গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ পুজো হচ্ছে। মণ্ডপগুলো প্রতিমার অর্ডারও দিয়েছে। আগে কখনও সংসারের কাজ সামলে প্রতিমার কাজে হাত দেওয়া হয়নি। কিন্তু এবছর চাপ বেড়ে জাওয়ায় বাধ্য হয়ে সংসারের কাজ ফেলে স্বামীকে সাহায্য করছি।” শুধু গৃহবধূ নয়, কিশোরী মেয়েরাও শিখে নিচ্ছে প্রতিমা গড়ার কাজ। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সপ্তমী মালাকার বলেন, “এক সপ্তাহ ধরে স্কুলে যাই না। বাবা একা এত কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছে। গতবার আমরা সাতটা প্রতিমা বানালেও এবার অর্ডার এসেছে পনেরোটা। তাই আমিও মাটি গড়তে, কাঠামো বাঁধতে শিখছি। বাবাকে সাহায্য করছি।” সংসারের প্রয়োজন আর পারিবারিক দায়বদ্ধতা ছোট্ট মেয়েদেরও টেনে এনেছে শিল্পের জগতে।

সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি বাজারের পূজা রানী আগে প্রতিমার অলংকার অথবা সাজসজ্জার কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো মায়ের প্রতিমা তৈরি করছি। আগে শুধু প্রদীপ, ধূপকাঠি বা কলস বানাতাম; কিন্তু এবার প্রতিমার অলংকার, মুকুট এবং গায়ের রঙ দেওয়ার কাজ করছি। নতুন ধরনের আনন্দ লাগছে নিজের হাতে দেবীমূর্তি সাজাতে।

অন্যদিকে বংশ পরম্পরায় প্রতিমা তৈরির সঙ্গে যুক্ত কালিকান্ত পাল বললেন, “সারা বছর আমরা মাটির হাঁড়ি-পাতিল তৈরি করে সংসার চালাই। দুর্গাপুজোর সময়ই আসে বড় অর্ডার। তখনই সংসারে একটু স্বস্তি মেলে। গতবার আটটা প্রতিমা বানিয়েছি, এবার অর্ডার এসেছে চোদ্দটার। একার হাতে সব কাজ করা সম্ভব নয়। তাই ঘরের মেয়ে-বউরা সাহাজ্য করছে। তাদের সাহায্য না পেলে এত কাজ শেষ করা যেত না।” অর্থাৎ পারিবারিক সহযোগিতা যেন এই শিল্পের টিকে থাকার অন্যতম ভিত্তি হয়ে উঠেছে।

কুড়িগ্রাম পুজো উদযাপন পরিষদের তথ্য বলছে, জেলার ৯টি উপজেলায় এবছর মোট ৫১৭টি পুজোমণ্ডপে দুর্গোৎসব হচ্ছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৫৫টি, রাজারহাটে ১৩১টি, উলিপুরে ১২৫টি, চিলমারীতে ২৪টি, নাগেশ্বরীতে ৬৯টি, ভূরুঙ্গামারীতে ২০টি, রৌমারীতে ৭টি, রাজিবপুরে ১টি, ফুলবাড়ীতে ৬৫টি এবং কুড়িগ্রাম পৌরসভায় ২০টি। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৩২টি বেশি। পুজোর সংখ্যা বাড়ায় প্রতিমার চাহিদা বেড়েছে। এই চাপই নারীদের প্রথমবার প্রতিমা তৈরির কাজে যুক্ত করেছে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ