সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জন্ম থেকেই দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে পথচলা। অবশেষে সাফল্যের শিখরে। কিন্তু সিংহাসন প্রাপ্তি, সেও তো কণ্টকময়! কত বিতর্ক, বিরোধিতাই না সঙ্গী হয়েছে প্রধানমন্ত্রিত্বে থাকাকালীন। শেষমেশ তুমুল বিরোধিতা আর চাপের মুখে কুর্সিহারা হতে হয়। তাতেই রাজনৈতিক কেরিয়ার মুখ থুবড়ে পড়েছে, তাই নয়। জনতার দাবি মাথা পেতে নিয়ে স্বদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। বলা হচ্ছে বাংলাদেশের ‘একনায়ক’ শেখ হাসিনার কথা। ২০২৪ সালে জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের পর ঢাকা ছেড়ে আকাশপথে তিনি চলে আসেন চিরকালীন বন্ধুদেশ ভারতে। আপাতত দিল্লির রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেই নতুন অধ্যায়ের বছর ঘুরে গেল। একনজরে ফিরে দেখা যাক ২০২৪ সালের সেই ৫ আগস্ট।
১৪ জুলাই, ২০২৪: শিক্ষাক্ষেত্রে সংরক্ষণের বিরোধিতায় ছাত্র সমাজের আন্দোলন। ধীরে ধীরে তা পরিণত হয় গণ আন্দোলনে।
গোটা জুলাই মাস ধরেই তুমুল অরাজক পরিস্থিতির সাক্ষী ছিল বাংলাদেশ। আন্দোলন দমনে প্রথমে তৎকালীন ক্ষমতাসীন হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিরা আলোচনার টেবিলে বসেন। তাতেও পড়ুয়াদের অনড় মনোভাবে পরে হাসিনার নির্দেশে চলে পুলিশি অত্যাচার। অভিযোগ এমনই (যে অভিযোগের ভিত্তিতে মুজিবকন্যাকে সমস্ত অপরাধের ‘নিউক্লিয়াস’ বলে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে)।
৪ আগস্ট, রাত ১০: বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে হাসিনার সাক্ষাতের কথা ছিল। কিন্তু তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
৫ আগস্ট, রাত ১২.১৫: রাতভর বাংলাদেশ সেনার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। তৎকালীন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকির পরামর্শ, হাসিনা গদি ছাড়ুন। তাতে নারাজ হাসিনা। উলটে সেনাপ্রধানকে তিনি নির্দেশ দেন, প্রতিবাদীদের মুখোমুখি হয়ে সরাসরি ‘অ্যাকশনে’ নামার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে রাজি হননি সেনাবাহিনীর কেউই। রাতভর তাঁকে বোঝানো হয়, আন্দোলন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে হাসিনার ইস্তফাই সহজ ও মঙ্গলময় সমাধান। আর মুজিবকন্যা বারবার বলতে থাকেন, তিনি পালানোর পাত্রী নন।
৫ আগস্ট, সকাল ৮: দেশের বিক্ষোভ পরিস্থিতির আরও অবনতি। গণভবনমুখী আন্দোলনকারীরা। বৈঠক করে তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লা আল মামুন হাসিনাকে জানান, নিরাপত্তারক্ষীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়েও বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে পারছে না। পাশাপাশি দেশের সেনাবাহিনী ফের হাসিনাকে পদত্যাগের কথা বলেন। হাসিনার ত্বরিৎ জবাব, ”আমাকে গুলি করে মারো, গণভবনেই কবর দাও।”
৫ আগস্ট, সকাল ১০.৩০: চারপাশ থেকে ঘেরা গণভবন। নিজেদের রক্ষা করতে হাসিনার বোন শেখ রেহানাও দিদিকে ইস্তফার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু অনড় মুজিবকন্যা।
৫ আগস্ট, দুপুর ১২: লন্ডন থেকে হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের ফোন। মাকে বুঝিয়ে পদত্যাগে রাজি করান। ছেলের কথায় ইস্তফায় রাজি হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। তৎক্ষণাৎ আওয়ামি লিগের সঙ্গে জরুরি বৈঠক, দায়িত্ব বুঝিয়ে ইস্তফাপত্র পেশ।
৫ আগস্ট, দুপুর ২.৩০: বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে সামরিক কপ্টারে ঘুরপথে ঢাকা থেকে দিল্লির পথে হাসিনা। এভাবে পালানোর বিষয়টি প্রথমে গোপন থাকলেও দিল্লি পৌঁছনোর খবরটি জানাজানি হয়ে যায়।
এভাবেই বাংলাদেশে দীর্ঘ কয়েক দশকের হাসিনা জমানার অবসান ঘটে। পরবর্তী এক বছরে পদ্মাপাড়ের দেশটি নানা উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুসকে দায়িত্ব অর্পণ আন্দোলনকারী ছাত্র সংগঠনের। আগামী বছর, ২০২৬ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে স্থায়ী সরকার বেছে নিতে চলেছেন বাংলাদেশবাসী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.