ছবি: জয়ন্ত দাস
ধীমান রায়, কাটোয়া: দেবীপক্ষের শুরুতেই দেখা গেল ‘শান্ত-অপূর্ব মিলন’। আর তাতেই দেড় বছর পর খুলে গেল বন্ধ থাকা দলীয় কার্যালয়ের তালা। শারোদৎসবের মুখে দুই ‘প্রতিপক্ষের’ মিলনে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে এবার দলের মঙ্গল দেখছেন তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরা।
সোমবার মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন সরকার ওরফে শান্তর মধ্যে দেখা গেল নতুন ছবি। একে অপরের হাত ধরে গিয়ে বন্ধ থাকা দলীয় কার্যালয়ের তালা খুলে দেন দু’জনে। দলের এই ‘শুভক্ষণে’ উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার এবং জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য প্রবীণ নেতা বিকাশ চৌধুরী। এছাড়াও ছিলেন মঙ্গলকোট থানার আইসি মধুসূদন ঘোষ-সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা। কয়েকশো দলীয় কর্মীর সামনেই অপূর্ব চৌধুরী এবং শান্ত সরকার নতুনহাটে মঙ্গলকোট ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ের তালা খুলে দেন। প্রায় দেড় বছর ধরে টানা পুলিশ পাহারায় তালাবন্ধ ছিল এই দলীয় কার্যালয়।
মঙ্গলকোট ব্লক হাসপাতালের পাশেই অবস্থিত শাসকদলের এই দলীয় কার্যালয়টি ঘিরে এযাবৎ রাজনৈতিক চাপানউতোর ছিল তুঙ্গে। জানা গিয়েছে মঙ্গলকোট গ্রামপঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান, তথা দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শান্ত সরকারের পারিবারিক জমির উপরেই এই ‘ব্লক তৃণমূল কার্যালয়’টি নির্মিত হয়। রাজ্যে পালাবদলের পরেই নির্মাণ করা হয়েছিল এই কার্যালয়।
অন্যদিকে, বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর বাড়ি মঙ্গলকোটের শীতলগ্রামে। কৈচর বাসস্ট্যান্ডে দলের ব্লক কার্যালয়ে বসে কাজ চালান বিধায়ক। অপরদিকে বিধায়ক এবং শান্ত সরকারের মধ্যে সদ্ভাব থাকার সময়ই নতুনহাটে দলের কার্যালয় তৈরি হয়। এই কার্যালয় ‘শান্ত সরকারের পার্টি অফিস’ বলেই দলের কর্মীরা চিনতেন। পরে বিধায়ক ও শান্ত সরকারের সম্পর্কে চিড় ধরে। ২০২৪ সালের মে মাসের শেষের দিকে কার্যালয়ের দখল ঘিরে বিধায়ক গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্ত সরকারের অনুগামীদের একপ্রস্থ সংঘর্ষ হয়। তারপরেই কার্যালয়ে তালা পড়ে যায়। বসে পুলিশ পাহারা।
এতদিন, বিধায়ক এবং শান্ত সরকারকে একসঙ্গে দেখা যায়নি। সোমবার দেখা যায় দু’জনে একসঙ্গে দলীয় কর্মীদের নিয়ে মিছিল করে এসে কার্যালয়ের তালা খুলছেন। সঙ্গে ছিলেন জেলা পরিষদের সভাধিপতিও। দু’জনে একসঙ্গে কার্যালয়ে বসে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করেন। শান্ত সরকার বলেন, “আমাদের দলের কার্যালয়টি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। আমি দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন করেছিলাম যাতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে কার্যালয় খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর বিধায়ক সাড়া দিয়েছেন।” বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “আমাদের নিজেদের মধ্যে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। দলের রাজ্য নেতৃত্ব আমাদের ডেকে আলোচনা করে কার্যালয় খোলার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ পালন করেই আমরা দলের স্বার্থে কার্যালয়টি খুলে দিয়েছি। আমাদের কাছে দলই বড়। দলের স্বার্থে আমাদের এক থাকা প্রয়োজন। আর আমাদের মধ্যে কোনও সমস্যা নেই।” দীর্ঘদিন পর দলীয় কার্যালয় খোলায় উপস্থিত তৃণমূল কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মিষ্টিমুখ করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.