সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ঘরে ফিরেছে দুই বাঘ। জিনাত ও জিনাত সঙ্গী। বাঘিনী জিনাত ওড়িশার সিমলিপাল থেকে ঝাড়খণ্ড হয়ে বাংলার বনমহলে। আর পালামৌর বাঘ ঝাড়খণ্ডের চান্ডিল থেকে দলমা হয়ে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি হয়ে ফের দলমা। সেখান থেকে রাঁচির সিল্লি। কিন্তু আবার যদি ফেরে? অজানা আশঙ্কার মধ্যেও অতিথি বরণে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দুই করিডরকেই সংরক্ষণ করার রূপরেখা তৈরি করেছে বাংলা-ঝাড়খণ্ড দুই রাজ্যই। এদিকে, পুরুলিয়া বনবিভাগ ঝাড়খণ্ডের রাঁচি ছুঁয়ে থাকা ঝালদা-বাঘমুণ্ডিতে নতুন করে প্রায় ২০ টি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসিয়েছে। সংরক্ষণে নজরদারির পাশাপাশি গাছপালা সেইসঙ্গে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের খাবারের ব্যবস্থা করে ওই করিডরকে সমৃদ্ধ করার নকশা সাজানো হয়ে গিয়েছে।
অরণ্য ভবন বলছে, বাংলাতেই রয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের এই দুই নতুন করিডর। এক, ঝাড়খণ্ডের দলমা বনাঞ্চল থেকে চান্ডিল হয়ে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ছুঁয়ে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি। সেখান থেকে আবার দলমা। প্রায় কমবেশি ২৫০ কিমি। দুই, পালামৌ, হাজারিবাগ, রাঁচি, পুরুলিয়ার ঝালদা, অযোধ্যা পাহাড় হয়ে কোটশিলা। তবে রাঁচি জেলার সিল্লি এলাকা যেখান থেকে বুধবার সন্ধ্যায় জিনাত সঙ্গীকে উদ্ধার করা হয় সেখানে সুবর্ণরেখা নদীর এপার-ওপার দুই রাজ্য। একপাড়ে ঝালদার তুলিন। আরেকপাড়ে রাঁচির সিল্লি। দ্বিতীয় করিডরের দূরত্ব প্রায় ৩০০ কিমি। এই বিস্তীর্ণ এলাকায় বাংলার অংশে ঔষধি গাছপালায় যেমন সমৃদ্ধ করা হবে। তেমনি এই এলাকায় ক্রমশ বাড়তে থাকা বন্য শূকর, চিতল ও কাঁকর হরিণকে বাঁচিয়ে তাদের যাতে বংশবিস্তার হয় সেই দিকে নজর রাখা।
কারণ, এই বন্য শূকর ও হরিণ যে বাঘের খাদ্য। এছাড়া এই এলাকায় জঙ্গলের ভারসাম্য বজায়ে লেপার্ড, নেকড়ে, হায়না, ভল্লুক, হানিবেজার, মরিচা বিড়ালের মত বিরল বন্যপ্রাণও রয়েছে। ফলে এই করিডর আগে থেকেই সমৃদ্ধ এমনই দাবি পুরুলিয়া বনবিভাগের। ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “পুরুলিয়ার সঙ্গে মিশে থাকা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের এই দুই নতুন করিডর এই জঙ্গলমহল জেলার গৌরব। এই বিস্তীর্ণ জঙ্গলপথে জঙ্গলের রাজার বিচরণ হওয়ায় আমরা এই দুই করিডরকে সংরক্ষণ করছি। রূপরেখা তৈরি হচ্ছে।”
অন্যদিকে, পালামৌ ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বলছে, এই জিনাত সঙ্গীর পদচারণায় তিন দশক আগের প্রায় ৭০০ কিমি ব্যাঘ্র করিডর নতুন করে খুলে গিয়েছে। এই দীর্ঘ করিডর জুড়েছে মধ্যপ্রদেশেও। বান্ধবগড় টাইগার রিজার্ভ থেকে পালামৌ হয়ে একেবারে বাংলা। প্রায় ৭০০ কিলোমিটার একটি করিডর। যা এই জিনাত সঙ্গীর হাত ধরে ২০২৪-র শেষে নতুনভাবে খুলে যায়। আসলে মধ্যপ্রদেশে ব্যাপক হারে বাঘের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে টেরিটরি ফাইট হচ্ছে। সেই কারণে তারা চলে আসছে ছত্তিশগড়ের ঝাড়খণ্ডে। সাধারণভাবে ৫ থেকে ১০ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়েই একটি বাঘের টেরিটরি থাকে। ভবঘুরে জিনাত সঙ্গীর পদচারণায় প্রায় ৭০০ কিমি ব্যাঘ্র করিডর খুলে যাওয়ায় খুশি ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞরা। পালামৌ টাইগার রিজার্ভের সহ অধিকর্তা প্রজেশকান্ত জেনা জানান, “এই দীর্ঘ করিডরের ঝাড়খণ্ডের অংশ আমরা কড়া নজরদারিতে রাখছি। ক্যামেরায় এই কাজ চলবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.