Advertisement
Advertisement
Kali Puja 2025

একই ঘরে সাত বোন, হয় না কারও বিসর্জন! নানা রঙের কালী প্রতিমা লাভপুরের এই গ্রামের বিস্ময়

দেড়শ বছর ধরে এই পুজোয় রয়েছেন মহিলা পুরোহিত।

7 kali idol will be worshipped at this temple of Bolpur
Published by: Kousik Sinha
  • Posted:October 18, 2025 4:33 pm
  • Updated:October 18, 2025 4:33 pm   

দেব গোস্বামী, বোলপুর: একটি ঘরের মধ্যে সাতটি বেদিতে অধিষ্ঠিত সাতটি কালী। কারও রং কালো তো কারও রং নীল বা সবুজাভ। প্রত্যেকে সম্পর্কে একে অপরের বোন। তাদের কাউকেই বিসর্জন করা যায় না। মন্দিরের বাইরে খোলা আকাশের নিচে দুই বোনকে রেখে দেওয়া হয়। প্রকৃতির খেয়ালে গলে যায় মাটি। আর এই সাত বোনের পুজো করেন কোনও ব্রাহ্মণ নয়, গ্রামের বাউরি সম্প্রদায়ের মহিলা। দেড়শ বছর ধরে এই পুজোয় রয়েছেন মহিলা পুরোহিত । লাভপুর থানার ছারোন্দা গ্রামে এভাবেই কালীরূপে পুজো হয়ে আসছে সাত বোন। এলাকায় যা পরিচিত সাত বোনের পুজো নামেই।

Advertisement

গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সন্তোষ বাউরি ও হৃদয় বাউরি বলেন, “একসময় এই গ্রামেই বাস করতেন লাভপুরের জমিদার পরিবারের উত্তরসুরীরা। সেই সময় এই কালীপুজোর ঘরটি ছিল নারীদের জন্য নির্দিষ্ট একটি গোপন স্থান। ঘরে কোনও প্রবেশদ্বার ছিল না। মহিলাদের নিরাপত্তার জন্যই এমন ব্যবস্থা। গ্রামের মধ্যে তখন নৌকা করে প্রবেশ করতে হত। সময়ের সঙ্গে জমিদার ও জমিদারিত্ব মুছে গেলেও, অক্ষত রয়ে গেছে এই বিশ্বাস ও পুজোর ঐতিহ্য। কথিত আছে, বহু বছর আগে এই গ্রামেই এক সাধক মা কালীর তপস্যায় রত ছিলেন। দীর্ঘ সাধনার পর একদিন চোখ খুলে তিনি দেখেন, তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক অপূর্ব কিশোরী। দেবী তাঁকে জানিয়েছিল, সাত বোনকে পুজো করলে কলেরা-মহামারি হবে না।”

সেই থেকেই শুরু হয় সাত বোনের কালীপুজো। সাধক আজ নেই, কিন্তু তাঁর দেখানো পথেই হয়ে আসছে বিশেষ পুজোর আয়োজন। তবে এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য-সাতটি প্রতিমার কোনও বিসর্জন হয় না। পুজোর পর সারা রাতব্যাপী অনুষ্ঠান শেষে, সাত বোনের মধ্যে মধের দুই বোনের প্রতিমা খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়। প্রাকৃতিক ঝড়-বৃষ্টি ও বাতাসে সেই দুই প্রতিমা আস্তে আস্তে গলে গিয়ে বিলীন হয়ে যায় মাটিতে। বাকি পাঁচটি প্রতিমা থাকে সারাবছর, আর পরের বছরের কালীপুজোর আগে আবার নতুন দুটি প্রতিমা গড়া হয়। প্রতিমাগুলির রঙেও রয়েছে বৈচিত্র্য-কোনও দেবীর গাত্রবর্ণ কালো। কারও গাঢ় নীল কিংবা সবুজাভ। সাত বোনের এই রূপের পার্থক্যকেও দেবীর বিভিন্ন শক্তির প্রতীক বলেই বিশ্বাস করা হয়।

গ্রামবাসী রতন বাউরি ও তোতন বাউরি বলেন, “পুরুষরা সাধারণত এই পুজোয় অংশ নেন না। ঘর সাজানো থেকে মন্ত্রপাঠ মেয়েরাই সমস্ত আয়োজন করেন।” প্রতি বছরই কালীপুজোর সময় দ্বারোন্দাগ্রামের এই ছোট্ট গ্রামজুড়ে দেখা যায় এক অন্য রকম আধ্যাত্মিক আবহ। কোনও আলো-ঝলমলে প্রতিযোগিতা নেই, নেই আড়ম্বর বা প্রদর্শনীর ঢল। আছে কেবল ভক্তি, তপস্যা আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা বিশ্বাস। আজও ঐতিহ্যের এই সাত বোনের কালীপুজো। প্রতি বছর ভিড় বাড়ে দর্শনার্থীদের।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ