বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: দার্জিলিংয়ে ফের দেখা মিলল কালো চিতাবাঘ অর্থাৎ ম্যালানিস্টিক লেপার্ডের! সেই ভিডিও ইতিমধ্যে ভাইরাল সমাজমাধ্যমে। মানেভঞ্জন–সুখিয়াপোখরি রোডের পর এবার কার্শিয়াং বন বিভাগের ডাউহিলে কালো চিতার দেখা মিলল। সোমবার বিকেলে ওই চিতাবাঘের ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন এক ব্যক্তি। এরপরেই তা ভাইরাল। মঙ্গলবার সকাল থেকে এলাকায় বনকর্মীদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বন কর্তারা জানান, প্রাণীটি কালোচিতাই। হরিণ শিকারের জন্য সম্ভবত ঘোরাফেরা করছিল সে।
বন দপ্তরের কার্শিয়াংয়ের রেঞ্জার সংবর্ত সাধু বলেন, “ভাইরাল ভিডিও-র ছবিটি সত্যি। এখানে কয়েকটি ম্যালানিস্টিক লেপার্ড আছে। হরিণও রয়েছে। সম্ভবত সন্ধ্যার আগে শিকারের খোঁজে কালো চিতাবাঘটি ঘুরে বেড়াচ্ছিল।” এই প্রসঙ্গে তিনি আরও জানিয়েছেন, ”সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গলে হরিণের সংখ্যা বেড়েছে। সম্ভবত হরিণ শিকারের জন্য চিতাটি ঘোরাঘুরি করছিল।” আরও নিশ্চিত হতে এলাকায় বন দপ্তরের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক।
এর আগে চলতি বছরের ১৭ জুন মানেভঞ্জন–সুখিয়াপোখরি রোডে ম্যালানিস্টিক লেপার্ড অর্থাৎ কালো চিতাবাঘের দেখা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল শৈল শহরের চিত্রে বাজারের কাছে রাস্তা পারাপারের সময় একটি পূর্ণবয়স্ক কালো চিতাবাঘ পথচারীদের নজরে আসে। এরপর ওই বছরের নভেম্বর মাসে আরও একটি কালোচিতাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়। সেটি দেখা যায় মিরিকে। যদিও এর আগে ২০২০ সালে মিরিকের ওকাইতি চা বাগানের নয় নম্বর ডিভিশনের কাছে রাস্তা পারাপারের সময় একটি কালো চিতাবাঘকে দেখতে পান স্থানীয় মানুষজন।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে সেই বছরই মানেভঞ্জন সংলগ্ন এলাকা থেকে একটি কালো চিতাবাঘের দেহ উদ্ধার হয়। এমনকী দার্জিলিংয়ের ধোত্রে-শিলিগুড়ি রোডেও মৃত অবস্থায় একটি কালো চিতাবাঘ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও কার্শিয়াং বন বিভাগের চিমনি থেকে বাগোরা যাওয়ার রাস্তায় আরও কালো চিতাবাঘ দেখেন এক গাড়িচালক। সঙ্গে সঙ্গে তা মোবাইল ফোনে ক্যামেরাবন্দি করে ফেলেন ওই গাড়ি চালক। তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। কার্শিয়াং থেকে চার কিলোমিটার দূরে চিমনি এলাকাতেও রাস্তা পারাপারের সময় কালোচিতার দেখা মেলে। দার্জিলিং, মিরিক, মানেভঞ্জনেও কালোচিতার গতিবিধি ধরা পড়েছে। এরমধ্যেই সোমবার কার্শিয়াং শহর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে পূর্ণ বয়স্ক ওই কালোচিতাটি ক্যামেরাবন্দি হল।
বন দপ্তরের আধিকারিকরা আরও জানিয়েছেন, এই প্রাণীটি ঘন জঙ্গলে থাকে না। সাধারণত লোকালয়ের কাছাকাছি এলাকায় দেখা যায়। কালো চিতাবাঘকে অনেকেই ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ ভেবে ভুল করেন। আদতে জেনেটিক কারণে চিতাবাঘের শরীরে কালো রঙের পরিমাণ বেড়ে যায়। এটি মেলানিস্টিক রঙের সাধারণ চিতাবাঘ। আধিকারিকদের কথায়, দার্জিলিংয়ে এই ধরণের চিতাবাঘের দেখা মেলা অস্বাভাবিক নয়! কারণ, এই অঞ্চল ওই প্রাণীদের আবাসস্থল। বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ে কালো চিতাবাঘের সংখ্যা বেড়েছে। ওই বুনোদের গতিবিধি জানতে বিভিন্ন জায়গায় ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। গ্রামবাসী ও হোম স্টে মালিকদেরও সতর্ক করা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.