Advertisement
Advertisement
বাবার সৎকার

করোনায় মৃত সন্দেহে সৎকারে বাধা, বাড়ির ছাদে বাবার দেহ দাহর চেষ্টা ছেলের

যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশি প্রহরায় শ্মশানেই বাবার সৎকার করেন ওই যুবক।

A youth planned to burn his father's body in his roof in Daspur
Published by: Sayani Sen
  • Posted:June 14, 2020 9:25 pm
  • Updated:June 14, 2020 9:32 pm   

শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: করোনা সন্দেহে ক্যানসার আক্রান্ত বৃদ্ধের সৎকারে বাধা। এ শ্মশান, ও শ্মশান ঘুরেও মেলেনি পোড়ানোর সুযোগ। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ির ছাদে দেহ দাহ করার বন্দোবস্ত করেছিলেন ছেলে। সময়মতো পুলিশ না পৌঁছলে হয়ত বাড়ির ছাদেই পুড়ত মৃতদেহ। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার পুলিশের হস্তক্ষেপেই ঘটল না এমন নজিরবিহীন ঘটনা ।

Advertisement

শনিবার বিকেলে দাসপুরের দামোদরপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধ রতন প্রামাণিক দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগে মারা যান। তার আগে শুক্রবার দিল্লি থেকে রতনবাবুর ছেলে অসিত প্রামাণিক সপরিবারে বাড়ি ফিরে আসেন। রতনবাবুর দুই গ্রামে দুটি বাড়ি। গোবিন্দপুরের বাড়িতে তিনি মারা যান শনিবার বিকেলে। তাই শনিবারই বাবার মৃতদেহ দাহ করবার জন্য উদ্যোগী হন অসিতবাবু ও তাঁর প্রতিবেশীরা। গোবিন্দপুরে গ্রামে রয়েছে সরকারি শ্মশানচুল্লি। ওই শ্মশানচুল্লিতে দাহ করবার জন্য বাবার মৃতদেহ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অসিতবাবু। সমস্ত প্রস্তুতি সারা। এমন সময় বাধা দিতে এগিয়ে আসেন গ্রামের কিছু মোড়ল। তাঁদের যুক্তি, যেহেতু অসিতবাবু দিল্লি থেকে ফিরে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন, তাই তাঁর বাবার শরীরে রয়েছে করোনা। সে কারণেই গোবিন্দপুরে রতনবাবুর মৃতদেহ দাহ করা যাবে না।

[আরও পড়ুন: ফের বঙ্গে পঙ্গপালের হানা! জামুড়িয়ায় নিমেষে উধাও হচ্ছে সবুজ পাতা]

বাধা দিতে এগিয়ে আসেন স্থানীয় সরবেড়িয়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি কৃষ্ণপদ সামন্তও। তাঁর স্ত্রী গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যা । কৃষ্ণবাবুর যুক্তি, তাঁর অনুমতি ছাড়া এখানে মৃতদেহ দাহ করা যাবে না। তাছাড়া ওই বৃদ্ধের করোনা ভাইরাস রয়েছে কিনা তার কোনও যাচাই হয়নি। এমনকি পুলিশেরও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কৃষ্ণবাবুর হুমকিতে পিছু হটেন অসিতবাবু ও তাঁর সঙ্গীরা । বাবার মৃতদেহ অন্য একটি শ্মশানে নিয়ে গেলেও সেখানেও বাধা পান তিনি। গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় বাবার মৃতদেহ দাহ করতে পারেননি অসিতবাবু। রবিবার সকালে অসিতবাবু সিদ্ধান্ত নেন তাঁর নিজের বাড়ির ছাদে বাবার মৃতদেহ দাহ করবেন ।

অসিতবাবু বলেন,“ তৃণমূল নেতা কৃষ্ণবাবুর হুমকিতে আমরা পিছু হঠে যাই। বাবার মৃতদেহ নিয়ে অন্য একটি শ্মশানেও যাই। সেখানেও বাধা পাই । তাই বাধ্য হয়ে আমার বাড়ির ছাদেই বাবার মৃতদেহ দাহ করতে উদ্যোগ নিই। এমন সময় পুলিশ চলে আসে। পুলিশের সহযোগিতায় গোবিন্দপুরেই বাবার মৃতদেহ দাহ করতে পেরেছি। পুলিশ পাশে না থাকলে বাবার মৃতদেহ বাড়ির ছাদেই দাহ করতে হত। এ ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। ”

তিনি আরও বলেন, “বাবা মারা গিয়েছেন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে। অথচ কৃষ্ণবাবু রটিয়ে দিলেন আমার বাবার করোনা ছিল। যার ফলেই এই ভোগান্তি। ” পুলিশের কড়া পাহারায় বাবার মৃতদেহ দাহ করতে পারেন অসিতবাবু। দাসপুর থানার ওসি সুদীপ ঘোষাল বলেন, “বাড়ির ছাদে মৃতদেহ পোড়ানোর খবর পাওয়া মাত্রই পুলিশবাহিনী পাঠানো হয়। একটি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে যেত এদিন।” যদিও এ নিয়ে কৃষ্ণপদ সামন্তের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে দাসপুর এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূল নেতা সুনীল ভৌমিক বলেন, “এ ধরনের ঘটনা আমার নজরে আসেনি। তবে মোটেই উচিত কাজ হয়নি। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। অবশ্যই খোঁজ নেব।”

[আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনার বলি ১২, একদিনে কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা দেড়শোরও বেশি]

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ