Advertisement
Advertisement

Breaking News

Memari parent's killer

কখনও মৌনব্রত, কখনও মারধর! পুলিশকে ঘোল খাওয়াচ্ছে মা-বাবার খুনে অভিযুক্ত ‘ধার্মিক’ হুয়ায়ুন

কীভাবে খুন করেছিল মা-বাবাকে, লিখে জানিয়েছে পুলিশকে।

Accused of parent's killer of Memari behaving unnatural in police custody
Published by: Paramita Paul
  • Posted:June 9, 2025 11:54 pm
  • Updated:June 9, 2025 11:54 pm  

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ৫ দিন পুলিশ হেফাজতে থেকেই নাকানিচোবানি খাওয়াতে থাকে। বাবা-মাকে খুনের অভিযোগে ধৃত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছেলে হুমায়ুন কবীর ওরফে আসিফকে নিয়ে রবিবার রাতে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করাতে যাবে পুলিশ জানতে পেরেই সে ঘোষণা করে, ‘ইসলাম মেনেই ৬২ দিনের মৌনব্রত শুরু করেছি।’ যদিও পুলিশ ওইদিন গভীর রাতেই হুমায়ুনকে নিয়ে মেমারির কাশিয়াড়া কাজিপাড়ায় তাকে নিয়ে গিয়ে খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করায়। সেখানে পুলিশের প্রশ্নে কখনও অভিনয় করে কখনও চিরকুটে ইংরেজিতে লিখে উত্তর দিয়েছে হুমায়ুন। পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষের আগেই সোমবার বর্ধমান আদালতে ধৃতকে পেশ করে মেমারি থানার পুলিশ। আদালতে জিআরও-তে পুলিশকর্মীদের গায়ে হাত তোলে। এমনকী আদালত থেকে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে নিয়ে গেলে সেখানেও কর্মীদের মারধর করে বলে জানা গিয়েছে।

গত ২৮ মে বাবা-মাকে গলার নলি কেটে খুন করে হুমায়ুন। তারপর বনগাঁ পালিয়ে গিয়ে সেখানে একটি মাদ্রাসায় হামলা চালায়। ছুরি দিয়ে আঘাত করে কয়েকজনকে জখম করে। সেখানকার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। গত ৫ জুন দমদম সংশোধনাগার থেকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয় হুমায়ুনকে। তাকে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। কিন্তু পুলিশি হেফাজত শেষ হওয়ার দুই দিন আগেই এদিন তাকে ফের আদালতে পেশ করা হয়। তাকে হেফাজতে নিয়ে ৫ দিনের তদন্তের প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ কার্যত পেয়ে গিয়েছে পুলিশ। পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্তি জেলা পুলিশ সুপার (সদর) অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ তার তদন্তের জন্য যা করানোর সবটাই করেছে। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে দেখিয়েছে হুমায়ুন। আমরা তথ্য প্রমাণ যা পেয়েছি তাতে কাস্টডি ট্রায়াল করেই ওর যাতে সাজা হয় সেই ব্যবস্থা করা হবে।”

রবিবার গভীর রাতে পুলিশ হুমায়ুনকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায় ঘটনার পুনর্নির্মাণ করাতে। বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নেমেই। “আল্লা হু আকবর’ বলে চিৎকার করে ওঠে। সে ভেবেছিল এইভাবে চিৎকার করে লোক জড়ো করবে। কিন্তু স্থানীয়রা জানালা খুলে উঁকি মারলেও কেউ বাইরে আসেননি। বাড়ির ভিতরে ঢুকে পুরো ঘটনা পুলিশকে সে অভিনয় করে দেখায়। বাবা কোথায় ঘুমোচ্ছিল, মা কোথায় ছিল সবটাই দেখিয়েছে হুমায়ুন। তদন্তকারীদের জানিয়েছে, প্রথমে তাদের বাড়িতে থাকা ‘ঘুষা’ (একধরণের ধারালো অস্ত্র) দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় বাবা মুস্তাফিজুর রহমানের গলায় আঘাত করে। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। চিৎকার করে ওঠেন। তাতে তাঁর স্ত্রী মমতাজ পারভিনের ঘুম ভেঙে গেলে একইভাবে তাঁকেও আঘাত করে হুমায়ুন। এরপর অনলাইনে কেনা ছুরি দিয়ে বাবার গলার নলি কাটে। মায়েরও নলি কাটে ওই ছুরি দিয়ে। তারপর খাট থেকে একে একে বাবা ও মায়ের দেহ টেনে বাইরে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে ফেলে গুণধর ছেলে।

হুমায়ুনের সারা শরীরে রক্ত লেগে গিয়েছিল। তখন তার মায়ের একটি নাইটি নিয়ে সেই রক্ত মোছে। বাথরুমে জলে ভিজিয়ে নাইটি দিয়ে ঘরও মোছে। তার পর সেটি বাথরুমে ফেলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় হুমায়ুন। এই পুরো ঘটনাটি আকরে ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে মৌনব্রত থাকায়। তদন্তকারীরাও ইচ্ছা বলেছেন, ইশারা বুঝতে পারছে না। তখন হুমায়ুন কাগজে লিখে জানিয়েছে পুলিশ। বাবা-মাকে কেন খুন করেছে, কীভাবে করেছে যার অনেকটা লিখিতভাবে পুলিশকে জানিয়েছে হুমায়ুন। সূত্রের খবর, সে আগেও জানিয়েছিল, আবার পুলিশি হেফাজতে লিখিতভাবেও জানিয়েছে, তার বাবা-মা ইসলামের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছিল। সেই কারণেই খুন করেছে।

তদন্তকারীদের এমনও জানিয়েছে, ওইদিন বাড়িতে আরও কেউ থাকলে তাদেরও একইভাবে খুন করত। পুনর্নির্মাণের পর বাড়ির ভিতর থেকে বাইরে বেরিয়ে যেখানে বাবা-মায়ের দেহ ফেলেছিল সেই জায়গায় দাঁড়ায় হুমায়ুন। সেখানে বেশ কিছু সময় ধরে নমাজ পড়ে হুমায়ুন। তার পর পুলিশের গাড়িতে ওঠে। তদন্তকারীদের হুমায়ুন জানিয়েছে, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সে ভয় পায় না। তাতে জীবন গেলে যাবে। কারণ এজীবন তার নয় আল্লাহর দান।’ এদিন আদালতে পেশ করা হলে বিচারক তাকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। ২৩ জুন ফের তাকে আদালতে পেশ করা হবে। এদিকে, পুলিশের তরফে প্রাথমিকভাবে তার যে চিকিৎসা করানো হয়েছে সেখানে কোনও অস্বাভাবিক আচরণের বিষয় চিকিৎসকেরা উল্লেখ করেননি বলেই জানা গিয়েছে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement