ফাইল ছবি।
অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলার দুর্গা উৎসব আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছে। আর এই বাংলাতেই রেলের ‘তুঘলকি’ আচরণে রীতিমতো বিপাকে পড়েছে খড়গপুরের রেল এলাকার ৪৫টি পুজো কমিটি। একেবারে শেষ লগ্নে পুজো প্রস্তুতি! এই অবস্থায় পুজো কমিটিগুলির কাছ থেকে রেল বাড়তি টাকা দাবি করছে বলে অভিযোগ। রেলের এহেন পদক্ষেপকে অনেকেই ইংরেজ সময়ের ‘জিজিয়া করে’র সঙ্গেও তুলনা করছেন। কিন্তু কীসের জন্য এই বাড়তি টাকা চাইছে রেল?
পুজো কমিটিগুলির দাবি, রেলশহর খড়গপুরের রেল এলাকায় গত বছর পর্যন্ত দুর্গাপুজো কমিটিগুলির কাছ থেকে শুধুমাত্র জায়গা বাবদ একটি টাকা আদায় করা হতো। কিন্তু এবারে শুধু জায়গার উপর নয়, পুজো উপলক্ষে লাগানো তোরণ থেকে শুরু করে আলোকসজ্জা করার জায়গা, মেলা ও অস্থায়ী বাইক ও সাইকেল স্ট্যান্ড তৈরি করার জায়গার উপরও নতুন করে রেল চার্জ বসাচ্ছে বলে অভিযোগ পুজো উদ্যোক্তাদের। আর তা মেনে নিলে এবার থেকে মণ্ডপের জায়গা ছাড়াও অতিরিক্ত জায়গা ব্যবহার করার জন্য অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হবে পুজোকমিটিগুলিকে। রেল এলাকার বিভিন্ন পুজো কমিটিকে এই বিষয়ে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
পুজো উদ্যোক্তাদের আরও অভিযোগ, বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধিনিষেধের আড়ালে দরকার না হলেও বেশি পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আর এই সমস্ত শর্ত মানার জন্য একপ্রকার জোর করেই মুচলেকায় সই করানোর জন্য রেল কর্তৃপক্ষ চাপ সৃষ্টি করছে বলেও অভিযোগ। রেলের খড়গপুর ডিভিশনের এই আচরণে রীতিমতো বিপাকে পড়েছে রেলশহর খড়গপুরের রেল এলাকার ৪৫টি পুজো কমিটির কর্তারা।
বেশিরভাগ পুজো কমিটি রেল কর্তৃপক্ষের এই আচরণে রীতিমতো ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না কী করবেন। কারণ এইসব শর্ত মানার ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত সম্মতি না দেওয়ায় পুজোর অনুমতি সোমবার পর্যন্ত রেল কোনও কমিটিকে দেয়নি। যদিও বেশিরভাগ কমিটি ঠিক করেছে রেল যতই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করুক পুজো হবেই।
শহরের ট্রাফিক এলাকার একটি পুজো কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ”রেল যদি চার মাস আগে এই সিদ্ধান্ত জানাত তাহলে ভালো হত। এখন ১৫ দিন আগে বলায় সমস্যা হচ্ছে। আগে শুধু জায়গার জন্য চার্জ দিতে হত। এবারেই প্রথম তোরণ থেকে শুরু করে আলোকসজ্জা করার জায়গা সহ মঞ্চ করার জায়গার জন্যও অতিরিক্ত চার্জ নেবে। আবার চার্জ কতটা নেবে সেটাও খোলসা করছে না। খালি একটি মুচলেকায় সই করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।”
এবারে ৯৯ বছরে পা দিয়েছে খড়গপুর স্টেশন লাগোয়া বোগদা এলাকায় বাবু লাইন সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি। এই কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্তা জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, “রেল যত বাধার সৃষ্টি করুক না কেন পুজো আমরা করবই। গত বছর পর্যন্ত আমাদের শুধু জায়গার জন্য চার্জ দিতে হয়েছে। এবারে বলেছে গেট বানানো থেকে শুরু করে মেলার আয়োজন করার জায়গা সহ শিবির করার জন্য অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে। এমনকী পুলিশের তৈরি করা হেল্প ডেস্কের জায়গার জন্য কমিটিকে চার্জ দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। আর এসব নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না জানানোর কারণে সোমবার পর্যন্ত অনুমতি রেলের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।”
রেলের এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের রেলওয়ে মেইন হাসপাতালের উল্টোদিকে ‘আমরা সবাই দুর্গাপূজা কমিটি’র অন্যতম সদস্য তথা ওয়ার্ড কাউন্সিলর রোহন দাস। তাঁর কথায়, “রেল খুব নোংরামি শুরু করেছে। বলছে, পুজোর দিনগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাস্তার উপর বসানো ব্যারিকেডের জন্য চার্জ দিতে হবে। অথচ এই ব্যারিকেডগুলি বসানো হয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেই। এখনও পর্যন্ত পুজোর অনুমতি রেল দেয়নি।”
শহরের অভিযাত্রী ক্লাব পরিচালিত সাউথ ডেভেলপমেন্ট দুর্গাপূজা কমিটির সম্পাদক শ্যামল মণ্ডল জানালেন তাঁরা ইতিমধ্যে পুজোর জায়গা বাবদ ৩১ হাজার টাকা ও বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য ১৫ হাজার টাকা জমা করে দিয়েছেন। তবে তিনি বললেন ” এবারে রেল বেশি টাকা নিচ্ছে। গতবার শুধু মণ্ডপ তৈরির জায়গার জন্য দিতে হয়েছিল ১৫ হাজার টাকা। আর এবারে মঞ্চ করা সহ কিছু অস্থায়ী নির্মাণের জন্য এই অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। আর গতবার বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য দিতে হয়েছিল ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা।”
যদিও এই ব্যাপারে রেলের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রেলের খড়গপুর ডিভিশনের সিনিয়র ডিসিএম তথা জনসংযোগ আধিকারিক নিশান্ত কুমার শুধু জানিয়েছেন, “যে বিভাগ এসব বিষয় দেখছে সেখানে গিয়ে অনুমতি নেওয়া সহ অন্যান্য ফর্মালিটি করতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.