Advertisement
Advertisement
Asansol

শহরের নামকরণে ‘আসান’ গাছ, ইতিহাসের খোঁজে আসানসোল বি বি কলেজ

বি বি কলেজের পড়ুয়া ও অধ্যাপকরা পাঁচ হাজার আসান গাছের চারা তৈরি করেছে।

Anansol BB College to Plantaion Asan Tree in Town
Published by: Gopi Krishna Samanta
  • Posted:July 26, 2025 1:55 pm
  • Updated:July 26, 2025 2:05 pm   

স্টাফ রিপোর্টার, আসানসোল: ‘আসান’ গাছের নাম থেকেই নামকরণ হয়েছিল আসানসোল শহরের। তবে যে গাছের নামে একটা আস্ত শহর পরিচিত, সেই শহরেই আসান গাছ আর দেখা যায় না। এবার সেই গাছকেই ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগ নিল বি বি কলেজ।

Advertisement

আসানসোলের বানোয়ারি লাল ভ্যালোটিয়া কলেজের বিভিন্ন বিষয়ে এর আগেও অভিনব উদ্যোগ নজর কেড়েছে। কখনও রেশম গুটির চাষ প্রকল্প, কখনও বা কলেজ চত্বরেই গড়ে উঠেছে ঔষধি বাগান। এবার তাঁদের চিন্তাভাবনা একেবারেই ভিন্ন। শহরকে সবুজ করতে হবে। তবে সবুজ করাই শুধু নয়, শহরের নামকরণ হয়েছে যে গাছ দিয়ে, সেই গাছকেই ফিরিয়ে আনতে হবে শহরের বুকে। প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি আসান গাছের চারা তৈরি করে চমকে দিয়েছে আসানসোলের বি বি কলেজ।

বি বি কলেজের বটানি বিভাগ ও এনএসএসের ছাত্রছাত্রীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পাঁচ হাজার আসান গাছের চারা তৈরি করা হয়েছে, যা লাগানো হবে আসানসোল শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। ‘আসান’ গাছ শক্ত বৃক্ষ। রস নির্গত হয় না। আসবাব তৈরিতে কাজে লাগে। এটি একটি শাল প্রজাতির বৃক্ষ। আসানসোলে একদা যে বৃক্ষ দেখা যেত, তা হল এই শাল প্রজাতির আসান। আসানসোল বি বি কলেজে একটি মাত্র গাছ রয়েছে। আসানসোল গার্লস কলেজে আরও একটি গাছের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তন্ন তন্ন করেও এই গাছ আর কোথাও পাওয়া যায় না এই শহরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিল্পনগরী তৈরি করতে গিয়ে প্রচুর গাছের নিধন হয়েছে। অন্যদিকে শহরজুড়ে যে জনপদ তৈরি হয়েছে, মানুষ ঘরবাড়ি তৈরি করেছে, তাতে বন জঙ্গল কেটে কংক্রিটের জঙ্গল বানিয়েছে মানুষজন। তাই এই গাছ হারিয়ে যাওয়ার পেছনে সভ্যতাই দায়ী। আবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই গাছের অঙ্কুরোদগমের হার খুবই কম।

বি বি কলেজের বটানি বিভাগের অধ্যাপক অনিমেষ মণ্ডল জানান, আসান গাছের অঙ্কুরোদগমের হার ৫০ শতাংশেরও কম। আর সেই কারণেই এই গাছ হারিয়ে গিয়েছে। কারণ বীজ থেকে এই গাছের অঙ্কুরোদগম সেইভাবে হয়নি। বাঁকুড়া থেকে যে হারে বীজ নিয়ে আসা হয়েছিল তার প্রায় ৪০ শতাংশ বীজে অঙ্কুরোদগম হয়েছে। বি বি কলেজের এনএসএস বিভাগের সুকুমার দে বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা প্রচণ্ড উৎসাহিত হয়েছে এই গাছের চারা তৈরি করার সময়। তারা বীজ ভিজিয়ে ধীরে ধীরে ধৈর্য নিয়ে অঙ্কুরোদগম করেছে। তারপর ছোট চারা আকারের এই গাছ হয়েছে। যেহেতু শহরের নাম এসেছে এই গাছ থেকে, সেই কারণেই ছাত্রছাত্রীদেরও প্রচণ্ড উৎসাহ ছিল যে, এই গাছ কেমন দেখতে হয়। তাঁরা শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় নিজের হাতে সেই চারা তৈরি করতে পেরেছে।”

বিবি কলেজের অধ্যক্ষ অমিতাভ বসু বলেন, “আসান গাছ থেকেই আসানসোল নামকরণের সৃষ্টি। অথচ সেই গাছের আর কোনও চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায় না আসানসোল শহরে। আমাদের কলেজে রয়েছে একটি গাছ। আর আমরা সেখান থেকেই ভেবেছিলাম যদি আসান গাছের চারা তৈরি করা যায়। সেই মতো আমাদের বটানি বিভাগ এবং ছাত্রছাত্রীরা প্রচণ্ড পরিশ্রমে পাঁচ হাজার আসান গাছের চারা তৈরি করেছেন। এই চারাগুলি আমরা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যারা গাছ পরিচর্যা করে, গাছ লাগায়, তাদের দেবো। এছাড়াও কোনও উৎসাহী ব্যক্তি বা সংগঠন যদি গাছ লাগাতে চান, গাছের পরিচর্যা করতে চান, তাঁদেরকেও আমরা বিনা পয়সায় বিনামূল্যে এই চারা উপহার দেব। আমরা চাইছি গোটা আসানসোল শহর জুড়ে এই আসান গাছের চারা লাগানো হোক। এই গাছ বড় হয়ে উঠুক। যাতে আগামী প্রজন্ম বুঝতে পারে, এই গাছের থেকেই নামকরণ।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ