Advertisement
Advertisement
Purulia

সিয়াচেনে অপারেশন মেঘদূত, সংসদ ভবনে জঙ্গি মোকাবিলা! রিয়াজকে ঘিরে উৎসব পুরুলিয়ায়

অবসরের পর বাড়ি ফিরে এমন সংবর্ধনা পেয়ে আপ্লুত রিয়াজ আনসারি।

Arny officer Riyaz Ansari from Purulia was overwhelmed by the reception he received upon returning home after retirement
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:April 2, 2025 11:50 pm
  • Updated:April 2, 2025 11:50 pm   

সুমিত বিশ্বাস, বলরামপুর: দিল্লির সংসদ ভবনে জঙ্গি হামলায় তাদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই। সেই সঙ্গে পৃথিবীর উচ্চতম রণক্ষেত্র সিয়াচেন গ্লেসিয়ারে অপারেশন মেঘদূতে শামিল। রাজস্থানের মতো উষ্ণ রণক্ষেত্রেও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশগ্রহণ। এছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরের একাধিক কাউন্টার ইনসার্জেন্সিতে শত্রুপক্ষকে জবাব দেওয়া। এভাবে ২৪ বছর ধরে দেশের সেবা করে অবসর নিয়ে বাড়ি ফিরলেন আর্মি জুনিয়র কমিশন অফিসার রিয়াজ আনসারি। আর তাতে রীতিমতো উৎসব পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল বলরামপুরে।

Advertisement

বুধবার। সকাল ৯টা। পুরী-নিউ দিল্লি পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস থেকে তিনি বলরামপুর স্টেশনে নামতেই এলাকার মানুষজন তাঁর গলায় মালা পরিয়ে বরণ করে নেন। বলরামপুরের একটি ক্লাবের তরফ থেকে দেশের জাতীয় পতাকা দিয়ে সুসজ্জিত গাড়িতে সমগ্র বলরামপুর বাজার পরিক্রমা করানো হয়। ততক্ষণে ভিড় উপচে পড়ে ওই গাড়ির চারপাশে। তাঁর সাথে করমর্দন, সেলফি তুলতে হুড়োহুড়ি অবস্থা হয়। যেন সেলিব্রেটি! অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মী তথা বলরামপুর মসজিদ পাড়ার বাসিন্দা রিয়াজ আনসারি বলেন, “এভাবে যে সংবর্ধনা পাব তা ভাবতেও পারিনি। ভীষণ ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে জীবনে সত্যিই কিছু কাজ করে বাড়িতে এসেছি।”

উৎসবের দিনগুলিতে সাধারণ মানুষজন যখন আনন্দে মেতে ওঠেন তখন এই সেনা জওয়ানরা দেশের সীমানায় থেকে শত্রুপক্ষের সঙ্গে লড়াই করেন। ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। আর ওই বছরের শেষ দিকে দিল্লির সংসদ ভবনে জঙ্গি হামলায় বুক চিতিয়ে লড়াই করেন। ২০০২ থেকে ২০০৩- প্রায় এক বছর প্যারেন্ট রেজিমেন্ট ইন্ডিয়ান আর্মি আর্টিলারি সেন্টার নাসিকের ময়দানি তোপখানায় কর্মরত ছিলেন।
তারপর জম্মু ও কাশ্মীরের গুরুত্বপূর্ণ লাইন অফ কন্ট্রোলের মতো এলাকায় নজরদারি চালাতে হয়েছে। ভারতীয় সেনার অন্যতম কমান্ডো বাহিনী, রাষ্ট্রীয় রাইফেলেও যোগদান করেন তিনি। একবার নয়, তাঁর কর্মজীবনে দু-দুবার কমান্ডো বাহিনীতে যোগদান করে দেশের সেবায় নিয়োজিত হন। কমান্ডো বাহিনীতে থাকাকালীনও জম্মু-কাশ্মীরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাউন্টার ইনসারজেন্সি অপারেশনে অংশ নেন। পৃথিবীর উচ্চতম রণক্ষেত্র সিয়াচেন গ্লেসিয়ারে অপারেশন মেঘদূত থেকে রাজস্থানের মতো উষ্ণ রণক্ষেত্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশগ্রহণের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে তাঁকে একাধিক মেডেল দিয়ে সম্মানিত করা হয়। তিনি তোপখানা নাসিক রোড ক্যাম্প ইন্সট্রাক্টর পদ থেকে অবসর নেন।

এবার বাড়ি এসে খুবই খুশি রিাজ। যে ক্লাব তাঁকে এভাবে সংবর্ধনা জানাল সেই ক্লাবের তিনি মেন্টর। তাঁর হাতে শারীরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে বলরামপুরের অনেকেই বর্তমানে চাকরি করছেন। তাঁর কথায়, “আমার স্বপ্ন আগামী দিনে সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে আগ্রহী তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। আগামিদিনে যাঁরা দেশসেবার কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে চান, তাঁদের পাশে আমি সব সময় থাকব।”

তাঁর প্রত্যাবর্তনে রীতিমতো আবেগে ভাসছেন এলাকার মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় কুমার সাউ বলেন, ”আগামী দিনে তিনি নবপ্রজন্মের কাছে আদর্শ হয়ে উঠবেন।” পড়শি গুলাবসা খাতুন থেকে প্রাক্তন সেনানির ভাইঝি রেশমি খাতুন বলছেন, “দেশের সেবা করে সুস্থ ভাবে তিনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। তাঁকে ঘিরেই আমাদের গর্ব।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ