সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বছর চারেক আগে শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরেও পরীক্ষা হয়নি যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশে। আবেদনকারীরা জানাচ্ছেন, প্রশ্ন ফাঁসের কারণে একাধিকবার পরীক্ষার দিনবদল হয়েছে, কিন্তু আজও কোনও পরীক্ষা হয়নি। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তাই সুদূর উত্তরপ্রদেশ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিতে রবিবার বাংলায় হাজির পরীক্ষার্থীরা। এদের মধ্যে একটা বড় অংশের পরীক্ষার্থীদের আসন পড়েছিল ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়ায়। শুধু হিন্দি ভাষা নয়, হিন্দি মাধ্যম স্কুলগুলিতে ভূগোল, ইতিহাস বিষয়ে শিক্ষকতার চাকরি পেতে ওই রাজ্যের পরীক্ষার্থীরা স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসেন। শুক্র, শনিবার থেকেই তাঁরা পুরুলিয়া শহরে চলে এসেছিলেন। ছিলেন বিভিন্ন অতিথি আবাসে। পরীক্ষা শেষ হলেও বাংলার মানুষজন তথা জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের আতিথেয়তায় রবিবারও তাঁরা থেকেই গিয়েছেন। অযোধ্যা পাহাড় বেড়াতে যাবেন বলেও বিভিন্ন ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলের গাড়ির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। কড়া নজরদারির মধ্যে সুষ্ঠুভাবে এসএসসি পরীক্ষা হয়েছে পুরুলিয়ায়। প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এই পরীক্ষা পর্ব চলে।
জঙ্গলমহলের এই জেলায় ১২৩১৬ জন পরীক্ষার্থী ২৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেন। এই বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীর তালিকায় জেলার পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও বিহার ও ঝাড়খণ্ডের পরীক্ষার্থীরাও ছিলেন। প্রথম দফার পরীক্ষা অর্থাৎ নবম-দশমের জন্য শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় কেন্দ্রে প্রবেশের আগে সমস্ত নথি যাচাই করার পাশাপাশি রীতিমত মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি চলে। এছাড়া সিসি ক্যামেরায় তো নজরদারি ছিলই।
উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর থেকে আসা প্রবীর কুমার বলেন, “আমাদের রাজ্যে চাকরির সেভাবে সুযোগ নেই। তাই এখানে শিক্ষক পরীক্ষা দিতে এসেছি। ২০২১ সালে বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরেও ‘পেপার লিক’-এর কারণে সেই পরীক্ষা আজও হয়নি। এই আবেদনপত্র পূরণের সময় জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোন এলাকায় পরীক্ষায় বসলে আমাদের সুবিধা হবে। সেই কারণেই আমরা পুরুলিয়া বেছে নিয়েছি। উত্তরপ্রদেশ থেকে ঝাড়খণ্ড হয়ে পুরুলিয়ার দূরত্ব খুব বেশি নয়।” আজমগড়ের আরেক পরীক্ষার্থী আলোক তিওয়ারি বলেন, “২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ঘিরে যে বেনিয়ম হয়েছিল, তা নিশ্চয়ই এবার হবে না। সেই আশা-ভরসাতেই এই পরীক্ষায় সুযোগ পেতে এখানে এসে পরীক্ষা দিলাম।”
উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ থেকে বেশ কিছু পরীক্ষার্থী রবিবার এসএসসি পরীক্ষা দেন। তাঁর মধ্যে প্রয়াগরাজ জেলার প্রতাপগড় থেকে পুরুলিয়ার জয়পুরে পরীক্ষায় বসেছিলেন শচীন তিওয়ারি। আরবিবি হাইস্কুলে তাঁর পরীক্ষার আসন পড়ে। ভূগোল পরীক্ষা দিয়ে শচীন জানান, “বিজ্ঞপ্তি দেখেই আবেদনপত্র জমা করি। আমাদের রাজ্য থেকে বেশ কিছুটা দূর। কিন্তু দেশের বাইরে তো নয়। চাকরি পেলে খুবই ভালো লাগবে। এখানে থেকেই কাজ করব।” ওই কেন্দ্রেই ভূগোল পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের অজয় রানা। তাঁর অভিযোগ, “আবেদন করার সময় পরীক্ষার মাধ্যম হিসেবে হিন্দি চিহ্নিত করেছিলাম। অথচ প্রশ্নপত্র আসে বাংলা ও ইংরেজিতে। কী যে সমস্যার মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছি, বলে বোঝাতে পারব না।” ঝালদায় পরীক্ষা শেষে ঝাড়খণ্ডের অমৃতা সিং ও অশোক কুমার জানান, “প্রশ্নপত্রে মান ঠিকঠাক ছিল, পরীক্ষা ভালোই হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.