শংকর কুমার রায়, রায়গঞ্জ: আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা বধূকে খুন করে রেখে বাইরের থেকে ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে চম্পট দিল স্বামী। রবিবার রাতে উত্তর দিনাজপুরের বাহিন পঞ্চায়েতের ঝিটকিয়ার বিপ্রভাঙ্গির ঘটনা। সোমবার সকালে এক আত্মীয় ওই বধূর খোঁজে বাড়ি পৌঁছলে খুনের ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ্যে আসে। এরপর প্রতিবেশীদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতেই দেখা যায়, দু’হাত-পা দড়িতে বাঁধা, নলি কাটা অবস্থায় ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে তরুণীর নিথর দেহ। খবর পেয়ে দেহ উদ্ধার করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
রায়গঞ্জ পুলিশ সুপার সানা আখতার বলেন, “পরিবারের তরফে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চলছে। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।” ২১ বছরের সার্জেনা খাতুনকে খুন করে ঘরে তালাবন্দি করে রেখে উধাও স্বামী সরফরাজ আলি। এমনকি ঘটনার পরই স্থানীয় জগদীশপুর পঞ্চায়েতের সারিয়াবাদ এলাকার বাসিন্দা অভিযুক্তের মামা আক্তার আলিও গা ঢাকা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, অভিযুক্ত স্বামী বাংলাদেশি।
সার্জেনা খাতুনের মাসতুতো দাদা ঝালুয়া শেখের দাবি, “এক বছর আগে সরফরাজের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছিল। তারপর থেকেই অশান্তি। পরে জানা যায়, ওর বাড়ি বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর থানা এলাকায়। ওপারে মা-বাবার সঙ্গে ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ করত। কিন্তু সে কথা আমাদের কাছে চেপে গিয়েছিল।” এদিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে তরুণীর মাসতুতো দিদি হাসা খাতুনের দাবি, “বাংলাদেশে একজনকে খুন করে স্থানীয় গ্রামে পালিয়ে মামার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল সরফরাজ। তারপর সেই মামার সূত্রেই সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়।”
জানা যায়, বধূর বাবা কয়েক বছর আগেই প্রয়াত হন। তারপর থেকে মা মোসেনা খাতুন ছোট মেয়েকে নিয়ে দিল্লিতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছেন। এদিন সকালে দিল্লি থেকে বড় মেয়েকে ফোন করেও কোনও সাড়া না মেলায় দেওরের বাড়িতে ফোন করে মেয়ের খোঁজ নেওয়ার অনুরোধ করেন মোসেনা। এরপর সার্জেনার বাড়িতে পৌঁছতেই ঘটনাটি সামনে আসে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ মেডিক্যাল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মিঠুন দেবশর্মা বলেন, “বাংলাদেশি যুবক কীভাবে এপাড়ে ঢুকে দেড় বছর আগে গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ে করল। ওর আধার কার্ড রয়েছে। তবে ভোটার কার্ড নেই। মনে হচ্ছে ওই বাংলাদেশি জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।” বাহিন পঞ্চায়েতের প্রধান আনেসুল আলি বলেন, “বাংলাদেশি হয়ে কীভাবে এপারে ঢুকে এতদিন ধরে রয়েছে। বাংলাদেশিদের এপারে আশ্রয়ে দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করলেই তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.