প্রতীকী ছবি
ধীমান রায়, কাটোয়া: ভুয়ো নথি দেখিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করে প্রায় ১০ বছর আগে ভারত থেকে কুয়েতে পাড়ি দিয়েছিলেন এক বাংলাদেশি যুবক। জ্যাঠাকে পরিচয় দিয়েছিলেন বাবা হিসাবে। কিন্তু কুয়েতে বসেই পাসপোর্ট পুনর্নবীকরণের আবেদন করার পর ধরা পড়ল জালিয়াতি। কাটোয়া থানার একাইহাট এলাকায় একটি পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর এই জালিয়াতি ধরে ফেলে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।
অভিযুক্ত সায়ন বাগচি এখন কুয়েতে রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে চলেছে পুলিশ। বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক এখন কুয়েতে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করছেন। বহুকাল আগেই তিনি কাটোয়ার একাইহাটের বাসিন্দা হিসাবে পরিচয় দিয়ে কুয়েত চলে যান। নিয়ম অনুযায়ী পাসপোর্টের মেয়াদ থাকে ১০ বছর। ওই মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার মুখে। তাই সায়ন কুয়েতে থেকেই ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে তাঁর পাসপোর্ট পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদন করেন। সেটি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল পাসপোর্ট বিভাগে। পাসপোর্ট বিভাগ থেকে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের কাছে ওই আবেদন পাঠানো হয় ভেরিফিকেশনের জন্য।
এরপর যথারীতি ডিআইবি বিভাগ থেকে ভেরিফিকেশন করা হয়। ভেরিফিকেশনের পর ইতিমধ্যে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগে। যে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সায়ন আদতে একজন বাংলাদেশি। কাটোয়ার একাইহাটের বাসিন্দা প্রমথ বাগচিকে তাঁর বাবা বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রমথ বাগচি আসলে তাঁর সম্পর্কে জ্যাঠা। একাইহাটে তাঁর বাবা, মা কেউ থাকেন না। জানা গিয়েছে, কাটোয়া-১ ব্লকের খাজুরডিহি পঞ্চায়েতের একাইহাট এলাকার বাসিন্দা প্রমথ বাগচি বহুকাল আগেই বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। এই দেশের নাগরিকত্বও পেয়ে গিয়েছেন। প্রমথের স্ত্রী প্রান্তি বাগচি। তাঁদের এক ছেলে ও তিন মেয়ে। প্রমথ জানিয়েছেন, তাঁরা চার ভাই। দুই ভাই এখনও বাংলাদেশেই থাকেন। ওই দেশেরই নাগরিক। ভাই প্রশান্ত বাগচির ছেলে সায়ন। প্রথমে জানান, ১০ বছর আগে তাঁদের বাড়িতে বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে আসে ভাইপো সায়ন। কিছুদিন থাকার পর চলেও যায়। তারপর থেকে আর সায়নের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে দাবি ওই বৃদ্ধের।
একাইহাটে আসার পর সায়ন ভারত থেকে পাসপোর্ট তৈরি করেন। তাঁর আবেদনে প্রমথবাবুকে নিজের বাবা ও জেঠিমা প্রান্তিদেবীকে নিজের মা সাজিয়ে নথি তৈরি করেন। ২০১৬ সালে পাসপোর্ট তৈরি করে কুয়েত চলে যান। প্রমথের দাবি, “আমরা এসবের কিছুই জানি না। এখন পুলিশ আসার পর জানতে পারলাম। আমাদের সঙ্গে ওর যোগাযোগও নেই।” কিন্তু ১০ বছর আগে কীভাবে অনায়াসে ভয়া নথি দেখিয়ে নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে চলে যেতে পারে সায়ন? তখন কি পুলিশ ভেরিফিকেশন করেনি? নাকি পুলিশও ওই চক্রে জড়িত ছিল, প্রশ্ন উঠেছে। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, “পাসপোর্ট বিভাগে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। কীভাবে এমন পাসপোর্ট তৈরি করা হল তারও তদন্ত শুরু হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.