অর্ণব দাস, বারাকপুর: তুলসী কাঠের মালা পরে স্কুলে ঢোকা যাবে না। বাদ দিতে হবে কান ও গলার অলংকার। মোবাইল নিয়েও স্কুলে নয়। ঠিকমতো স্কুল ইউনিফর্ম পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আসতে হবে ছাত্রীদের। বারাসতের নবপল্লী যোগেন্দ্রনাথ বালিকা বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকার এহেন অডিও ‘ফতোয়া’ ঘিরে তীব্র বিতর্ক। তবে প্রধান শিক্ষিকার এহেন নির্দেশকে সমর্থনই করেছে স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রী। ঠিক কী কারণে এমন কথা বলেছেন, তার যুক্তিও দিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা। তবে তাঁর এই যুক্তি যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সভাপতি থেকে সাধারণ অভিভাবকরা।
বারাসত নবপল্লী যোগেন্দ্রনাথ বালিকা বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা ইন্দ্রানী দত্ত চক্রবর্তী। শুক্রবার দেখা যায়, স্কুলগেটের বাইরে ছাত্রীদের প্রবেশের সময় রীতিমতো দাঁড়িয়ে থেকে তিনি ছাত্রীরা কেউ তুলসী কাঠের মালা পরে এসেছে কিনা, তা পরীক্ষা করেন। তার আগেই অবশ্য স্কুলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাঁর অডিও বার্তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। তুলসী মালার পরে স্কুলে যাওয়ার উপর তাঁর ‘নিষেধাজ্ঞা’ মোটেই পছন্দ হয়নি অভিভাবকদের একটা বড় অংশের। তাই নিয়ে প্রধান শিক্ষিকার বিরোধিতা করেছেন অনেকে।
সংবাদমাধ্যমেও বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। এনিয়ে জলঘোলা হতেই ‘হেড দিদিমনি’র পাশে দাঁড়িয়েছে ছাত্রীরা। তারা বলছে, ”এই বিষয়টা সমর্থন করছি আমরা। স্কুলের তো নিজস্ব পোশাক আছে। তুলসীর মালা পরে আসাটা যেমন কাম্য নয়, তেমনই হিজাব পরে আসাও নয়। কারণ, এই সবই নির্দিষ্ট ধর্মের চিহ্ন বহন করে। স্কুল তো তা প্রদর্শনের জায়গা নয়। এখানে আমাদের একটাই পরিচয়, আমরা সকলে ছাত্রী।” স্কুলের সভাপতি চম্পক দাস বিষয়টি শুনেই ফোন করে প্রধান শিক্ষিকাকে অন ক্যামেরা ধমক দিতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ”কোনও অবস্থাতেই কারোর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করতে পারে না স্কুল। তুলসীর মালা পরে কেউ এলে স্কুলের পড়াশোনার কোনও ক্ষতি হওয়ার কথা নয়।”
সভাপতির ধমক খেয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রধান শিক্ষিকার দাবি, ”যে যার মতো ব্যাখ্যা দিচ্ছে। আমি এরকম কিছু বলিনি। আমি কাউকে কোনও কিছু পরতে বারণ করতে পারি না। আমি শুধু বলেছি, যা পরা হচ্ছে তা যেন প্রকাশ্যে না আসে। অনেক ছাত্রীই তো আমাকে বলেছে যে তারা তুলসীর মালা পরে কিন্তু স্কুলে আসার সময়ে ভিতরে রেখে এসেছে, যাতে বাইরে থেকে দেখা না যায়। তাছাড়া তুলসী কাঠের মালা ছিঁড়ে গেলে সমস্যা বেশি হবে। ছোট ছোট পড়ুয়াদের হাতে-পায়ে আঘাত লাগতে পারে। আমরা ওদের প্রতি যত্নশীল, তাই এসব বারণ করা হয়েছে। যারা অন্য কথা বলছে, ভুল বলছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.