সৌরভ মাজি, বর্ধমান: জটিল অস্ত্রোপচারে তরুণীর প্রাণ বাঁচাল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তরুণীর পেটে হওয়া ‘হাইডাটিড সিস্ট’ সফলভাবে কেটে বাদ দিয়ে নজির গড়ল। এই হাসপাতালে এই ধরনের অস্ত্রোপচার এই প্রথমবার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এই অস্ত্রোপচার রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয়বার হল।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসে বর্ধমানের বছর ১৮-এর এক তরুণী চিকিৎসার জন্য আসেন। সারা শরীর রোগা হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু পেট ফুলে উঠেছিল ওই তরুণীর। এছাড়া ঠিকভাবে খেতে না পারা সহ অন্যান্য উপসর্গও ছিল। আউটডোরে চিকিৎসক দেখার পর বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করানো হয়। ইউএসজি, সিটি স্ক্যান করার পর চিকিৎসকরা জানতে পারেন ওই তরুণীর পেটে অসংখ্য ‘হাইডাটিড সিস্ট’ হয়েছে। বিভিন্ন আকারের সিস্ট রয়েছে পুরো পেটজুড়ে। অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ‘হাইডাটিড সিস্ট’ হল ছোট বেলুনের মতো একটা বস্তু যার ভিতরে থাকে তরল পদার্থ। বেলুনের মতো অংশে তরল পদার্থ যত বাড়ে ততই ফুলে যায় অংশটি। সাধারণত বিভিন্ন গৃহপালিত পশুদের এই রোগ দেখা যায়। এই রোগের জীবাণুর ডিম বা লার্ভা মানব শরীরে কাঁচা শাকসব্জির মাধ্যমে প্রবেশ করে থাকে।
গত ১৪ মে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। শল্য চিকিৎসকদের পাশাপাশি এই অস্ত্রোপচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হয়েছে অ্যানাথেসিস্টদেরও। শল্য চিকিৎসক নাজমস সাজাদ জমাদার, কুশল চট্টোপাধ্যায়দের সঙ্গে ছিলেন অ্যানাসথেসিয়া বিভাগের তিনজন চিকিৎসক সুমন্ত ঘোষমৌলি, বিকাশ বিষয়ী ও সৌমেন মণ্ডল। ৪ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে সিস্ট বের করা হয়। হাসপাতাল সুপার তাপস ঘোষ জানান, “এই হাইডাটিড সিস্ট মানুষের গোটা পেটের ভিতরে ছড়িয়ে গিয়েছে। যা গুণে শেষ করা যাবে না। এমন রোগী বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে এর আগে কখনও আসেনি। রাজ্যেও এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এত দীর্ঘ ও অত্যন্ত ঝুঁকি সম্পন্ন এই অস্ত্রোপচার। সামান্য একটু ভুলেই রোগী অপারেশন টেবিলেই মারা যেতে পারে। আমাদের দক্ষ টিম অত্যন্ত সফলভাবে এই কাজ়টা করেছেন। ওই তরুণী এখন সুস্থ, বিপদমুক্ত।” তাঁকে দু-তিন দিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
শল্য চিকিৎসক নাজমস সাজাদ জামাদার জানিয়েছেন, হাইডাটিড সিস্ট কমন একটা অসুখ। তবে এটা সাধারণত লিভার, ফুসফুস এই সমস্ত এলাকায় হয়। তবে শরীরের অন্য কোন অংশেও এটা হতে পারে। আর সেটাকেই তখন বিরল হিসেবে দেখা। রোগীর পেটের গোটা অংশে এই হাইডাটিড সিস্ট ছড়িয়ে পড়েছিল। এটা সাধারণত হয় না। চারঘন্টার অপারেশনের সময়ে অ্যানাসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসকদের সহযোগিতায় অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। আর এক শল্য চিকিৎসক কুশল চট্টোপাধ্যায় জানান, কাঁচা সবজি যেমন বীট, গাজর, শশা, পিঁয়াজ, লেটুস পাতা ইত্যাদি খাবার থেকেই হাইডাটিড সিস্ট এর জীবণু সাধারণত মানব শরীরে প্রবেশ করে। কাঁচা সবজি খাবার আগে খুব ভালো করে অবশ্যই ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। না ধুয়ে বা অল্প ধুয়ে বা মুছে নিয়ে, হাত দিয়ে পরিস্কার করে কোনও কাঁচা সবজি খাবেন না। সাধারণত কুকুর, ছাগল বা ভেড়া থেকে এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “হাইডাটিড সিস্ট রোগটি আমরা একটু সচেতন থাকলেই এড়াতে পারি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.