বেআইনি বালির কারবারে ধৃতদেরকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হচ্ছে। ছবি: দীপক রাম।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বেআইনি বালির কারবারে কেন বালি মাফিয়াদেরকে আড়াল করতে চাইছেন বিজেপি বিধায়ক? পুরুলিয়া জেলা পুলিশের তদন্তে এই বিষয়টি উঠে আসতেই বেআইনি বালির কারবারে দু’টি মামলায় ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। এই ১৯ জনের মধ্যে পুরুলিয়া সদর থানার মামলায় ১৬ ও মফস্বল থানার মামলায় বৃহস্পতিবার রাতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে তিনজনকে চারদিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানার চেষ্টা করবে এই বেআইনি বালির কারবারে সরাসরি বিজেপি বিধায়ক যুক্ত কিনা।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বেআইনি বালি সংক্রান্ত দু’টি মামলায় মোট ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।” এই বিষয়ে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নথি নেওয়া হবে। এই ঘটনায় দলের মধ্যেই বিধায়কের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
বিধায়ককে ঘিরে বেআইনি বালি সংক্রান্ত বিষয়ে পুরুলিয়া সদর থানায় মোট তিনটি মামলা হয়েছে। পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ একটি স্বতপ্রণোদিত মামলায় আটক হওয়া দুই ট্রাক্টরের মালিক ও চালকের বিরুদ্ধে যেমন এফআইআর হয়েছে। তেমনই বিজেপি নেতা সুরজ শর্মা বিধায়কের বিরুদ্ধে যে মারধরের অভিযোগ করেন তার একটি মামলা হয়। তার পাল্টা ওই সুরজের বিরুদ্ধে বিধায়কও ওই বিজেপি নেতার কাছে মার খেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। সেই মামলাও রুজু হয়েছে। বেআইনি বালির কারবারে বিজেপি বিধায়কের যোগ নিয়ে পুরুলিয়া কার্যত উত্তাল। শাসকদল এই ঘটনার যেমন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে। বিজেপির অন্দরে পুরুলিয়ার দলীয় বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের কাজকর্ম ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যে বঙ্গ বিজেপি বেআইনি বালি নিয়ে শাসকদলকে আক্রমণ করে। বিজেপির সেই বিধায়ক বেআইনি বালির কারবারে জড়িয়ে যাওয়ায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছে পুরুলিয়া জেলা বিজেপি।
দলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা বলছেন, “ওই বিধায়কের জন্য দলের মুখ পুড়ছে। তাঁর বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে।” বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি শঙ্কর মাহাতো বলেন, “এই বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা দেখছি।” পুরুলিয়ার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে তার কোনও ভিত্তি নেই। আমার নাম করে দলের ওই ছেলেটা বালির কারবারিদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। আমি সেটারই প্রতিবাদ করেছি।” এই ঘটনায় শুধু বিধায়কের যোগ নয়। বেআইনি বালি নিয়ে বিজেপির মধ্যে দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসায় দল আরও অস্বস্তিতে পড়েছে। কারণ বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য কমিটির সদস্য সুরজ শর্মা বুধবার রাতে পুরুলিয়া শহরের নীলকুঠিডাঙায় দু’টি বেআইনি বালির গাড়ি আটকায়। পুলিশে খবর দিলে সেই গাড়ি থানায় নিয়ে যায়। তারপরেই পুরুলিয়ার বিজেপির বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় থানায় গিয়ে ওই সুরজ শর্মাকে দেখার পরেই অশান্তি, বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে যান। ওই যুব নেতাকে বিজেপি বিধায়ক মারধর করেন বলে অভিযোগ। সুরজ পুরুলিয়ার সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর ঘনিষ্ঠ। সবে মিলিয়ে ঘরে বাইরে চরম অস্বস্তিতে পুরুলিয়া জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।
দীর্ঘদিন ধরে এই জেলায় বেআইনি বালির সিন্ডিকেট চলছিল। গত তিনবছর ধরে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান চালায়। ফলে বেআইনি বালির কারবার বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তার মধ্যেও পুরুলিয়া শহরে এই বেআইনি কারবার সামনে চলে আসায় পুলিশ কড়া পদক্ষেপ নেয়। অন্যদিকে শুক্রবার দুপুরে ঝালদার ইচাগ এলাকাতেও তিনটি বালিবোঝাই ট্রাক্টর বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। ওই ঘটনাতেও দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.