Advertisement
Advertisement
তাপস পাল

চিরনিদ্রায় শান্ত ‘খোকন’, তাপস পালের মৃত্যুতে বিষাদময় লাউদোহা

অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত তাপস পাল এই গ্রামের স্কুলেই পড়তেন।

Burdwan village mourns the demise of actor Tapas Pal
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:February 19, 2020 6:39 pm
  • Updated:February 19, 2020 6:44 pm  

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ভূমিপুত্র তাপস পালের চিরবিদায়ে চন্দননগর যেমন বিষাদগ্রস্থ, পাশাপাশি দুর্গাপুরের লাউদোহাও কিন্তু কাঁদছে। কারণ, তাঁদের শান্ত ‘খোকন’ চিরঘুমে চলে গিয়েছে। সেই ছোট্ট ‘খোকন’-এর স্কুলে যাওয়া কিংবা গ্রামের পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে স্নান করা, গাছে উঠে খেজুর পারা, খেতের ভিতর ঢুকে আখ চুরি করার স্মৃতি আজও টাটকা দুর্গাপুরের লাউদোহার প্রবীন বাসিন্দাদের মনে। সহপাঠি কিংবা বাল্যবন্ধুদের কাছে সেই ‘খোকন’ই যে পরবর্তীতে তাপস পাল হয়ে উঠবে তা বোধহয় তখন ভাবেননি তাঁরা। 

Advertisement

১৯৬৩ সালে মাত্র ৬ বছর বয়সে লাউদোহা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হন তাপস পাল। বাবা,গজেন্দ্রনাথ পাল লাউদোহা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক ছিলেন। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের টিনের চালের আবাসনেই পরিবার নিয়ে থাকতেন গজেন্দ্রনাথ পাল। সেখান থেকেই হেঁটে তাপস পাল স্কুলে যেতেন নিয়মিত। চটের ব্যাগ নিয়ে স্কুলে আসতেন। চটের ব্যাগ পেতেই মেঝেতে বসতেন। আর সাধারন ১০টা গাঁয়ের ছেলের মতোই ছিল তাঁর জীবনযাপন। স্কুলে আসতেন হাফ প্যান্টের পকেটে কলাই নিয়ে। আর তা বিলিয়ে দিতেন সহপাঠিদের মধ্যে। স্কুল শেষ হতেই শুরু হতে গাঁয়ের ছেলে ‘খোকন’এর দুরন্তপনা। কখনও আখের খেতে ঢুকে চুরি করে আখ কাটতো তো কখনও তড়তড় করে উঠে যেত খেজুর গাছে। 

[আরও পড়ুন: তাপস পালের শেষযাত্রাতেও রাজনৈতিক তরজা, মমতাকে পালটা খোঁচা বাবুল-সায়ন্তনের ]

তাপস পালের বাল্যবন্ধু মধুসুদন ঘটক জানান, “খোকন আমাদের কাছে সেই দাদার কীর্তির কেদারের মতনই। সেই রকমের শান্তও নম্র।” বন্ধুর অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ মধুসুদনের মন্তব্য, “সিনেমা ছেড়ে ওর রাজনীতিতে আসা ঠিক হয়নি। সেটাই ওর কাল হয়ে দাঁড়াল।” চতুর্থ শ্রেনী পর্যন্ত এই স্কুলে পড়ার পর পঞ্চম শ্রেনীতে তাপস পাল ভরতি হন লাউদোহার কালীতারা বিজয় ইনস্টিটিউটে। সেখানে তাপস পাল অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ার পরই বাবার ট্রান্সফার হয়ে যান। পরিবার নিয়ে চলে যান চন্দননগরে। লাউদোহায় থাকাকালীন কালীতলায় বেশ কিছু জমি কেনেন তাপস পালের বাবা গজেন্দ্রবাবু। সেই সুবাদে এবং বাল্যকাল কাটানোর স্মৃতিতে বারবার লাউদোহায় ছুটে এসেছেন তাপস পাল, বলে জানান পারিবারিক বন্ধু শক্তিপদ ঘোষ। 

[আরও পড়ুন: শেষযাত্রায় ওড়না দিয়ে বাবার কপাল মুছিয়ে দিলেন তাপসকন্যা সোহিনী ]

বছর পাঁচেক আগেও যাত্রা করতে লাউদোহায় ঢুঁ মেরে গিয়েছিলেন তাপস পাল, এমনটাও জানা গিয়েছে। লাউদোহার বহু মানুষও বছর দুয়েক আগে পর্যন্ত চিকিৎসার জন্যে কলকাতায় গেলে তাপস পালের বাড়ি চন্দননগরেই উঠত। খোকনের বাড়িতে ছিল লাউদোহার মানুষদের অবারতি দ্বার। আজ, তাদের খোকনের চিরবিদায়ে কাঁদছে লাউদোহাও। বুধবার,অন্ত্যোষ্টির দিন লাউদোহা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে ১৯৬৩ সালের রেজিস্ট্রি খাতা বের করা হয়। সেখানে এখনও জ্বলজ্বল করছে তাপস পালের নাম। সেই খাতা নিয়েই দুঃখের মাঝেও সুখ-স্মৃতি রোমন্থনে ব্যাস্ত তাঁর একসময়ের সহপাঠি ও বাল্যবন্ধুরা। বড় অসময়ে চলে যেতে হল খোকনকে।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement