Advertisement
Advertisement
Hooghly

কথা বলতে পারেন না, বাঁশি বাজিয়ে ট্রাফিক সামলান গুড়াপের চন্দ্রনাথ, প্রশংসা খোদ পুলিশ সুপারের

মাত্র দেড় বছর বয়সে দুর্ঘটনায় বাকশক্তি হারিয়েছিলেন তিনি।

Chandranath, a resident of Gurap, Hooghly, handled traffic by playing whistle

কাজে অবিচল চন্দ্রনাথ। নিজস্ব চিত্র

Published by: Suhrid Das
  • Posted:February 2, 2025 12:48 pm
  • Updated:February 2, 2025 12:48 pm   

সুমন করাতি, হুগলি: গুড়াপের ব্যস্ত রাস্তায় তাঁকে রোজ দেখা যায়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেন। সঙ্গী কেবল একটা বাঁশি। সেই বাঁশি বাজিয়েই যানজট নিয়ন্ত্রণ করেন চন্দ্রনাথ ঘোষ। মুখে কোনও কথা নেই। কারণ, তিনি কথা বলতে পারেন না। ছোটবেলায় এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর থেকেই তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়েছিলেন। তাঁর এই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে খুশি পুলিশ কর্মীরাও। তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন। তাঁকে সাহায্যের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

হুগলি জেলার গুড়বাড়ি ২ পঞ্চায়েতের রোহিয়া গ্রামের বাসিন্দা চন্দ্রনাথ ঘোষ। মাত্র দেড় বছর বয়সে উঁচু জায়গা থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট লেগেছিল। নাক, মুখ দিয়েও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। সেসময় সুস্থ হয়ে উঠলেও আজন্ম কথা বলার শক্তি চলে যায়। সেই সময় থেকে মাঝবয়স পর্যন্ত কেবল আকারে ইঙ্গিতেই নিজের মনের ভাব প্রকাশ করেন তিনি। ইচ্ছা ছিল জীবনে পুলিশে চাকরি করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। কিন্তু ইচ্ছা মন থেকে যায়নি। সেজন্য নিজের উদ্যোগের ট্রাফিক সামলাতে নেমে পড়েন চন্দ্রনাথ।

প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে রেখে গত দু’বছর ধরে গুরাপের বেলতলা মোড় এলাকায় ট্রাফিক সামলে যাচ্ছেন চন্দ্রনাথ। প্রবল রোদ, ঝড়-জল যাই আসুক না কেন, কোনওদিন তাঁকে কর্তব্যে পিছুপা হতে দেখেননি স্থানীয়রা। বাড়ি থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে হাজির হন তিনি। চোখে কালো চশমা, গায়ে ট্রাফিক পুলিশ লেখা পোশাক। মুখে বাঁশি নিয়ে তিনি ট্রাফিক সামলান। এই কাজে খুশি স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষজন। জানা গিয়েছে, চন্দ্রনাথের কারণে ওই এলাকায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটে না।

হুগলি গ্রামীণ পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, “চন্দ্রনাথ খুব ভালো কাজ করেন, আমার কাছে এসেছিলেন। অনেকদিন ধরেই ওখানে ট্রাফিক সামলান। আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। আমাদের থেকে যতটা সাহায্য করার আমরা তাঁকে করব।” প্রতিবন্ধী স্কুলে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছিলেন চন্দ্রনাথ। তাঁর বাবা বিশ্বনাথ ঘোষ যাত্রাদলে অভিনয়ে উপার্জন করে সংসার চালাতেন। সম্বল বলতে দুই বিঘা জমি। বিভিন্ন জায়গায় ছেলেকে সুস্থ করার জন্য গিয়েছিলেন বাবা-মা। তারপরেও কাজ হয়নি।

চন্দ্রনাথ এখন বিবাহিত। স্ত্রী, দুই সন্তান, বাবা-মাকে নিয়ে তাঁর এখন পরিবার। তাঁর এক ছেলেও শারীরিকভাবে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন। আর্থিক কষ্টের মধ্যেই ওই সংসার চলছে। তাঁর বাবা-মা বলেন, “পুলিশ সুপারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তবে আমরা চাই ছেলের একটা স্থায়ী কিছু হোক।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ