Advertisement
Advertisement
Purulia

দাদাগিরি নয়, ছৌ মুখোশের তুলির টানে অনন্য সিভিক পুরুলিয়ার ললিত

হস্তশিল্পেই বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ।

Civic volunteers in Purulia are making masks
Published by: Suhrid Das
  • Posted:July 14, 2025 3:52 pm
  • Updated:July 14, 2025 3:52 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পাঁশকুড়া থেকে পুরুলিয়া। রাজ্য পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে নেতিবাচক বিশেষণে বিদ্ধ করার কম উদাহরণ নেই সাম্প্রতিক অতীতে। কোথাও দাদাগিরি, আবার কোথাও দাপট, কোথাও আবার সিভিকের চোখরাঙানি। কিন্তু পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির চড়িদা গ্রামে পুলিশ স্বেচ্ছাসেবকের এ এক ব্যতিক্রমী চরিত্র। যিনি সিভিক ভলান্টিয়ারের ডিউটি করে নিজ হাতে ছৌ মুখোশ ফুটিয়ে তোলেন। শুধু ছৌ নাচের জন্য দুর্গা, মহিষাসুর, কার্তিক, গণেশ নয়। বর্তমানে মুখোশ গ্রাম চড়িদায় বাজার কাঁপানো কথাকলি, কৃষ্ণ, খারাপ নজর এড়াতে নজরকাঠি মুখোশ গড়ে যেমন নিজে নজর কেড়েছেন পুলিশ মহল থেকে হস্তশিল্পীদের মধ্যে। তেমনই সিভিক ডিউটির ফাঁকে নিজ হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় রঙবাহারি সব মুখোশ চোখ টানছে।

Advertisement

ললিত সূত্রধর। বাঘমুন্ডি থানায় প্রায় ১২ বছর ধরে পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করছেন তিনি। ২০১৩ সালের ১০ই অক্টোবর থেকে তাঁর এই কাজ শুরু। আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে আরও কত রকমের ডিউটি। কিন্তু নিজের শিল্প প্রতিভাকে তিনি ভুলে যাননি। মর্নিং ডিউটি থাকলে বিকালের পর। আর নাইট থাকলে সারাদিন তিনি মুখোশ গড়েন। যা শুরু হয়েছিল মাত্র ১৫ বছর বয়সে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবার হাত ধরে। ঠাকুর্দাও এই মুখোশ গড়তেন। ওই সিভিকের হাতের ছোঁয়ায় শুধু গৃহস্থে সাজানো নয়। বিভিন্ন অতিথি আবাস এবং সরকারি দপ্তরেও তাঁর তৈরি মুখোশ জ্বলজ্বল করছে। সিভিক ভলান্টিয়ার চাকরি পাওয়ার আগে রাজ্য সরকারের নানান হস্তশিল্প মেলায় গিয়ে নিজের হাতে তৈরি মুখোশ বিক্রি করে এসেছেন। আর এখন মুখোশ থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ। প্রতি মাসের গড়ে ১০ হাজার টাকার বেতনের চেয়েও বেশি। তুলির টানে তৈরি মুখোশ বিদেশে এখনও পা রাখেনি বটে। কিন্তু মুখোশ ঘিরে বাণিজ্য জমজমাট। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা একটা ভালো কাজ। নিজের পেশাগত কাজের পাশাপাশি প্রতিভার বিচ্ছুরণ।”

বরাবাজার থানার সিভিকরা যেমন ছৌ নাচ করে নজর কেড়েছেন। তেমনই বাঘমুন্ডি থানার ললিত মুখোশে তুলির টান দিয়ে মন জিতেছেন বহু পুলিশ কর্তারই। আসলে স্নাতক সিভিক ভলান্টিয়ার ললিত ডিউটির পাশাপাশি তাঁর শিল্পকর্ম যেমন তুলে ধরেন। তেমনই ওই শিল্পকর্মকে নিয়ে রীতিমতো লেখাপড়া করে থাকেন। ফলে মুখোশ এবং ছৌ নাচ নিয়ে তাঁর জ্ঞানের পরিধি কম নয়। তাঁর কথায়, “নিজের পেশার কাজের পর যতটুকু সময় পাই বাপ- ঠাকুর্দার পরম্পরাকে আঁকড়ে থাকি। এই শিল্পকলার সঙ্গে কখনওই কোনও অবস্থাতেই নিজেকে আলাদা করতে পারব না। “

ঘরে লক্ষ্মী আসার পরেও, সেই লক্ষ্মীও ললিতকে মুখোশ গড়ার কাজে সব রকম সাহায্য করেন। স্ত্রী মিতালী দেবীও তাঁর স্বামী ললিতের মতোই নজরকাড়া মুখোশ তৈরি করেন। স্ত্রীর নামেই অর্থাৎ মিতালি ছৌ মুখোশ ঘর বাণিজ্য কেন্দ্র সমগ্র চড়িদায় যেন একটা আলাদা ছাপ ফেলেছে। ফলে সিভিক ডিউটি নিয়ে সমালোচনায় বিদ্ধ করা হলেও তাঁদের মধ্যে থাকা প্রতিভার বিচ্ছুরণে ওই বিতর্কের মধ্যেও আলোর শিখায় উজ্জ্বল এই কাজ। যেমন, বরাবাজারের প্রায় ১২-১৩ জন সিভিক ভলান্টিয়ার ছৌ নৃত্য করেন। সম্প্রতি মানবাজার থানার অপু কোটাল নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ার সাপের ছোবলে জখম মহিলাকে নিজের বাইকে হাসপাতালে নিয়ে এসে মৃত্যু মুখ থেকে বাঁচিয়ে আনেন। পুরস্কৃতও হন। ললিতে এই যাত্রাও সেই পথেই!

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement