Advertisement
Advertisement

Breaking News

Cultural News

‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ মগরাহাটের স্কুলে! বাংলার ঐতিহ্যরক্ষায় শুরু ব্যতিক্রমী প্রশিক্ষণ

ক্লাসেই ছাত্রীদের শেখানো হচ্ছে ডাং, দস্তানা বা বেণী পুতুল তৈরির কাজ।

Cultural News: School students get tarining to make puppet to save this old tradition of Bengal
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 30, 2025 4:48 pm
  • Updated:May 30, 2025 4:53 pm  

সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য পুতুলনাচ বা পুতুল নাটক। কিন্তু ক্রমেই কদর হারাচ্ছে সেই পুতুলনাচ। বাংলার প্রাচীন শিল্পের ছাত্রসমাজকে সমাজ সচেতনতামুখী করতে অভিনব উদ্যোগ নিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের একটি স্কুল। লক্ষ্য একটাই, আগামী দিনে এই পুতুলনাচের মাধ্যমে কিছু করে দেখানো। সেই লক্ষ্যে স্কুলেই শুরু হয়েছে পুতুলনাচ বা পুতুল নাটকের প্রশিক্ষণের ক্লাস। শুধু পুতুলনাচ শেখানোই নয়, ক্লাসে বসেই ছাত্রীদের শেখানো হচ্ছে ডাং, দস্তানা বা বেণী পুতুল তৈরির কাজ। শেখানো হচ্ছে শ্যাডো পুতুলনাচও।

মগরাহাটের কলস হাইস্কুলে সপ্তাহে একদিন, শনিবার করে চলছে পুতুলনাচ বা পুতুল নাটক প্রশিক্ষণের ক্লাস। সমগ্র শিক্ষা মিশনের অধীনে চলা রাজ্যের ‘আনন্দ পরিসর’ প্রকল্পে স্কুলে পুতুলনাচের ক্লাসে একইসঙ্গে পড়ুয়ারা পুতুল তৈরি, গান, চিত্রনাট্য তৈরি করে বাচিকশিল্পের অনুশীলন, অভিনয় শিখছে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও পুতুলনাচের উপর গবেষণা করা মগরাহাটেরই তরুণ ড. প্রদীপ সর্দারকে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণির ২০ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রী স্কুলে পুতুলনাচের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। প্রতি দুই শনিবার দশজন করে দুটি দলে ভাগ করে পুতুলনাচের ক্লাস চলে স্কুলে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে বিভিন্ন ঘরানার ‘ডাং পুতুল’ তৈরি থেকে শুরু করে পুতুল নাটকের নানা কৌশল যেমন পুতুলকে নড়াচড়া করানোর কৌশল ও শিল্পীর বাচনভঙ্গি, গান ইত্যাদি শেখানো হচ্ছে ক্লাসে। শিক্ষক ড. প্রদীপ সর্দার বলেন, ”পুতুলনাচ শিল্পকে বাঁচাতে হলে এগিয়ে আসতে হবে নতুন প্রজন্মকেই। মোবাইল ও ইন্টারনেটের যুগে সুস্থ সমাজ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে পুতুলনাচকে প্রকৃত শিল্পের মর্যাদায় পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন।” পুতুলনাচে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ফেরাতে প্রয়োজন শিল্পীর বাচিক ও আঙ্গিক অভিনয়, নৃত্য ও সঙ্গীত দক্ষতা – এই সব শেখানো হচ্ছে ক্লাসে। পুতুল নাটকের বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে সাহিত্যের নানা গল্প, রবি ঠাকুরের কবিতা, ‘ঠাকুরমার ঝুলি’র গল্প।

সম্প্রতি কন্নড় সাহিত্যের গল্পের বাংলা অনুবাদ করে কাজ শুরু করেছেন প্রদীপবাবু। তিনি জানান, আগে ডাং পুতুল তৈরি হত। তে-পলতে, যজ্ঞিডুমুর গাছের কাঠ ও কাণ্ড দিয়ে। সেই কাঠের উপর ও পুতুলের মুখে পড়ত মাটির প্রলেপ, রং। পুতুলের ভার লাঘব করতে এখন থার্মোকল, ফোম, পেপার পাল্প ও মাউন্টবোর্ড কেটে এবং ফেলে দেওয়া সাধারণ জিনিস দিয়ে স্কুল পড়ুয়ারা তৈরি করছে পুতুল। সেই পুতুলে বাঁশের লাঠি অর্থাৎ ডাং দিয়ে নাচানো হচ্ছে। পুতুলের উচ্চতা কোমর পর্যন্ত। কোনও পা থাকে না। পোশাক-সহ এক একটি পুতুল পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার হয়। পোশাক ছাড়া দুই থেকে আড়াই ফুট।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সৈকত গঙ্গোপাধ্যায় জানান, পুতুলনাচ শিক্ষায় পারদর্শীদের আগামী দিনে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীন সেন্টার ফর কালচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড ট্রেনিং অর্থাৎ সিসিআরটির স্কলারশিপের আবেদনও করা হয়। এবার স্কুলের নবম শ্রেণির দুই ছাত্রী হেনা পারভিন ও নাসরিন খাতুন গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনে পরীক্ষা দিয়ে স্কলারশিপের আবেদন করেছে। প্রদীপ ‘স্যর’এর মতোই সাদিয়া, সুহানা, রেশমি, শাবানা, হেনা, নাসরিনরাও ভবিষ্যতে পুতুলনাচ শিল্পে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করে তুলতে চায়।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement