শুভদীপ রায়নন্দী, শিলিগুড়ি: গোপনে অভিযান চালিয়ে প্রায় দশ কোটি টাকা মূল্যের দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন মূর্তি উদ্ধার করল শুল্ক বিভাগ। মূর্তিগুলি গৌতম বুদ্ধ, বিষ্ণু, কৃষ্ণ, নটরাজ-সহ আরও বেশ কয়েকজন দেবতার। বাজেয়াপ্ত হয়েছে নম্বর প্লেটহীন চার চাকার একটি গাড়ি। তবে এই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি বলে শুল্ক দপ্তর সূত্রে খবর।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে ফুলবাড়ি থেকে ফাঁসিদেওয়ার দিকে নম্বর প্লেটহীন চারচাকা গাড়ি করে যাচ্ছিল পাচারকারীরা। সেই সময় গাড়িটিকে পিছু ধাওয়া করেন শুল্ক দপ্তরের কর্মীরা। বেশ কিছুক্ষণ ধাওয়া করলে ধরা পরার ভয়ে গাড়ি একটি পরিত্যক্ত জায়গায় ফেলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এরপর তদন্তকারী অফিসাররা গাড়িটিতে তল্লাশি চালালে খড় এবং প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায় ছ’টি মূর্তি উদ্ধার করেন। শুল্ক দপ্তরের আধিকারিকরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন, ওই মূর্তিগুলি শিলিগুড়ি সংলগ্ন বাগডোগরায় হাতবদলের পরিকল্পনা ছিল। সেখান থেকে নেপাল এবং কলকাতায় পাচারের ছক কষে ছিল দুষ্কৃতীরা। মূর্তিগুলির বয়স এবং যাবতীয় তথ্য জানতে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ এবং মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞদের আবেদন করেছেন যাচাই করার জন্য। মূর্তিগুলি পরীক্ষা এবং খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদের ডেকে পাঠিয়েছেন শুল্ক দপ্তরের আধিকারিকরা।
শুল্ক দপ্তরের আধিকারিক সুমিতা পুরকায়স্থ বলেন, “প্রাচীন মূর্তি উদ্ধারে বড় সাফল্য মিলেছে। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই খোলসা করে কিছু বলা সম্ভব নয়।” উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা মিউজিয়ামের আধিকারিক সজল চক্রবর্তী বলেন, “শুল্ক বিভাগের আধিকারিকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে এখনও চূড়ান্তভাবে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, মূর্তিগুলি বহু প্রাচীন। সরকার চাইলে সেগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করে রাখা হবে।” আরও জানা গিয়েছে, প্রত্যেকটি মূর্তি কষ্টি পাথরের। ছটি মূর্তির আকার ও আকৃতিও ভিন্ন প্রকৃতির। সব ক’টির মোট ওজন প্রায় ১০০ কেজি।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, হিন্দু দেবতাদের মূর্তিগুলি মূলত ১০৯৭ খ্রিস্টাব্দে, । আবার দুটি মূর্তিতে দক্ষিণ ভারতের শিল্প-সংস্কৃতির ছোঁয়া রয়েছে। ফলে সেগুলি দক্ষিণ ভারতের কোনও ঐতিহাসিক স্থান থেকে পাচার করে নিয়ে আসা হয়েছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিলিগুড়িতে কার কাছে মূর্তিগুলি হাত বদলের পরিকল্পনা ছিল, সেই তদন্ত শুরু করেছেন শুল্ক দপ্তরের আধিকারিকরা। প্রায় দু’বছর আগে ইন্দো-নেপাল সীমান্তের অনন্তজোতে অভিযান চালিয়ে তিনটি প্রাচীন তামার মূর্তি উদ্ধার করেছিলেন এসএসবি জওয়ানরা। তারপর এত বড় সাফল্য। তবে পাচারকারীদের খোঁজে এখনও তল্লাশি চলছে। তাদের ধরতে পারলে আরও অনেক কিছু জানা যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.