রমেন দাস: দিনেদুপুরে রক্তে ভাসছে দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশন চত্বর। টিকিট কাউন্টারের পাশের চাতালে চাপ চাপ রক্ত। শুক্রবার দুপুরে স্কুলপড়ুয়া এক ছাত্রকে খুন করেছে তার সহপাঠী! অভিযোগ উঠেছে এমনই। কেন খুন, কীভাবে খুন, কে বা কারা করল, সমস্তটাই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
কিন্তু এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে অন্যত্র। সিসিটিভির নজরদারি, নিরন্তর নিত্যাযাত্রী, দর্শনার্থীদের যাতায়াতের পথেই এমন ঘটনা ঘটল কীভাবে? স্টেশন চত্বরে কড়া নিরাপত্তা থাকলেও কীভাবে সবার চোখ এড়িয়ে গেল ওই স্কুলপড়ুয়ারা? বাগবাজারের একটি স্কুলের ছাত্রের এমন মর্মান্তিক পরিণতি মেট্রো স্টেশনে হল কীভাবে? নিজেদের চেনা যাতায়াতের পথে রক্তের দাগ দেখে প্রশ্ন তুলছেন নিত্যযাত্রীরা। সংবাদমাধ্যমের সামনেই নিরাপত্তাকর্মীদের দেখে প্রশ্ন তুলছেন ওঁরা চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়েই তাঁদের দাবি, এখানেই যদি এমন হয়, তাহলে রাস্তায় কী হবে! প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তারক্ষীদের ব্যক্তিগত কাজে ‘ব্যস্ত’ থাকা নিয়েও। যদিও পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত গণ্ডগোলের আঁচ নিরাপত্তারক্ষীরা কীভাবে বুঝবেন, তা-ও মনে করাচ্ছেন অনেকেই।
রোজ দক্ষিণেশ্বর থেকে কাজের উদ্দেশ্যে মেট্রোয় যাতায়াত ওই এলাকার বাসিন্দা দিলীপ দে’র। ঘটনাস্থলে পুলিশের কর্ডন দেখেই তাঁর প্রশ্ন, ‘তখন কী করছিলেন? এইটুকু বাচ্চার এমন হয় কীভাবে?’ একদিকে ফরেনসিক দলের কাজ, অন্যদিকে প্রৌঢ়ের একের পর এক প্রশ্নে ততক্ষণে নাস্তানাবুদ নিরাপত্তারক্ষীরা!
মেট্রো যাত্রী দিলীপ দে’র দাবি, ‘ব্যাগ চেক করে মাঝে মাঝে। কিন্তু অধিকাংশ সময়েই সেইভাবে নজরদারি দেখি না। শুধুই বসে থাকে। নিজেদের কাজ, মোবাইল ফোনেই ব্যস্ত থাকেন অনেকেই। ছেলেটাকে তো সঙ্গে সঙ্গে চাকু মারেনি! তার আগে ঝামেলা হয়েছে নিশ্চিত, তখন এই নিরাপত্তারক্ষীরা কোথায় ছিলেন?’ প্রায় একই সুরে আর এক নিত্যযাত্রীর অনুরোধ, ‘আজ এসেছেন খবরের জন্য, একদিন এমনি সময়ে আসুন, বসে থাকা ছাড়া কোথায় নিরাপত্তা থাকে দেখবেন!’ নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক মহিলা যাত্রীর দাবি, ‘রোজ যাতায়াত করি, এসব দেখে আতঙ্কে ভুগছি। কী অবস্থা ভাবুন তো, কী করেন এইসব নিরাপত্তারক্ষীরা!’
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন আর এক নিত্যযাত্রী দীপক গোয়েঙ্কা। নিয়মিত দক্ষিণেশ্বর থেকে গিরীশ পার্ক মেট্রো যেতে হয় তাঁকে। তাঁর দাবি, ‘নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অনেককেই দেখেছি মোবাইলে ব্যস্ত থাকতে, নিজেদের কাজ করতে। নিরাপত্তা কোথায় দেবেন ওঁরা! এরকম যদি দিনের বেলায়, স্টেশনে হয়, তাহলে আমরা যাব কোথায়!’ প্রায় একই সুরে নিরাপত্তারক্ষীদের দেখে গর্জে উঠলেন আরও এক মেট্রোযাত্রী। শুভাশিস মুখোপাধ্যায় রাসবিহারী এলাকায় কর্মরত। তাঁর দাবি, ‘একেবারেই নিরাপদ মনে করছি না। এরকম ঘটনায় কার্যত শিউরে উঠছি। এটা হল কীভাবে? নিরাপত্তারক্ষীরা কোথায় ছিলেন তখন?’
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই পড়ুয়ার মৃত্যুতে কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ থাকলেও থাকতে পারে, তবে পুরোটাই তদন্তসাপেক্ষ। শোনা যাচ্ছে, এদিন দুপুরে শ্যামবাজার থেকে মেট্রোয় ওঠে ওই পড়ুয়া। সঙ্গে ছিল তার সহপাঠীরা। মেট্রোর মধ্যেই কোনও কারণে শুরু হয় বচসা, সেই তর্কাতর্কি পরিণতি পায় হাতাহাতিতে। এরপরেই ধারালো অস্ত্রের আঘাত করা হয় ওই পড়ুয়াকে! পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসকরা ওই ছাত্রকে মৃত ঘোষণা করেন বলে খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.