Advertisement
Advertisement
Sagar Dutta Medical College and Hospital

মেদিনীপুরের পুনরাবৃত্তি সাগর দত্ত মেডিক্যালে! ইঞ্জেকশনে মৃত প্রসূতি, অসুস্থ ১০

সন্দেহভাজন ইঞ্জেকশন বাতিল করে সুপারের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ৭ সদস্যের অভ্যন্তরীণ তদন্তকারী কমিটি।

Death of woman just after delivery sparks row Sagar Dutta Medical College and Hospital

ফাইল ছবি।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 2, 2025 10:27 pm
  • Updated:May 2, 2025 10:36 pm   

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘বিষাক্ত’ স্যালাইন কাণ্ডে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুনরাবৃত্তি এবার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মঙ্গলবার রাতে এই হাসপতালে এক প্রসূতির মৃত্যু ঘিরে ফের নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তরে। রবি ও সোমবারে সিজারের পরে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল বেশ কয়েকজন প্রসূতিকে। তাঁদের মধ্যে সোম ও মঙ্গলবার মিলে মোট ১১ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার বিকেলে আইসিইউ-তে স্থানান্তর করতে হয় নিমতার বাসিন্দা পম্পা সরকার নামে বছর পঁয়ত্রিশের প্রসূতিতে। ওই দিন রাতে মারা যান তিনি। বিপত্তির নেপথ্যে সন্দেহের তির অ্যামিকাসিন নামের একটি অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশনের দিকে। ঝুঁকি না নিয়ে তাই হাসপাতালের তরফে বাতিল করে হয়েছে অ্যামিকাসিনের পুরো ব্যাচের ওষুধই।

Advertisement

এনিয়ে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার সুজয় মিস্ত্রির নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে সাত সদস্যের একটি অভ্যন্তরীন তদন্ত কমিটিও। স্বাস্থ্যভবনের পক্ষ থেকে অবশ্য সাগর দত্তের ওই অভ্যন্তরীন তদন্ত কমিটিকে তেমন আমল দেওয়া হচ্ছে না। এই প্রসূতি মৃত্যুকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে মঙ্গলবার রাতেই সাগর দত্তে পৌঁছে যান রাজ্যের বিশেষ সচিব (স্বাস্থ্য–শিক্ষা) তথা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য–শিক্ষা অধিকর্তা অনিরুদ্ধ নিয়োগী। শুক্রবার তিনি জানান, বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের পাঁচজন প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করছে স্বাস্থ্য দপ্তর। ময়নাতদন্ত প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, যেহেতু পম্পার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি এবং তাঁর পরিবারের তরফেও ময়নাতদন্তের কোনও দাবি তোলা হয়নি, তাই আইন অনুযায়ী ময়নাতদন্ত ছাড়াই দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে পরিজনের হাতে।

একাধিক চিকিৎসক সংগঠন অবশ্য এই ঘটনা নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, কিছুদিন আগেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভেজাল রিঙ্গার ল্যাকটেট নামক স্যালাইনের জেরে যেভাবে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল ও চার জন প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, সেই ধারা এখনও বদলায়নি রাজ্যে।” তাই সাগর দত্তের মর্মান্তিক ঘটনায় কাঠগড়ায় ওঠা অ্যামিকাসিন ইঞ্জেকশন–সহ যে সব ওষুধ ওই সব প্রসূতিদের উপরে প্রয়োগ করা হয়েছিল, তার নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন সরকারি চিকিৎসকদের আর এক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের সাধারণ সম্পাদক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়।

চিকিৎসক সংগঠন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টারের রাজ্য সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্রের কথায়, ‘‘এই ঘটনার দায় সম্পূর্ণভাবেই রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে নিতে হবে। আমরা বারংবার দেখতে পাচ্ছি, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলছে। ভেজাল ওষুধের ব্যবহার এবং বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর হারও বেড়েই চলেছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, এই প্রবণতায় সরকার রাশ টানবে কবে? তাঁর দাবি, এই ঘটনায় যদি মেদিনীপুরের মতো ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে চিকিৎসায় অবহেলার নাম করে এই মৃত্যুর দায় ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর চাপিয়ে দেয় রাজ্য সরকার, তা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে তাঁদের সংগঠন। স্বাস্থ্য ভবনের এক চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘‘যেভাবে রবিবার সিজারের মাত্র দু’দিনের মধ্যে ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে প্রবল শ্বাসকষ্ট, সেপসিস এবং মাল্টিপল অর্গান ফেলিওর হয়েছে, তাতে ওষুধের বিষক্রিয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ