নন্দন দত্ত, রামপুরহাট: দানিশ ও সুইটির পরিবারের চার প্রজন্মের জন্ম বীরভূমের পাইকরেই। তবু কেন বাংলাদেশে পুশব্যাক? প্রশ্ন তুলেছেন পাইকরের বাসিন্দারা। মুরারইয়ের পাইকর গ্রামের দুটি পরিবারের মোট ছয়জনকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে। দিল্লিতে তাঁদের ধরা হয়েছিল। পাইকর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শামিমা বিবি বলেন, ‘‘দুই পরিবারই এখানে চার পুরুষ ধরে রয়েছে। চার পুরুষের বংশ তালিকায় আমার কাছে রয়েছে। তাহলে ওরা বাংলাদেশি হল কীভাবে?’’
দানিশ শেখ, তাঁর স্ত্রী সোনালি বিবি ও তাঁদের পাঁচ বছরের শিশুপুত্রকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে। দানিশের বাড়ি পাইকর গ্রামের দর্জিপাড়ায়। দিন আনি দিন খাওয়া পরিবার। দানিশের বাবা মুন্না শেখ। তিনি পেশায় চাষি। পেটের তাগিদে দানিশ বছর দশেক আগে দিল্লিতে যান। সেখানে রোহিনীর ২৬ নম্বর সেক্টরের বাঙালি বস্তিতে থাকতেন। ভাঙা জিনিসপত্র কুড়ানো ও পুরোনো জিনিসপত্র কেনাবেচা করেই চলত সংসার। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সুইটি বিবি ও তাঁর দুই সন্তান। সুইটি দিল্লিতে বছর পাঁচেক রয়েছেন। সুইটিরও বাড়ি পাইকরের হাসপাতালপাড়ায়। তাঁর বাবা সাইফুল শেখ। তিনি পেশায় চাষি। সুইটি সেখানে পরিচারিকার কাজ করেন। সুইটি বিবির স্বামী প্রায় পাঁচ বছর ধরে নিখোঁজ। সুইটিরও বাড়ি পাইকর হাসপাতালপাড়ায়। পাইকরে থাকেন সুইটির শাশুড়িও।
জানা গিয়েছে, ১৮ জুন দিল্লির রোহিনী জেলা পুলিশের কেএন কাটজু থানা থেকে তাঁদের আটক করা হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, সেদিনই ধৃতরা ফোন করে খবর দেন যে পুলিশ তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেপ্তার করেছে। সঙ্গে সঙ্গেই পরিবারের লোকজন দিল্লি রওনা হন। কিন্তু থানায় পৌঁছেও তাঁদের কোনও সুরাহা মেলেনি। পুলিশ জানায়, ধৃতদের বিএসএফের হাতে তুলে দিয়ে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে দেওয়া হয়েছে। কোন এলাকা দিয়ে তাঁদের সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়, তা জানানো হয়নি। দানিশ ও সুইটির পরিবারের দাবি, তাঁদের কাছে ভারতের বৈধ আধার, ভোটার, রেশন কার্ড রয়েছে। সব কিছু থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কোনও কিছু যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়।
দানিশের শ্যালিকা রোশনি বিবি বলেন, “আমার দিদি, জামাইবাবু, আর পাঁচ বছরের ভাইপো, কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।” সুইটি বিবির মাসি লুৎফা বিবি বলেন, “এত কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ওদের পুশব্যাক করা হয়েছে, এখন আমরা কি করব?” বাংলার শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, তাঁরা এই দুই পরিবারকে সম্পূর্ণ আইনি সহায়তা দেবেন। তিনি বলেন, “বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের এভাবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া নিছক অমানবিক নয়, এটা দেশের নাগরিকত্বের ধারণার উপরেই আঘাত। বিজেপি সরকার বুঝতেই চাইছে না যে এঁরা সবাই প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক।” আজ, মঙ্গলবার ওই দুই পরিবারের তরফ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.