রঞ্জন মহাপাত্র, দিঘা: ভয়ংকর সুন্দরের হাতছানি এড়াতে পারেন না অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী মানুষজন। আর সেই টানে অনেক সময়েই বিপদকে নিজেরাই আহ্বান করেন। প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে উত্তাল সমুদ্রের ভয়ংকর রূপ দেখতে ছুটে যাওয়াও কিন্তু বিপদের দিকে কয়েক পা এগিয়ে যাওয়ার শামিল। সমুদ্রপ্রেমীরা সেই ঝুঁকি উপেক্ষা করেন বটে, তবে তা সর্বদা উপেক্ষণীয় নয় মোটেও। এই মুহূর্তে আবহাওয়ার যা হাল, তাতে ফুঁসছে দিঘার সমুদ্র। তার সেই ফুঁসে ওঠা রূপ দেখতে পর্যটকদের ভিড়। কিন্তু এসময়ে তো সমুদ্রের কাছে যাওয়া নিরাপদ নয় মোটেও। তাই প্রশাসনও সুরক্ষার স্বার্থে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই দিঘার সমুদ্রে শুরু হয়েছে প্রবল জলোচ্ছ্বাস। বিপদের আশঙ্কা থেকে সমুদ্রস্নানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে পর্যটকদের, যাতে কেউ ভুলবশত সমুদ্রে না নামেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, শনিবার সকাল থেকে সমুদ্রের ঢেউ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি উত্তাল হয়ে উঠেছে। উপকূলে আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন এবং দিঘা উপকূল থানার পক্ষ থেকে সকাল থেকেই পর্যবেক্ষণ চালানো হচ্ছে। তৈরি রাখা হয়েছে সিভিল ডিফেন্স ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। নজরদারিতে রয়েছেন টুরিস্ট পুলিশ ও দিঘা থানার আধিকারিকরা। দিঘা মোহনা এলাকা, ওল্ড দিঘা ও নিউ দিঘার সৈকত জুড়ে ট্যুরিস্টদের সমুদ্রে নামা থেকে বিরত রাখতে একাধিক মাইকিং চলছে। হোটেল মালিকদেরও অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে তাঁরা যাতে অতিথিদের সতর্ক করেন এবং সমুদ্রস্নানে না যেতে বলেন। দিঘা উপকূল থানার এক আধিকারিকের কথায়, “সমুদ্র এখন অত্যন্ত উত্তাল। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির উপর আমরা নজর রাখছি। প্রয়োজনে আরও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এদিকে, শনিবার থেকেই দিঘায় শুরু হয়েছে পর্যটকদের ভিড়। সপ্তাহান্তের ছুটির সুযোগে নিউ দিঘা, ওল্ড দিঘা, শংকরপুর, মন্দারমণি-সহ আশেপাশের সৈকত এলাকাগুলিতে পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ করা গিয়েছে। কিন্তু সমুদ্রস্নানে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেকেই হতাশ। যদিও অধিকাংশ পর্যটকই প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। কলকাতা থেকে দিঘা বেড়াতে আসা এক পর্যটক জানান, “সমুদ্রস্নান করতে না পারলেও আমরা জানি এটা আমাদের নিরাপত্তার জন্যই। প্রশাসন ঠিক কাজ করছে।’’ হোটেল ব্যবসায়ীরাও জানাচ্ছেন, সমুদ্রস্নানে বাধা পেলে পর্যটকরা হতাশ হবেন এবং তাতে ব্যবসার কিছুটা ক্ষতি হলেও প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন। নিউ দিঘার এক হোটেল মালিকের কথায়, “প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সতর্কতা অবলম্বন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। পর্যটকদের নিরাপত্তা আমাদেরও প্রাধান্য।”
আবহাওয়া দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে। সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপের পূর্বাভাস না থাকলেও আগামী ২৪ ঘণ্টা সৈকত এলাকায় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দিঘা-সহ উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে লাল সতর্কতা বা রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। সমুদ্রে নামা তো বটেই, সৈকতের অনেকটা কাছেও পর্যটকদের যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। দিঘার মতো সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রকৃতির আচরণ মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। তাই পর্যটকদের উদ্দেশে বার্তা, নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিন। প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলুন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে সচেতন থাকুন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.