অর্ণব দাস, বারাসত: এতদিন ধরে তিলে তিলে গড়েছেন মাতৃমূর্তি। এবার বিদায় জানানোর পালা! শারদোৎসব সমাগত। দিকে দিকে কাশফুলের সমারোহের মাঝে দশভুজা আরাধনার প্রস্তুতি। শিল্পীর সৃজন এবার মণ্ডপে মণ্ডপে আবির্ভূত হওয়ার অপেক্ষা। এই বাংলা, ভারত তো বটেই, সুদূর বিদেশেও যে সপরিবারে পূজিত হন দেবী দুর্গা। আর সেখানে প্রতিমা পাঠানো হয় এই বাংলার কুমোরপাড়া থেকেই। এবছর দত্তপুকুর থেকে ইউরোপ পাড়ি দিচ্ছে ফাইবারের দুর্গামূর্তি। দীর্ঘ বিমানযাত্রায় স্পেন, পর্তুগাল-সহ চার দেশে পৌঁছবে। বিপুল আয় হবে শিল্পীর। কিন্তু সেই আনন্দকেও যেন ছাপিয়ে যাচ্ছে এতদিন ধরে গড়ে তোলা মূর্তিকে বিদায়ের বেদনা!
দত্তপুকুরের শিল্পী বিপ্লবকুমার পাল। তাঁরই হাতে তৈরি দুর্গা প্রতিমা এবার যাচ্ছে স্পেন, পর্তুগালে। প্রতি প্রতিমার ওজন মেরেকেটে পঞ্চাশ কেজি। মাটির ছাঁচে ফাইবার দিয়ে মূর্তিগুলি তৈরি করেছেন বিপ্লববাবু। তিনমাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এসব প্রতিমা। এক নয়, বিপ্লববাবুর তৈরি মোট চারটি প্রতিমা এবার পূজিত হবে ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায়। তাঁর ‘দুর্গা’ লম্বা ও চওড়ায় সাড়ে চার ফুট করে।
শিল্পী ও তাঁর সহযোগীরা জানাচ্ছেন, প্রথমে মাটি দিয়ে আর্টিস্ট মডেল তৈরি করা হয়েছে। তারপর ছাঁচে ফাইবার কাটিংয়ের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে দশভুজা। প্রায় ৩৫ জন কর্মী একসঙ্গে এই কাজ করেছেন। প্রত্যেক প্রতিমা বিক্রি হয়েছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায়। বিদেশে নিয়ে যেতে খরচ হচ্ছে আরও প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে এক-একটি মূর্তির খরচ প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। বিপ্লববাবুর কথায়, ”শাড়ি, গয়না থেকে শুরু করে অস্ত্র – সবই দত্তপুকুর থেকে বিশেষভাবে প্যাকেজিং করে পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ বাক্সে প্রতিমা উড়োজাহাজে চেপে পৌঁছে যাবে বিদেশের মাটিতে। শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ চলছে। দিনরাত এক করে শিল্পীরা প্রতিমাকে উৎসবের উপযোগী করে তুলছেন।”
তাঁর মতে, এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলার ফাইবার শিল্পকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। এমন প্রতিমা তৈরি করতে পেরে গর্বিত শিল্পীরাও। তবে দেবী বিদায় শিল্পালয় খালি হয়ে যাবে, তাই কিছুটা হলেও ভারাক্রান্ত মন সকলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.