Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2025

পুজোয় ঢাক বাজিয়ে চলত সংসার, আজ পদ্মশ্রী গোকুলচন্দ্রের বাদ্যিতে মুগ্ধ গোটা বিশ্ব!

২০১০ সাল থেকে শুরু করেছেন মহিলা ঢাকির দল।

Durga Puja 2025: How dhakis celebrate Durga Puja
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:September 24, 2025 5:59 pm
  • Updated:September 24, 2025 6:04 pm   

‘বাবা-দাদা ফিরলে নতুন জামা পরিয়ে ভাঙা মেলায় নিয়ে যাব।’ কোনও টালির চালের নিচে ঢাকির ঘরণি হয়তো এই কথাই বলেন। ঘরে প্রদীপ জ্বালিয়ে অপেক্ষা করেন কর্তার ফেরার। দশমীর পর যখন যখন বাতাসে থাকে বিষাদের সুর, সেই ভাঙা ছন্দেই শুরু হয় তাঁদের পুজো । মণ্ডপে-মণ্ডপে ঢাক বাজিয়ে যা উপার্জন হয়, তাই দিয়ে পুজোশেষে বাড়ির লোকের জন্য জামাকাপড় কেনা, ছোটদের আবদার মেটানো। কিন্তু কেউ কেউ সেই অভাব ও সংগ্রামকে পৌঁছে দেন অন্য মাত্রায়। হাতের ঢাকের বোলকে পৌঁছে দেন ভুবনগ্রামের আনাচে কানাচে। মহিলাদের নিয়ে খুলেছেন ঢাকির দল। নিজের আশ্চর্য জীবন নিয়ে কলম ধরলেন ঢাকি পদ্মশ্রী গোকুলচন্দ্র দাস।

Advertisement

আজ অবস্থা পালটেছে। মিলেছে বিদেশে ঢাক বাজানোর সুযোগ। পদ্মশ্রীর মতো সম্মানে ভূষিত হয়েছি। কত মানুষকে হাতে ধরে ঢাক বাজানো শিখিয়েছি। কিন্তু যখন শুরু করেছিলাম পরিস্থিতি এমন ছিল না। আর্থিকভাবে একেবারেই স্বচ্ছল ছিল না আমার পরিবার। মণ্ডপে, মণ্ডপে ঢাক বাজাতে যেতাম। পুজোর মুখে সবাই কেনাকাটা করত। তা দেখা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। রোজগার ছিল যৎসামান্যই। দশমী কাটিয়ে বাড়ি ফিরতাম। পুজোশেষে ঢাক বাজিয়ে যা পেতাম, তাই সম্বল ছিল। তখন থেকেই ঢাক বাজানোর প্রতিযোগিতায় যাওয়া শুরু করি। পুরস্কারও পেয়েছি একটা সময়ের পর থেকে।

Durga Puja 2025: How dhakis celebrate Durga Puja

ছোট থেকেই ঢাক বাজানোর পাশাপাশি লোকসঙ্গীত গাইতাম। স্যাক্সোফোন, ক্ল্যারিওনেটও বাজাতাম। আমার ছেলেও আমার মতোই স্যাক্সোফোন বাজাতে ভালোবাসে। যেবার নর্থ আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ হল, ভেবেছিলাম সেখানকার কোনও নামী মিউজিক শপ থেকে ছেলের মতো স্যাক্সোফোন নিয়ে আসব। সেইমতো হাজির হলাম এক মিউজিক শপে। দেখলাম, এক বিদেশিনী সেখানে দক্ষ হাতে একের পর এক বাজিয়ে চলেছে স্যাক্সোফোন, সোপ্রানো, ট্রাম্পেট। এই ঘটনা যেন কী এক নতুন আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলল মনের ভিতর। মনে হল, কোনও বিদেশিনীর পক্ষে যদি এমনটা সম্ভব হয়, তাহলে আমাদের বাঙালি নারীদের পক্ষে কেন অসম্ভব রয়ে যাবে? বিশেষত, ঢাকের মতো সাবেকি বাদ্যযন্ত্রের উপর পুরুষের যে একচ্ছত্র আধিপত্য থেকেছে বরাবর, তা বদলানোর ইচ্ছে হয়েছিল। মনে হয়েছিল, এই অসাধ্য সাধন করলে তা সত্যিই এক উল্লেখযোগ্য কাজ হবে আমার জীবনের।

Durga Puja 2025: How dhakis celebrate Durga Puja

সেই উদ্দেশ্য়েই ২০১০ সালে মহিলা ঢাকির দল খুলে বসি। মাত্র ছয়জনকে নিয়ে শুরু করি পথচলা। সে পথে যে একের পর এক কত বাধা এসেছে, গুনে শেষ করা মুশকিল। আজ আমাদের ‘মহিলা ঢাকি ডট কম’-এ প্রায় ৯০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। সত্যিই যে এত মহিলা ঢাক বাজানোর প্রতি আগ্রহী হতে পারেন, তা ভাবিনি। এ পথেই এসেছে স্বাবলম্বন। ঢাকে কাঠি পড়তেই প্রত্যেক মহিলা ঢাকি যেন দশভুজা হয়ে উঠেছেন। আজ তাঁরা নিজের উপার্জনে বাড়ি-গাড়ি কিনছেন। স্বামীর কাছে হাত পাতার বদলে নিজেরাই হাতখরচ দিচ্ছেন স্বামী-ছেলেমেয়েকে! বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে আরও অনেক জায়গাতেই মহিলা ঢাকির দল গড়ে উঠেছে। ভীষণ আনন্দ হয় এমনটা দেখলে।

Durga Puja 2025: How dhakis celebrate Durga Puja

ডিজে, ব্যান্ডপার্টি, অত্যাধুনিক সাউন্ড-বক্স প্রভৃতির জন্য কি ঢাক জৌলুস হারিয়েছে? আমি তা মনে করি না, বরং এর জন্য দায়ী উদ্যোক্তাদের অজ্ঞানতা। দুর্গাপুজোয় ফুল, ফল, নৈবেদ্য যেমন লাগে, তেমনই ঢাকও লাগে। ঢাকের বাদ্যি পুজোরই এক অঙ্গ। যাঁরা জানেন, তাঁরা প্রতিবারই ঢাকিদের নিয়ে আসেন। যদিও অনেক থিমপুজোতেই ঢাকিরা ব্রাত্য রয়ে যান। ঢাক ছাড়া যে পুজো সম্পূর্ণই হয় না, মানুষ এ-কথা জানেন না, তাই এমন অবস্থা।

আগের থেকে কম বাজালেও পুজো মণ্ডপে বাজানো বন্ধ করে দিইনি, দেবও না। কারণ এই যে পদ্মশ্রী পেলাম, তা তো আমার নিজের জন্য পাইনি। ঢাকের জন্য পেয়েছি! আমার ঢাকই আমার পরিচয়। এখন বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আছে, তাই পছন্দসই মণ্ডপেই কেবলমাত্র দলবল সমেত যাই। তবে হ্যাঁ, পুজোজুড়ে আজও ব্যস্ততাই থাকে। এখনও পরিবারের থেকে দূরেই কেটে যায় প্রত্যেকটা দুর্গাপুজো। এ বেদনা বুঝি ঘোচার নয়!

(অনুলিখন: উৎসা তরফদার)

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ