Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2025

জলই শক্তি! একা ‘দুর্গা’ লীলাবতীর লড়াই পথ দেখিয়েছে ঝাড়গ্রামের নারীদের

দিনযাপনে অপরিহার্য সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখতে শুরু হয়েছিল তাঁর লড়াই।

Durga Puja 2025: Struggle of Lilabati has shown the way for the women of Jhargram
Published by: Subhankar Patra
  • Posted:September 2, 2025 6:39 pm
  • Updated:September 2, 2025 6:39 pm   

সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: দশভুজা…। একা দুর্গার লড়াইকে ছড়িয়ে দিয়েছেন হাজারও দুর্গার মধ্যে। তিনি অন‌্যদের প্রেরণা। লড়াই করার সাহসও। সমাজের চোখরাঙানির মতো মহিষাসুরদের রক্তচক্ষুকে ভয় না পেয়ে এগিয়ে গিয়েছেন এই একা দুর্গা-ই। পথ দেখিয়েছেন আজকের অন‌্য দুর্গাদেরও।

Advertisement

জল ঘিরে তাঁর স্বপ্ন। দিনযাপনে অপরিহার্য এই সম্পদকে বাঁচিয়ে রাখতে শুরু হয়েছিল তাঁর লড়াই। সহ-যোদ্ধাদের সঙ্গে পাওয়া নিয়েও ছিল দ্বন্দ্ব। তবে একার লড়াই চলার পথে বহুর লড়াইয়ে পরিণত হয়। ভূগর্ভস্থ জল ধরে রাখতে যে লড়াই তিনি প্রায় দশ বছর ধরে করে গিয়েছেন তাতে আজ, তিনিও মাথা উঁচু করে বলতে পারেন ‘পেরেছি’।

একটা সময় এলাকায় বইত রক্তগঙ্গা। আজ সেখানে ছুটছে জলের ফোয়ারা। জলের স্থিতিশীলতার কারণে গ্রামবাসী একবারের জায়গায় তিনবার ফসল ফলিয়ে মাঠের ফসল ঘরে তুলছেন। ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির অধীন এড়াগোদা অঞ্চলের ধোবাকুঁড়িয়া গ্রামের লীলাবতী মাহাতো দশ বছরের বেশি সময় ধরে ভূগর্ভস্থ জল যাতে শেষ না হয়ে যায় এবং বর্ষার জল, জঙ্গলের জল ধরে রাখার মতো একটা কঠিন বিষয় নিয়ে কাজ করে গিয়েছেন। যদিও এই কাজটি করতে গিয়ে মহিলা হওয়ার প্রতিপদে তাঁকে সমাজের নানা বাধা, গঞ্জনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কেবল সমাজ নয়, পরিবার থেকেও নেমে এসেছিল প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু চোখের সামনে নিজের গ্রামের মানুষকে প্রতিনিয়ত জলের অভাবে রুখাশুখা জমিতে চাষের জন্য সংঘর্ষ করতে দেখেছিলেন।

সেই জায়গা থেকে তাঁর শুরু হয়েছিল জল ঘিরে স্বপ্ন। লীলাবতীর পারিবারিক অভাবের কারণে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। শ্বশুরবাড়ি থেকে লেখাপড়া চালানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও তা পুরোপুরি কার্যকর করা হয়নি বলে লীলাবতি আজও মনে করেন। তিনি জানান, কোনওমতে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েও আর এগোয়নি লেখাপড়া। আজ বছর পঁয়ত্রিশের লীলা আবারও পড়াশোনা শুরু করতে চান। নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পড়তে চান।

২০১৪ সালে একটি সংস্থার হয়ে জল নিয়ে শুরু হয় লড়াই। জলকে কীভাবে ধরে রাখতে হয় এবং ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করতে হয় তা নিয়ে গ্রামের মহিলাদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্ষার জল, জঙ্গল থেকে নেমে আসা জল ট্রেঞ্চ কেটে জমিতে নিয়ে আসা, আল তুলে সেই জল ধরে রাখার মতো বিষয়গুলি গ্রামবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে দেন। হাতেকলমে তাঁদের দেখিয়ে দেন। শুরুটা নিজের গ্রাম থেকে হলেও কাজ যত এগিয়েছে, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রচুর গ্রাম। বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির অধীন প্রায় ৮৫টি গ্রামে জল সংরক্ষণে তৈরি হয়েছে প্রচুর পুকুর, ট্রেঞ্চ। কয়েক হাজার মানুষ এর থেকে উপকার পাবেন চাষাবাসে।

সম্প্রতি কলকাতায় একটি সংস্থা দ্বারা আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁর এই কৃতিত্ব সম্মানিত হয়েছে। পেয়েছেন ট্রফি ও দু’লক্ষ টাকা। তার লেখা ও অভিজ্ঞতা প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন প্রকাশনায়। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রশংসিত হয়েছে তাঁর কাজ। লীলাবতী বলেন, “অনেক বাধা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও একটা সময় গ্রামবাসীদের বোঝাতে পেরেছি এবং তাঁদের পাশে পেয়েছি। এটাই বড় প্রাপ্তি। পরিবারকে পাশে না পেলেও গ্রামের মানুষ ছিলেন আমার সঙ্গে। প্রায় ৮৫টি গ্রামে জল সংরক্ষণে যা পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে, তাতে তিনবার চাষ হচ্ছে। আগামিদিনেও উপকার হবে চাষ বা অন্য ক্ষেত্রে।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ