Advertisement
Advertisement

Breaking News

Durga Puja 2025

তালপাতার পুঁথিতে উল্লিখিত বৈদিক আচার মেনেই হয় পুজো! অবাক করে তেহট্টের এই পুজোর ইতিহাস

এবার এই পুজো ২৭৩ বছরে পদার্পণ করেছে।

Durga Puja 2025: This Durga puja of tehatta follows this ritual since 273 years
Published by: Kousik Sinha
  • Posted:September 15, 2025 11:59 am
  • Updated:September 15, 2025 3:12 pm   

রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট:  দুর্গাপুজোকে (Durga Puja 2025) নিয়ে রয়েছে বহু রীতিনীতি। বহু রূপে মা উমা এই বাংলায় পূজিত হন। কোথাও মায়ের সঙ্গে মর্ত্যলোকে আসেন মহাদেব, আবার কোথাও সিংহ থাকে বিভিন্ন রূপে। পুজোর বিধানেও অনেক ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা। বাংলার এই গ্রামে মা দুর্গা পূজিত হন তালপাতার পুঁথিতে উল্লেখ করা বৈদিক আচার-উপচার মেনে। বংশপরম্পরায় রীতি রেওয়াজ মেনেই গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারে এই আদব কায়দাতেই পূজিত হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা। নদিয়ার তেহট্ট হাইস্কুলের নিকট অন্যতম গর্বের গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজো। এবার এই পুজো ২৭৩ বছরে পদার্পণ করেছে।

Advertisement

পরিবারের কাছে আছে বহু পুরনো একাধিক পৃষ্ঠার তালপাতার পুঁথি। সেই পুঁথি থেকেই জানা গিয়েছে, ছয় প্রজন্ম আগে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে প্রথম শুরু হয়েছিল গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের পুজো। তবে বেশ কয়েকটি কারণে এখন এই পুজো হয় তেহট্টের গঙ্গোপাধ্যায় বাড়িতে। একেবারে ব্যতিক্রমী এই পুজোর শুরুটা হয় হাওড়ার উদনারায়ণপুরে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে বহু বছর আগে শুরু হয় এই পুজো। জানা যায়, সাত প্রজন্ম আগে অবিনাশ গঙ্গোপাধ্যায় স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো শুরু করেছিলেন। আর তা শুরু হয় উদয়নারায়ণপুরেই। স্বপ্নাদেশে যেমন দেবী মূর্তি দেখেছিলেন, তেমনই প্রতিমা তৈরি করে পুজো শুরু হয়।

ওই বংশেরই সদস্য ক্ষিতিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় পূর্ববঙ্গের (অধুনা বাংলাদেশের) মেহেরপুরে বসবাস করতেন। দেশভাগের পর তাঁরা তেহট্টে চলে আসেন। পরবর্তীতে একদিন তাঁর স্ত্রী স্বপ্ন দেখেন যে দেশের বাড়ি তথা হাওড়ায় পুজো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে! স্বপ্ন দেখার পর হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর থেকে ওই বাড়ির এক আত্মীয় তালপাতার পুঁথি-সহ দুর্গামায়ের কিছু সামগ্রী তেহট্টের বাড়িতে দিয়ে যান। বর্তমান বংশধর পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁর পুত্র সুস্নাত গঙ্গোপাধ্যায় ও অন্যান্য সদস্যরা এই পুজো পরিচালনা করে আসছেন। বাড়িতে সংরক্ষিত তালপাতার পুঁথি মেনেই তা করে আসছেন তাঁরা। পুজোর ক্ষেত্রে রয়েছে একাধিক নিয়ম। বাঁশ কাটা থেকে পুজো সব ক্ষেত্রেই নিয়ম মেনে সবটা করা হয়। সদস্যরা জানিয়েছেন, আষাঢ় মাসের রথের দিন কাঠামোর বাঁশ কাটা হয়। জন্মাষ্টমীর দিন চণ্ডীপূজার মধ্য দিয়ে প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু করেন মৃৎশিল্পীরা। বোধন দিয়ে শুরু হয় দুর্গাপুজো, ষষ্ঠীর দিন হয় ‘আমন্ত্রণ অধিবাস’, সন্ধ্যায় পারিবারিক অস্ত্রশস্ত্র ও গয়না দিয়ে প্রতিবছর দেবীকে সাজানো হয়।

সপ্তমীর ভোরবেলায় নবপত্রিকা স্নান এবং সন্ধ্যায় হয় অর্ধরাত্র পুজো। তবে সপ্তমীর দিন থেকে দেবী সপ্তসতী শ্লোক পাঠ হয়। অষ্টমীর দিন সকাল বেলায় ১০৮ ঘরা জল দিয়ে মহাস্নান সম্পন্ন হয়। এই দিন সন্ধিপূজার সময় আরতির সঙ্গে সঙ্গে বন্দুকের তোপধ্বনি করা হয়। এই বিশেষ তোপধ্বনি একটি আভিজাত্যের প্রতীক, যা বনেদি বাড়ির পুজোকে আলাদা মাত্রা দেয়। নবমীর দিন দেবীকে ৫৬ ভোগ দেওয়া হয়। এলাকার সকলের পাশাপাশি সব দর্শণার্থীদের সেই ভোগ প্রসাদ দেওয়া হয়। অবশেষে সপ্তসতী যজ্ঞের মাধ্যমে পুজো সমাপ্ত হয়। বিজয়া দশমীর দিন দুপুরে প্রতিমাকে বরণ করে ‘কনকাঞ্জলি’ দেওয়ার রীতি রয়েছে পরিবারে।

বিসর্জনেও রয়েছে নিয়ম। সদস্যদের কথায়, দশমীর দিনই কঠোর নিয়ম মেনে জলঙ্গি নদীতে নৌকায় সাতবার প্রদক্ষিণের পর প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। পরিবারের বর্তমান বংশধরদের মধ্যে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ”পারিবারিক প্রথায় তালপাতার পুঁথির বৈদিক আচার-উপচার মেনে পূজার্চনা করা হয়। আগামিদিনেও যাতে তা মানা হয় সেজন্য পুঁথিকে সযত্নে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ