অর্ণব দাস, বারাসত: মাতৃভাষা বাংলা হলেই বাংলাদেশি সন্দেহ! ভিনরাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের চূড়ান্ত হেনস্তার অভিযোগ। তা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এই আবহে দুর্গাপুজো। ঢাক বাজানোর বরাত পেলেও বাইরে যেতে ভয়ে কাঁটা অশোকনগরের ঢাকিরা। উপার্জনের আশায় বাইরে গিয়ে বিপদ হবে না তো, এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁদের মনে।
অশোকনগর কয়াডাঙার নাট্যপাড়ার ঢাকি দলে সদস্য সংখ্যা কমবেশি ৭০। ওই মহিলাদের মধ্যে কেউ কেউ অশোকনগরের বাসিন্দা। কারও বা বাস মছলন্দপুর, আটঘড়া, কুমড়া-কাশিপুর এলাকায়। এঁদের সকলের বিকল্প পেশা ঢাক বাজানো। বছরের বাকি সময়টা কেউ বিড়ি বাঁধেন, কেউ সেলাইয়ের কাজ করেন, কেউবা পাট ঝারাইয়ের কাজ করেন। তাতে আয় সামান্য। সারাবছর খেয়েপরে বাঁচাই যেন দায়। একটু বেশি উপার্জন হলে সংসারের বাকি লোকগুলোর মুখে হাসি ফুটবে। পরিবারের খুদে সদস্যরা পাবে নতুন জামা, জুতো। তাই তো পুজোর সময় ঢাক নিয়ে তাঁরা বেরিয়ে পড়েন। পাড়ি জমান ভিনরাজ্যে। শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা দেখলেই জোরকদমে শুরু হয় ঢাক বাজানোর অনুশীলন। এবারও অনুশীলনে কোনও ছেদ নেই। দক্ষিণ দিল্লি, মুম্বইয়ের ভিটি, অসম থেকে ঢাক বাজানোর বায়না পেয়েছেন। আয়ও ভালোই হওয়ার কথা। বাধা শুধু ভিনরাজ্যে বাঙালি ‘হেনস্তা’র আতঙ্ক।
পরিযায়ীদের ‘দুর্দশা’র কথা যত শুনছেন তাঁরা যেন ততই আঁতকে উঠছেন। ঢাকিদের আশঙ্কা, ভিনরাজ্যে ঢাক বাজাতে গিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বললে তাঁদেরও হয়তো হেনস্তার শিকার হতে হবে। ভিনরাজ্যে যাওয়ার আগে বারবার পুজো কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন ঢাকিরা। পুজো কমিটির সদস্যরা আশ্বস্ত করছেন ঠিকই। তবে হেনস্তার আশঙ্কা কাটছে কই? এ বিষয়ে অশোকনগর কয়াডাঙার নাট্যপাড়ার ঢাকি দলের পরিচালক সজল নন্দী বলেন, “ভিনরাজ্যে যেভাবে বাঙালিদের উপর অত্যাচারের খবর শুনছি, তাতে আমরা আতঙ্কিত। আমি দুশ্চিন্তাতেই আছি। বায়না নিলেও পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।” ঢাকি গীতা গোলদার, মিতালি কবিরাজরা বলেন, “অভাবের সংসারে ঢাক বাজিয়ে উপরি উপার্জনের জন্য পুজোর দিকে তাকিয়ে থাকি। রোজগার ভালোই হয়। কিন্তু ভিনরাজ্যে যেভাবে অত্যাচারের খবর পাচ্ছি, তাতে আমাদেরও যেতে ভয় লাগছে।” অনুশীলনে ঢাকে বোল তুলছেন ঠিকই। তবে শেষমেশ ভিনরাজ্যে যাওয়া হয় কিনা, তা নিয়ে মনের ভিতর উথালপাথাল ঢাকিদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.