Advertisement
Advertisement
Damodar River

রাখে হরি মারে কে! ৩৫ কিমি দামোদরে স্রোতে ভেসে বাঁশের খুঁটি আঁকড়ে প্রাণরক্ষা বৃদ্ধার

দামোদরে স্নান করতে নেমেছিলেন ওই বৃদ্ধা।

Elderly woman saved from being swept away by 35 km of Damodar river

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওই বৃদ্ধাকে। নিজস্ব চিত্র

Published by: Suhrid Das
  • Posted:October 6, 2025 4:02 pm
  • Updated:October 6, 2025 4:36 pm   

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ভরা দামোদরে জলে ভেসে গিয়েছেন। জলে খড়কুটো যা পেয়েছেন ধরে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কিছুই সহায় হয়নি। শেষপর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে বাঁশের খুঁটি আঁকড়ে প্রাণে রক্ষা পেলেন সত্তর ছুঁই ছুঁই মহিলা। রবিবার এমনই এক বাঁচার লড়াইয়ের সাক্ষী রইলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ও রায়না এলাকার বাসিন্দারা। কেউ বলছেন, অবিশ্বাস্য! কেউ বা বলছেন, অলৌকিক ঘটনা! কারও মতে আবার, অদম্য ইচ্ছাশক্তি! বৃদ্ধার জীবন রক্ষা করেছে।

Advertisement

এদিন দুপুরে রায়না থানার জাকতা গ্রামের মাতুরি টুডু দামোদর নদে স্নান করতে যান। স্নান সেরে পাড়ে ওঠার সময়ই ঘটে বিপত্তি। পা হড়কে নদের জলে পড়ে যান। ডিভিসি জলাধার থেকে জল ছাড়ার ফলে দামোদর নদ ফুঁসছে। জলের তোড়ে ভেসে যান মাতুরি। কখনও জলে ডুবেছেন। আবার ভেসে উঠেছেন। কচুরিপানার দাম থেকে খড়কুটো, যা পেয়েছেন তা ধরেই জলে ভেসে থাকার চেষ্টা করেছেন। প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করেছেন। এইভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। মধ্যগগনে থাকা সূর্য অস্ত যেতে দেখেছেন। আলো নিভে আঁধার নামতে দেখেছেন। তবুও হাল ছাড়েননি। বৃদ্ধা বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে ভর করে ফুঁসতে থাকা দামোদর সাঁতার কেটেছেন। হয়তো কোনও সময় নদীর কূলে যেতে পারবেন।

এইভাবে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার জলপথ অতিক্রম করেছেন। পৌঁছে যান জামালপুর থানার মুইদিপুর এলাকায়। এখানেই দামোদর নদ দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে। একটি মুণ্ডেশ্বরী নামে ও অন্যটি দামোদর নামে প্রবাহিত হয়েছে। মুইদিপুরের কাছে নদীর বাঁধে পোঁতা ছিল বাঁশের খুঁটি। কোনওক্রমে একটি খুঁটি আঁকড়ে ধরেন মাতুরি। ঘণ্টা পাঁচেক দামোদরে ভেসে হাত-পা কার্যত অবশ হয়ে গিয়েছিল। শরীরও কাজ করছিল না। স্বাভাবিকভাবেই গলার স্বরও বুজে এসেছিল। তবুই কোথা থেকে প্রাণশক্তি জোগাড় করে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে থাকেন মাতুরি। রাতে দামোদর নদের মাঝখান থেকে গ্রামবাসীরা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুনতে পান। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা চিৎকারের উৎস খুঁজতে শুরু করেন। গ্রামের লোকেরা ছুটে যান। খবর পেয়েই সেখানে ছুটে আসেন জোতশ্রীরাম অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তপন দে। সকলে মিলে তদারকি করে বৃদ্ধাকে নদীর পাড়ে তোলা হয়। দীর্ঘক্ষণ জলে থাকায় শীতে কাঁপতে থাকেন মাতুরি। এলাকার মহিলারা এসে নতুন কাপড় পরিয়ে দেন বৃদ্ধাকে। ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মেহেমুদ খান পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে বৃদ্ধাকে জামালপুর ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যায়। জামালপুর থানার পুলিশ বাড়ির সাথে যোগাযোগ করেছে। তাঁকে তাঁর পরিবারের লোকেরা হাতে তুলে দেওয়া হবে।

মেহেমুদ খান বলেন, ‘‘বৃদ্ধাকে জামালপুর হাসপাতালে নিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। তাঁর পরিচয় ও ঠিকানা জানতে পেরেছে পুলিশ। রায়না থানার হিজলনা পঞ্চায়েতের জাকতা গ্রামে তাঁর বাড়ি। স্নান করতে নেমে দামোদরের জলে তিনি ভেসে যান। পুলিশ-প্রশাসন অবশ্যই তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।’’ হাসপাতালে যাওয়ার পথে সেইভাবে কথা বলতেও পারছিলেন না মাতুরি। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ। তবুও প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় খুশির ঝিলিকও ফুটে উঠছিল মুখে। কোনওক্রমে জানান, স্নান করতে নেমে তলিয়ে যাওয়ার কথা। ঠিকানাও বলেন। বৃদ্ধাকে রক্ষা করতে পেরে খুশি এলাকার বাসিন্দারা। তবে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ভরা দামোদরে ভেসে এসেছেন শুনে অবিশ্বাস্য ঠেকেছে তাঁদের কাছে। একজন বলেন, ‘‘কথায় বলে না রাখে হরি মারে কে! নিজের চোখে দেখলাম কথাটার গুরুত্ব কতটা। এই ঘটনা না দেখলে বিশ্বাসই করা যায় না এমনটাও ঘটতে পারে।’’

 

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ