ফাইল ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জনতাই জনার্দন। জনতাই নির্বাচন করে সরকার। কিন্তু ভোটের ‘খেলা’ এক নিমেষেই ঘুরিয়ে দিচ্ছেন যে ‘জনতা’, তাঁরা আসলে কারা? এনিয়ে সম্প্রতি বিশদ বিশ্লেষণ করেছিলেন বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ। আর বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যান ঘেঁটে এবং রাজনৈতিক মাটি দেখেবুঝে তাঁদের মত, বাংলার নির্বাচনী ফলাফল ঘুরিয়ে দিচ্ছেন যাঁরা, তাঁরা আসলে অনুপ্রবেশকারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সোজাভাবে বলতে গেলে বাংলাদেশি মুসলমানরা। অরক্ষিত সীমান্ত পেরিয়ে বাংলায় ঢুকে এখানকার নাগরিকত্ব লাভ করছেন। আর তারপর হয়ে উঠছেন গুরুত্বপূর্ণ ‘ভোটার’। সম্প্রতি ‘ভোটচুরি’র অভিযোগ তুলে দেশে যেভাবে শোরগোল ফেলেছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি, সেই প্রেক্ষাপটে ভোট বিশ্লেষকদের নানা মতামত বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের গড় একেবারে অটুট। চেষ্টা করেও বিজেপি সেখানে দাঁত ফোটাতে পারেনি। কিন্তু কী কারণে শাসকদলের প্রতি এত জনসমর্থন? কারাই বা সেই সমর্থক? বিশ্লেষণ করে কলকাতার রাজনৈতিক গবেষক অভীক সেনের বক্তব্য, ”বাংলায় মুসলিমরা তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করে। কারণ, শাসকদল তাদের প্রয়োজন বুঝে একপ্রকার সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তাকে তোষণও বলা যেতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশি মুসলমানদের কাছে শাসকদলকে সমর্থন করা ছাড়া উপায়ও নেই। তাঁরা এটুকু বিশ্বাস রাখে যে তৃণমূল সরকার তাঁদের ঘাড়ধাক্কা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো থেকে আগলে রাখবে।” আগেও বহুবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ উঠেছে। তা যে নেহাৎই অন্তঃসারশূন্য নয়, বিশ্লেষকের মতামত থেকেই বোঝা যাচ্ছে।
এই মুহূর্তে দেশজুড়ে বড় সমস্যা হল পরিযায়ী। এক রাজ্যের শ্রমিকদের অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া এবং সেখানে সংগ্রাম করে হলে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাওয়া। আমস্টারডামের ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন ইনস্টিটিউটের গবেষক সঞ্জীব গুপ্তার মত, ”তথ্য অনুযায়ী বাংলার মোট ৩.৩৪ কোটি বিভিন্ন রাজ্যে ও বিভিন্ন দেশে কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই মুসলমান। এদের মধ্যে অনেকেই নথি ছাড়া সীমান্তের ফাঁক গলে এদেশে এসেছে, বাংলায় কয়েকমাস থেকে বৈধ নথি সংগ্রহ করেছে এবং তারপরে আবার বাংলা থেকে অন্য কোথাও গিয়ে কাজ করছেন। আর এই ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে বাংলা ও বাংলাদেশ সীমান্তে।” একই মত ফকির মোহন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেবেশ মহান্তির। তিনি বলছেন, ”শুধুমাত্র বাংলার নাগরিকত্বটুকু পেতেই অনেক বাংলাদেশি এখানে চলে আসছেন। তারপর এখানকার ভোটাধিকার পেয়ে সরকার গঠনে হয়ে উঠছেন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।”
উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন কয়েকমাস আগে নদিয়ার কালীগঞ্জের উপনির্বাচনের কথা। এই বিধানসভা কেন্দ্রে ৫৮.৫ শতাংশই মুসলিম ভোটার। তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ ৫৫.১৫ শতাংশ ভোট পেয়ে হারিয়েছেন বিজেপির আশিস ঘোষকে। তাহলে তৃণমূলকে ভোট দেওয়া সিংহভাগ কারা? মুসলিমরাই। তথ্য বলছে, এরাজ্যের ৩০ শতাংশ মুসলিম নাগরিক ছড়িয়ে মোট ১০২টি বিধানসভা কেন্দ্রে। তার মধ্যে ৭৪টিতে তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
আবার উলটোদিকে ১০৯টি বুথের মধ্যে ১০৮ টি হিন্দু অধ্যুষিত বুথে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট কিন্তু ৭৩ শতাংশ। কিন্তু কোথাও কোথাও খুব সূক্ষ্ম ব্যবধানে বিজেপিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। কাদের ভোটে? বিশ্লেষকরা বলছেন, মুসলিমদের ভোটেই। আর সেটাই তৃণমূলের বড় শক্তি। এনিয়ে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কটাক্ষ, ”মুখ্যমন্ত্রী জানেন হিন্দু এলাকাগুলিতে আমরা মানে বিজেপি তাঁর দলের কাছে বড়সড় চ্যালেঞ্জ।” হিন্দু-মুসলিম নিয়ে রাজনৈতিক আকচাআকচি যতই থাকুক, ছাব্বিশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিশ্লেষকদের এহেন মতামত গুরুত্ব দিয়ে ভাবতেই হচ্ছে শাসক-বিরোধী সকলকেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.