পলাশ পাত্র ও সৌরভ মাজি: একেই হয় তো বলে অদৃষ্ট! কিছুক্ষণ আগেও বাবার সঙ্গে কথা হয়েছিল৷ বাবা বলেছিল, কালকের পরীক্ষাটা ভাল করে দিস৷ এটাই যে তাঁর সঙ্গে শেষ কথা হবে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি তাঁরা৷ যাঁর উৎসাহে এতদিন পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিল৷ বুধবার সকালে তাঁকেই কবরে শায়িত করে পরীক্ষা দিল সাবিনাচ ও সালমা৷ মঙ্গলবার রাতে মারা যান নদিয়ার নাকাশিপাড়ার বাসিন্দা কামালউদ্দিন শেখ এবং পূর্ব বর্ধমানের গলসির বাসিন্দা শেখ আয়নাল৷ বাবার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাবিনাচ ও সামলা৷ বাবার স্বপ্নকে সত্যি করতে শোককেই মনের জোরে পরিণত করেন তাঁরা৷ বাবাকে কবরে শুইয়ে বুধবার মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দিতে যান শোকস্তব্ধ সাবিনাচ ও সালমা৷ বুধবার রাজ্যের দুই জেলায় নজরে এল এমনই মর্মান্তিক ঘটনা৷
[নেকড়ের আক্রমণে আহত একাধিক, ঝাড়গ্রামে ফিরছে আতঙ্কের দিন ]
পেশায় রাজমিস্ত্রি কামালউদ্দিন শেখ সর্বদাই ছোট মেয়ে সাবিনাচকে পড়াশোনা করতে বলতেন৷ বোঝাতেন, সংসারের দুঃখ, দুর্দশা দূর করতে তাঁকে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে৷ কামালউদ্দিনের প্রবল ইচ্ছা ছিল ছোট মেয়েকে অনেক দূর পড়াশোনা করাবে। সাবিনাচ এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে৷ বুধবার ছিল তার ইংরেজি পরীক্ষা৷ মঙ্গলবার রাতে হঠাৎই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় নাকাশিপাড়া থানার বিক্রমপুর পঞ্চায়েতের সলি গ্রামের বাসিন্দা কামালউদ্দিনের। বাড়াবাড়ি হলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বেথুয়াডহরি হাসপাতালে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে, তাঁকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পথেই মৃত্যু হয় কামালউদ্দিনের। বাবার মৃত্যুতে ভেঙে পড়ে সাবিনাচ৷ বুধবার সকালে বাবাকে কবরে শায়িত করে মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দিতে যায় সাবিনাচ৷ অসম্ভব মনের জোর ও ইচ্ছাশক্তিকে সহায় করে দেড় ঘণ্টা পরীক্ষা দেয় সে। তার এই ইচ্ছাশক্তিকে কুর্নিস জানিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণকমল দে-ও৷ তিনি বলেন, ‘‘ওর খুব মনের জোর।’’ কাঁদতে কাঁদতে সাবিনাচ জানায়, ‘‘মনের অবস্থা খারাপ হলেও, বারবার মনে করছিলাম বাবার ইচ্ছার কথা। তাই পরীক্ষায় বসি৷ দেড় ঘণ্টা পরীক্ষা দিয়ে, ফিরে এসে দেখি বাবাকে কবর দেওয়া হয়ে গিয়েছে।’’
[লোকসভা নির্বাচনে কর্মীদের ভোট চুরির নিদান অনুব্রতর, তুঙ্গে বিতর্ক]
সাবিনাচের মতোই একই চরম ঘটনার সাক্ষী থাকে পূর্ব বর্ধমানের গলসি থানার দয়ালপুর গ্রামের সালমা খাতুনও৷ মঙ্গলবার রাতে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার বাবা শেখ আয়নালের৷ জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে বাইকে চড়ে পারাজ থেকে গলসির দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। বাইকে ছিলেও আরও দু’জন গদাই শেখ ও লকাই শেখ। গলিগ্রামের ২ নম্বর জাতীয় সড়কে গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর জখম হন তিনজনই। তাঁদের ভরতি করা হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বাকিরা বেঁচে গেলেও, আয়নালকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মঙ্গলবার রাতে এই দুর্ঘটনার খবর পৌঁছায় আয়নালের বাড়তে৷ প্রথমে সালমার কানে বিষয়টি তুলতে চাননি পরিবারের সদস্যরা৷ কিন্তু বেশিক্ষণ চেপে রাখা যায়নি। কান্নার রোল সালমাকে জানিয়ে দেয়, তার ‘আব্বু’ আর নেই। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় একরত্তি সালমার। বাবার মৃত্যু সংবাদও টলাতে পারেনি তাকে। পড়াশোনা করে সালমাকে অনেক উঁচুতে দেখতে চেলেছিলেন তার আয়নাল৷ বাবার ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দিতে যান সামলাও। দু’ফোঁটা চোখের জল হয়ত পড়েছে উত্তরপত্রে, হতাশ হয়নি সালমা৷ তার কথায়, “বাবা চেয়েছিলেন আমি যেন মাধ্যমিক পাশ করি। বাবার ইচ্ছাপূরণ করতেই হবে আমাকে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.