রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: এক রাতের ভারী বৃষ্টিতে রাতারাতি বদলে গিয়েছে উত্তরবঙ্গ! ঘটনার কয়েকদিন পরেও ছড়িয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি। ভয়াবহ এই দুর্যোগ যেন উত্তরের মানুষের কাছে অভিশাপ ডেকে এনেছে! তাঁদের এখন একটাই প্রার্থনা, এমন বিপদ যেন আর না আসে। কিন্তু কারও জন্য আবার এই প্লাবনই ভাগ্য খুলে দিয়েছে। রাতারাতি কয়েক লক্ষ টাকার মালিক করে দিয়েছে। এর ফলে বদলে গিয়েছে বহু মানুষের পেশাও। অতীত ভুলে এখন অনেকেই ক্লান্ত নদীর বুকে কাঠ সংগ্রহকেই জীবিকা হিসেবেই বেছে নিয়েছেন কেউ কেউ। এমনই ছবি দেখা গেল আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের শিলতোর্সা নদীর দুই পারের বাসিন্দাদের মধ্যে।
একদিকে প্রবল বৃষ্টি অন্যদিকে ভুটান থেকে ধেয়ে আসা জলে ফুলেফেঁপে উঠেছিল শিলতোর্সা নদী। প্রবল জলের তোড়ে নদীতে গন্ডার ভেসে যাওয়ার ছবি সামনে আসে। এমনকী বহু মানুষও ভেসে যান নদীর জলে। এর মধ্যেই সমাজ মাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায়, নদীর উপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে বিপুল গাছের গুড়ি। একনজরে দেখলে মনে হবে সেখানে কাঠের লক, শুকনো ডালপালা গাছের যেন এক আস্তরণ ভেসে যাচ্ছে! কিন্তু নদী এতটাই উত্তাল ছিল যে, কেউ আর সেখানে নামার সাহস দেখায়নি।
সময়ের সঙ্গে বদলেছে উত্তরের ছবি। আতঙ্ক কাটিয়ে ছন্দে ফিরছেন মানুষ। এখন অনেক শান্ত শিলতোর্সা। নেই প্রকৃতির সেই রুদ্ররূপ। আর এখন তাই নদীর বুক থেকে কাঠ সংগ্রহকেই জীবিকা হিসিবে বেছে নিচ্ছেন আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের শিলতোর্সা নদীর দুই পারের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, নদীতে ভেসে আসা কাঠের চাহিদা ব্যাপক। আর তাই নদীর বিভিন্ন জায়গা থেকে জোগাড় করে তা বিক্রি করা হচ্ছে। এ এক নতুন পেশা! শিলতোর্সার পারের এক বাসিন্দা লাইলি বিবি বলেন, ”তিনদিন ধরে কাঠ সংগ্রহ করছি। বন্যায় বাড়ি ঘর সব ভেঙে গিয়েছে। মোটামুটি যা রোজগার হচ্ছে তাতে একমাস চলে যাবে।” আরও এক বাসিন্দা জগদুল রহমান বলেন, ”বন্যায় চাষ সব শেষ হয়ে গিয়েছে। গ্রামের সবাই মিলে নদীতে ভেসে আসা কাঠ সংগ্রহের কাজ করছি।” তবে খুব একটা লাভের আশা করছেন জগদুল। তাঁর কথায়, এগুলি খুব একটা দামী নয়। জলে নেমে এই কাজ করতে হচ্ছে।”
কিন্তু কোথা থেকে আসছে বিপুল পরিমান এক কাঠ? জানা গিয়েছে, ভুটানের ফুন্টশলিংয়ে ন্যাশনাল রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের ডিপো থেকে লক্ষ লক্ষ সেফটি পাইন গাছের গুড়ি কেটে রাখা ছিল। সেগুলিই তোর্সার জলে ভেসে এসেছে। সেগুলো এখন আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে তোর্সা নদী থেকে সংগ্রহ করে অনেকেই মোটা অঙ্কের রোজগার করছেন। দুর্যোগের আবহে তৈরি হল নতুন রোজগারের পথ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.