শঙ্করকুমার রায়, রায়গঞ্জ: রাতের খাবার সেরে সবেমাত্র বিছানায় ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাসিন্দারা৷ হঠাৎ দরজায় শব্দ৷ জানলার কাঠের কপাট সমানে দুলছে৷ কানে ভেসে আসা বিকট আওয়াজ৷ রাতের অন্ধকারে হুড়মুড়িয়ে ঘর ছেড়ে নির্জন রাস্তায় গোটা গ্রাম৷ অচেনা আওয়াজের উৎস খুঁজতে ছোটাছুটি৷ একেবারে যেন হুলস্থুল কাণ্ড৷ শেষপর্যন্ত শব্দের উৎসের হদিশ মিলল বটে কিন্তু, কে পৌঁছবে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে? শুরু আতঙ্কের সেই রাত৷ অশরীরীর আতঙ্কে সিঁটিয়ে গোটা গ্রাম৷
একরাশ আতঙ্ক নিয়ে ভয়ঙ্কর শব্দের সন্ধানে মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির বাসিন্দারা৷ খোলা হয় প্রধান গেট৷ কিন্তু কোথা থেকে দরজা ভাঙার বিকট শব্দ ভেসে আসছে৷ তা সুস্পষ্টভাবে ঠাওর করা সম্ভব হয়নি বাসিন্দাদের৷ অনেকক্ষণ শব্দের তরঙ্গ অনুসরণ করে অবশেষে জানা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলা ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের ল্যাবরেটরির দরজা ভাঙার শব্দ৷ আতঙ্ক মনে চেপে সিঁড়ি দিয়ে রক্ষীদের নিয়ে উঠেন দোতলায়৷ কিন্তু বন্ধ দরজার তালা খোলার সাহসটুকু দেখালেন না কেউ৷ ততক্ষণে ভয়ঙ্কর আওয়াজে রীতিমতো আতঙ্কের চেহারা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গালর্স হস্টেলের অন্দরমহল৷ আবাসিক ছাত্রীরা যে যার বিছানা ছেড়ে মোবাইলে খবর পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন৷ স্নাতক তৃতীয় বর্ষে অনার্সের ছাত্রী রীতি রায় ও রচনা সরকার বলেন, “একটা আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। তারপর ফোন করি স্যারদের।”
[পরিচয় লুকিয়ে নাবালকের সঙ্গে সংসার, ফাঁস গৃহবধূর কীর্তি]
তারপর খবর পাঠানো হয় দমকল বাহিনীকে। ছুটে আসে দমকলের কর্মীরা। খোলা হল বন্ধ দরজার তালা। ল্যাবরেটরির ভিতর কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রায়গঞ্জ থানার বিশাল পুলিশবাহিনী। সারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা তন্নতন্ন করে চিরুনি তল্লাশি শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সন্ধান চালিয়েও কোন অপ্রীতিকর বস্তুর হদিশ মিলল না৷ খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে যান উপাচার্য অনিল ভুঁইমালী ও রেজিস্টার দুর্লভ সরকার-সহ একাধিক অধ্যাপক। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ তল্লাশি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত কোনও ভুতের দেখা মেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার স্বপন পাইন বলেন, “রাতে প্রথমে ফোনে খবর পাই ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের দরজায় কারা যেন ধাক্কা দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে রেজিস্ট্রারকে ফোন করে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। খবর দেওয়া হয় দমকল বাহিনী ও পুলিশকে। তারপর উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন ভূত বা অশরীরীর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।”
[ইদের নমাজ পড়ে ফেরার পথে আক্রান্ত গ্রামবাসীরা, আহত ২০]
বুধবার সকালে উপাচার্য অনিল ভুঁইমালী বলেন, “একটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল বটে। তবে, সম্ভবত বিড়াল ঢুকে পড়েছিল ল্যাবরেটরিতে।” তবে, পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পর কোনও শব্দ পাইনি। তবে, যাতে কোন আতঙ্ক সৃষ্টি না হয়, তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ নজর রাখা হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.