Advertisement
Advertisement
Gram Banglar Durga Puja

দুর্গার অস্ত্র তৈরিতে ভাঙা টিনই ভরসা, আগুন বাজারে সাজসজ্জার আড়ম্বরে কোপ

কলিযুগে সংহাররূপিণী দূর্গা যেন মুখ লুকোচ্ছেন!

Gram Banglar Durga Puja: Purulia's idol artist faces problem for inflation
Published by: Sayani Sen
  • Posted:August 29, 2025 7:51 pm
  • Updated:August 29, 2025 7:51 pm   

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: অশুভকে সংহার করতে দশ হাতে নানান অস্ত্রে সজ্জিতা হয়ে মর্তে এসেছিলেন দশভূজা। মঙ্গলময়ী দেবী দশপ্রহরণধারিণী হয়ে উঠেছিলেন বিভিন্ন দেবতাদের দেওয়া অস্ত্রে। আজ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কোপে সেই অস্ত্র এখন ভাঙা টিনের! কথাটা অদ্ভুত ঠেকলেও এটাই সত্য। তাই কলিযুগে সংহাররূপিণী দূর্গা যেন মুখ লুকোচ্ছেন! ফুল ও চাঁদমালায় এমন ভাবে মায়ের চারদিক ঢেকে দেওয়া হয় যে দূর থেকে বোঝাই যায় না সেই অস্ত্রের শোভা। মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী রূপ দিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে দেবদেবীর সাজসজ্জার দোকানে টিন দিয়ে তৈরি অস্ত্রই বিক্রি হচ্ছে। তা সে পুরুলিয়া শহরের বাজার হোক। কিংবা বাঘমুণ্ডির ছৌ মুখোশ গ্রাম চড়িদা থেকে কলকাতার কুমোরটুলি, বড়বাজারে। তবে সেই টিন ভাঙার গুণমান বা উৎকর্ষতা রয়েছে। সেই অনুযায়ী ওই অস্ত্রের দাম হয়। তবে গতবার যা ছিল। এবার প্রত্যেকটিরই ৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছে। আর তাতেই হিমশিম অবস্থা মৃৎশিল্পীদের।

Advertisement

তবে কি শুধু ভাঙা টিনেই? না, বরং এই ভাঙা টিনকে এড়াতেই বিভিন্ন মণ্ডপ বা বাড়ির পুজোতে মায়ের দশ অস্ত্র পিতলের কিনে নিয়েছেন। বিসর্জনের সময় নদীতে বা গঙ্গায় যা ভাসান দেওয়া হয় না। মায়ের কাঠামো, পাটাতনের মতোই তা আবার ফিরিয়ে আনা হয়। আবার অনেক বড় বড় পুজো কমিটির মায়ের হাতে থাকা পিতলের অস্ত্র জলে মিশে যায়। নতুন করে কেনা হয় ফি বছর। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃৎশিল্পীরা ওই ভাঙা টিন দিয়ে তৈরি অস্ত্রশস্ত্রেই দেবীকে সাজিয়ে তোলেন। আর যারা এই সাজসজ্জা-র ব্যবসা করেন তারা
কুমোরটুলি, বড়বাজার থেকে ভাঙা টিন দিয়ে তৈরি অস্ত্র নিয়ে গিয়ে জেলায় নিজেদের দোকানে বিক্রি করে থাকেন। সেখান থেকেও মৃৎশিল্পীরা ওই অস্ত্র সংগ্রহ করেন। তেমনই অনেক মৃৎশিল্পী যাদের প্রচুর বরাত আসে তারা অবশ্য এইসব কেনাকাটা করতে কুমোরটুলিতে চলে যান। এখন এই প্যাকেজিং-র দুনিয়ায় দশভূজার দশ অস্ত্রও এক প্যাকেজের আওতায়। শ্রীবিষ্ণুর দেওয়া চক্র, মহাদেবের দেওয়া ত্রিশূল, বরুনের দেওয়া শঙ্খ, দেবরাজ ইন্দ্রের বজ্র , যমরাজের গদা বা কালদন্ড, পবনের দেওয়া তীর-ধনুক, তলোয়ার, ঘন্টা, ব্রহ্মার দেওয়া পদ্ম ও শেষনাগের দেওয়া সাপ এক প্যাকেটেই বন্দি।

Purulia Puja

একেবারে সাধারণ প্যাকেটবন্দি এই দশ অস্ত্র ৬০ টাকা থেকে ২১০ টাকায় জেলার সাজসজ্জা দোকানগুলিতে বিক্রি হচ্ছে। যে ভাঙা টিনের গুণগতমান ভালো। সেই প্যাকেটের দাম রয়েছে ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। বাঘমুন্ডির ছৌ মুখোশ গ্রাম চড়িদার সাজসজ্জা দোকানের মালিক স্বপন রায় বলেন, ” দেবীর হাতে থাকা এই অস্ত্রশস্ত্রের নানান দাম আছে। গুণগত মান অনুযায়ী দাম হয়। এই দশ রকম অস্ত্র ও গণেশ, কার্তিকের হাতে যা থাকে। সেইসঙ্গে সরস্বতীর বীনা ও লক্ষ্মীর পদ্মফুলও এক প্যাকেটেই বিক্রি হয়। খুব সাধারনের দাম জেলার বাজারগুলিতে ৬০ থেকে ২১০ টাকা। এর চেয়ে ভালো ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকায় আমরা পুরুলিয়াতে বিক্রি করে থাকি। তবে এর চেয়েও ভালো আছে। তার দাম ১২oo টাকা। তা অবশ্য এই জেলায় বিশেষ বিক্রি হয় না।”

দেবীর এই অস্ত্র সমূহের বিভিন্ন নম্বর থাকে। মূর্তির উচ্চতা যেমন হয় সেই অনুযায়ী নম্বর দেওয়া। একেবারে সাধারণ এক নম্বর দেওয়া প্যাকেট করা অস্ত্রশস্ত্র ২ ফুটের প্রতিমার জন্য দরকার হয়। দু’নম্বর তিন ফুটের। তিন থেকে পাঁচ নম্বর পর্যন্ত তিন থেকে সাড়ে চার ফুট প্রতিমার প্রয়োজন হয়। ৫ ফুট প্রতিমার জন্য ৬, ৭, ৮ নম্বরের প্যাকেটিং করা অস্ত্র প্রয়োজন। যা বিক্রি হয়ে থাকে যথাক্রমে ১১০, ১২০ ও ১৩০ টাকায়। সাড়ে পাঁচ ফুট থেকে ছয় ফুট প্রতিমার জন্য ৯ এবং ১০ নম্বরের। যার দাম ১৫০ থেকে ১৯০ টাকা। আর সাত থেকে ন’ফুট দুর্গার প্রতিমার জন্য ১১-১২ নম্বর প্যাকেট প্রয়োজন হয়। যা বিক্রি হয় ১৯০ থেকে ২১০ টাকায়। আর গুণগতমান ভালো সেই এক নম্বর মূলত ৫ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত দুর্গা প্রতিমার। দাম ৭৫০ টাকা। ওই দু’নম্বর প্যাকেট প্রয়োজন হয় ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু দুর্গার জন্য। দাম ৯৫০। পুরুলিয়া শহরের রথতলার মৃৎশিল্পী ফকির পাল বলেন, “ফি দিন প্রতিমার কাঁচামালের দাম বাড়ছে। এই অনুপাতে কিন্তু প্রতিমার দাম বাড়ছে না। এবার যা বরাত পেয়েছি তাতে গত বছরের প্রতিমার নিরিখে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকার বেশি মিলছে না। এভাবেই পুজো আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। যাতে এই অস্ত্রশস্ত্র থেকেও একটু লাভ করা যায় সেজন্য আমরা একবারে কুমোরটুলি থেকে কিনে নিয়ে আসি।”

ছোট বা বেশি বড় নয় এমন দুর্গা প্রতিমার জন্য পিতলের অস্ত্রশস্ত্রের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। এটাও মেলে কুমারটুলিতে। তবে সেখানে কিছুটা সস্তায়। চড়িদার মৃৎশিল্পী সোমু সূত্রধর বলেন, “মাটি, খড়, বাঁশ, কাঠের সঙ্গে দেবীর সাজসজ্জার অস্ত্র-র দামও বাড়ছে।” সে যতই ভাঙা টিনের তৈরি হোক না কেন। তা যে মায়ের হাতে পড়তেই চকচক করে! তা দর্শন হোক বা না হোক।

Purulia-Puja

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ