নব্যেন্দু হাজরা: চন্দ্রমুখীর মতো দেখতে অথচ চন্দ্রমুখী নয়! সাধারণ চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই যে চন্দ্রমুখীর দামে আপনি অন্য আলু কিনছেন। বুঝতে পারছেন, যখন খাচ্ছেন। সুস্বাদু রান্না খাওয়ার সময় দেখছেন আলুটাই সিদ্ধ হয়নি। কারণ, গাঁটের কড়ি গচ্চা দিয়ে কিনছেন ‘নকল’ চন্দ্রমুখী আলু!
চলতি বছরে আলুর দাম মাত্রাছাড়া। জ্যোতি তিরিশ টাকার গণ্ডি পার করেছে। আর চন্দ্রমুখী চল্লিশের ঘর। কোথাও কোথাও তো দাম হাফ সেঞ্চুরির দিকে এগোচ্ছে। দামের জ্বালায় জ্বলছে হেঁশেল। কিন্তু আলু ছাড়া কি আর চলে! তাই চাহিদা রয়েইছে। তবে জ্যোতির জোগান ঠিক থাকলেও চন্দ্রমুখী আলুর জোগানে টান এবার। আর তাই বাজারে ঘুরছে চন্দ্রমুখীর মতো দেখতে হিমালিনী আলু (Himalini Potato)। যার আসল দাম চন্দ্রমুখীর অর্ধেক। ২৫-২৭ টাকার আলু আসলে আপনি থলেতে ঢোকাচ্ছেন চন্দ্রমুখীর চড়া চল্লিশের দামে। কলকাতা থেকে জেলা, সর্বত্রই বাজার ছেয়েছে ‘নকল’ চন্দ্রমুখী আলু। বিক্রেতারাও বেশি মুনাফার লোভে এই আলু চন্দ্রমুখীর সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করছেন। ঠকছেন আমআদমি।
আলুচাষিদের কথায়, এবার সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে চন্দ্রমুখী আলুর ফলনে। কারণ, এই আলুর চাষ মূলত অক্টোবরের শেষে এবং নভেম্বরের শুরুতে শুরু হয়। সময় লাগে তিনমাস। এবার সেই সময়তেই মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে বঙ্গে। যে কারণে আলু পচে গিয়েছে। পচেছে জ্যোতি আলুও। কিন্তু দ্বিতীয়বার জ্যোতি চাষ করা গেলেও চন্দ্রমুখী সম্ভব হয়নি। প্রতিবছর যেখানে ১০ লক্ষ টন চন্দ্রমুখীর ফলন হয় রাজ্যে সেখানে এবার হয়েছে মোটে তিন লক্ষ টন মতো। অথচ তার চাহিদা রয়েছে যথেষ্টই। আর তাই চন্দ্রমুখীর জোগান বাড়াতে তাতে মেশানো হচ্ছে হিমালিনী। এই আলু মূলত পূর্ব বর্ধমান এবং হুগলিতে উৎপাদন হয়। যার বীজ আসে পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে। এবছর হিমালিনী হিমঘরে ঢুকেছে ১৬ টাকা কেজিতে। এরপর হিমঘর থেকে তা বেরোচ্ছে ২৩ টাকা কেজিতে। কিন্তু খোলাবাজারে সেই আলু চন্দ্রমুখীর দামে বিকোচ্ছে। চন্দ্রমুখীতে মিশছে ইউপি ৩৭-৯৭ আলুও।
আলুচাষিরা বলছেন, এরাজ্যেও হিমালিনী আলু চাষ হয় বছরে প্রায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন। বছর দুয়েক ধরে যার ফলন হচ্ছে। দেখতে অবিকল চন্দ্রমুখীর মতো। পাতলা খোসা। দাগ নেই বিশেষ। তবে বোঝা যায়, তাতে আঙুলের নখ ঢোকালেই। চন্দ্রমুখীতে ঢুকে যায় নখ। হিমালিনীতে ঢোকে না। তবে সাধারণ মানুষের পক্ষে সেতো বোঝা সম্ভব নয়। ফলে তাঁরা ঠকে যান।
আর এবার চন্দ্রমুখীর যা দাম, তাতে অন্য আলু যদি মেশানো যায় তবে মুনাফা অনেক বেশি। তাই হচ্ছে খুচরো বাজারে। আলু ব্যবসায়ীদের কথায়, তবু এখন চন্দ্রমুখীর জোগান রয়েছে। তাই এই আলু কম মেশানো হচ্ছে। কিন্তু মাস দুয়েক পর যেই চন্দ্রমুখীর জোগান কমবে, তখন এই আলুই চন্দ্রমুখী বলে বিকোবে। পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, “এবছর শীতকালে বৃষ্টির কারণে চন্দ্রমুখীর সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। আর দ্বিতীয়বার তা চাষ হয়নি। তাই বাজারে জোগান খুব কম। একদম চন্দ্রমুখীর মতো দেখতে হিমালিনী আলু। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সেটাকেই বাড়তি দামে চন্দ্রমুখী বলে বিক্রি করে দেন। এটা উচিত নয়। আসলে সাধারণ মানুষের পক্ষে পার্থক্য বোঝা সম্ভব হয় না। সেই সুযোগই নেন একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.