সুমন করাতি, হুগলি: ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নামে অভিনব কায়দায় প্রতারণা। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এই প্রতারণার পর অবশেষে পুলিশের জালে হুগলির কোন্নগরের বাসিন্দা। বিধাননগর সিটি পুলিশের তরফে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে খবর জানানো হয়েছে। কীভাবে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিল সে, তাও জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। ধৃতের নাম সৌমিক ভট্টাচার্য, কোন্নগরের বাসিন্দা। ঋণ দেওয়ার নাম করে লোকজনের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে সেসব ব্যবহার করে দামি ফোন কিনত ধৃত যুবক। তারপর যারা ঋণ নিতেন, তাঁরা নিজেরা ফোন না কিনেই ইএমআই দিতে হতো। তাতেই বেশ কয়েকজন বোঝেন যে প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। পুলিশের দ্বারস্থ হন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে কোন্নগরের সৌমিক ভট্টাচার্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিধাননগর পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বহুদিন ধরেই প্রতারণা চক্র চালাত সৌমিক ভট্টাচার্য। আর প্রতারণার শিকার হতেন হুগলি থেকে শুরু করে কলকাতা-সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। হুগলি জেলার কানাইপুর এলাকার বাসিন্দা অরূপ দে জানান, তিনিও এই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাঁর নামে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ঋণে ফোন কেনা হয়েছে। অরূপের অভিযোগ, এই সৌমিক ব্যক্তিগত ঋণ করিয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর একদিন লোন করানো হবে বলে অফিসে নিয়ে যাওয়ার নাম করে ডানকুনিতে একটি ফোনের দোকানে নিয়ে যান। সেখানে অরূপকে জানানো হয়, প্রথমে তাঁর নথিপত্র দিয়ে একটা যে কোনও জিনিস কেনা হবে। কিন্তু তাঁর জন্য কোনও টাকা কাটা হবে না। এই বলে অরূপের নামে দামী ফোন কিনে নেন সৌমিক।
অরূপকে জানানো হয়, কিছুদিনের মধ্যেই লোনের টাকা পেয়ে তিনি যাবে। কিন্তু কিছুদিন বাদেই অরূপের ফোনে ইএমআই কেটে নেওয়ার মেসেজ আসে। মাথায় হাত পড়ে তাঁর। বুঝতেই পারেন আসল ঘটনাটা কী ঘটেছে। তিনি বলেন, “আমি না ফোন পেয়েছি, আর না লোনের টাকা। কিন্তু আমাকে এখন ইএমআই দিতে হচ্ছে। আমাদের মতো বহু মানুষের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। দোষীর কঠিন সাজা হওয়া দরকার। আর ইএমআই কোম্পানি আমাদের টাকা কাটা বন্ধ করুক।”
প্রতারণার শিকার কোন্নগরের আরেক বাসিন্দা মৌমিতা সিংয়ের কথায়, ”আমাদের পার্সোনাল লোন করিয়ে দেওয়ার নাম করে সৌমিক আমাদের পরিবারের আমার, আমার স্বামীর ও আমার মায়ের নামে প্রায় চার লক্ষ টাকার ফোন কিনে নেন আমাদের নথি ব্যবহার করে। আমাকে সৌমিক বলে, আমার একার নামে বেশি লোন হবে না। তাই আমাদের পরিবারের সকলের নামে ভাগ করে দেওয়া হবে।প্রথমে আমাকে নিয়ে কলকাতা একটি বড় ফোনের শোরুমে নিয়ে গিয়ে সেখানে আমার হাতে একটা দামী ফোন ধরিয়ে ছবি তুলে নেওয়া হয়। তারপর আমায় বলে বাড়ি চলে যেতে, কিছু সময় পরে লোনের টাকা পেয়ে যাব। কিন্তু আমি যখন প্রশ্ন করি, আমার তো ফোনের দরকার নেই, তখন বলা হয় যে এটা প্রথমে করতে হয়। কিন্তু এর টাকা কাটা হবে না। যখন লোন হবে শুধু লোনের টাকাই দিতে হবে। কিন্তু কিছুদিন পর আমার কাছে ইএমআই-এর মেসেজ আসে। তখন সৌমিক তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকে ইএমআই-এর একটা টাকা পাঠায়। তারপর থেকেই আর খোঁজ নেই সৌমিকের। আর বাড়িতে গেলে বাড়ির কেউ সঠিক কিছু জানায় না। এই ঘটনা আমাদের মতো প্রায় ১০০ জনের বেশি মানুষের সঙ্গে ঘটেছে। আমাদের ধারণা, কয়েক কোটি টাকার প্রতারণা করেছে সৌমিক। তার কঠিন শাস্তি হোক। আমাদের পরিবারের সঙ্গেই প্রায় চার লক্ষ টাকা প্রতারণা করা হয়েছে।”
এই বিষয়ে কোন্নগর পুরসভার পুরপ্রধান স্বপন দাস বলেন, ”ছেলেটি আগে নবগ্রাম এলাকায় থাকত। কিছু বছর আগে এদিকে ফ্ল্যাট কিনে এসেছে। আগেও এর বিরুদ্ধে এসব কথা শোনা যেত। আর তারপর জানা যায়, আবার বিয়ে করেছে। আর এরা প্রত্যেকেই খুবই উচ্চাকাঙ্খী। হাইফাই লাইফস্টাইল ছিল এঁদের। এবার সৎ পথে নিশ্চয়ই এভাবে জীবনযাপন সম্ভব নয়। তাই আবার প্রতারণা করে মানুষকে বিপদে ফেলছে। এদের কঠিন সাজা হওয়া দরকার। নাহলে এরা পরে আবার এসব কাজ চালিয়ে যাবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.