চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: ‘লাদেন’কে আনলেই আসানসোলের বেআইনি কয়লা খনিতে তলিয়ে যাওয়া তিন জনের খোঁজ মিলত। সে অতীতে বহু অসাধ্যসাধন করেছে। বিপজ্জনক খনিতে নেমে মৃতদেহ তুলে এনেছে লাদেন ওরফে অশোক চৌধুরি। পাটমোহনা কিংবা নিয়ামতপুর অঞ্চলে তাঁকে দেখা যায়। ছোটখাটো পাতলা চেহারার স্থানীয় মানুষটির নামেই মালুম যে সুনাম খুব একটা নেই। ছোটখাটো চুরি, হাতসাফাই-সহ নানা কুকীর্তিতে জেলের ঘানি টেনেছে বেশ কয়েকবার। কুলটি থানা, নিয়ামতপুর ফাঁড়ি ও হীরাপুর থানার পুলিশ কর্তাদের কাছে এই লাদেন বেশ পরিচিত।
দুর্ঘটনার পর থেকে আলডিহির ওই পরিত্যক্ত খনি এলাকায় ভিড়ের মধ্যে দেখাও মিলেছে তার। কিন্তু সামনে এগিয়ে আসেনি সে। তবে পুলিশের বড় কর্তারা সেখান থেকে সরে যেতেই লাদেনকে দেখা গেছে অতি উৎসাহী হয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত খনিতে অনায়াসে নেমে যেতে। আবার তরতর করে উপরে উঠেও এসেছে। সুড়ঙ্গের ভিতর সামান্য গিয়েও ফিরে এসেছে সে। হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, সে-ই পারে। বিষাক্ত গ্যাস ভরতি খনিতে নেমে নিখোঁজদের খোঁজ এনে দিতে পারে। এসব তার কাছ জলভাত।
স্থানীয় মানুষজনের দাবি, রবিবার বেআইনি খনিতে নেমে নিখোঁজ ৩ জনের খোঁজ পেতে লাদেনকে কাজে লাগানো যেতে পারে। লাদেন নিজে জানিয়েছে, সম্প্রতি আলডিহির এক যুবকের দেহ আট নম্বর বস্তির পরিত্যক্ত ব্রিটিশ খনি থেকে সে উদ্ধার করেছে। বছর দুয়েক আগে কাকরসোল এলাকার পরিত্যক্ত খাদান থেকে দেহ তুলে দিতে সাহায্য করেছে সে। এক্ষেত্রেও সে কাজটি করে দিতে পারে, যদি পরিকাঠামোগত সহযোগিতা পাওয়া যায়। কিন্তু কীভাবে খনিতে ঢুকবে ‘লাদেন’? তার দাবি, খনির মুখে প্লাস্টিক ঢেকে বড় একজস্টেড ফ্যান চালাবে। তারপর হাওয়ার সাহায্যে ব্লিচিং ছড়িয়ে দেবে খনির সুড়ঙ্গে। কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ তাতে কমে আসবে। তখনই খনিতে আটকে থাকা দেহ উদ্ধার সম্ভব। এছাড়াও খনির মুখ কেটে চওড়া করে দিলেও গ্যাস বেরিয়ে যেতে পারবে।
ইসিএলের মাইন রেসকিউ টিম ছোট অক্সিজেন সরবরাহের মেশিন নিয়ে খাদানে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল সোমবারই। তারা মোট পাঁচটি মেশিন নিয়ে এসেছিল। মেশিনটির নাম ‘সেল্ফ কন্টেনার সেল্ফ রেসকিউয়ার’৷ কখনও যদি খনির ভেতরে কোনও শ্রমিক অক্সিজেনের অভাব অনুভব করেন কিংবা কেউ আটকে পড়েন, তখন এই মেশিনের সাহায্য নেওয়া হয়৷ মেশিনগুলি একবারই ব্যবহার করা যায়। টানা তিন থেকে চার ঘণ্টা এই মেশিনগুলি অক্সিজেন সরবরাহ পারে। মেশিনের সঙ্গে একটি বড় টিউব থাকে যা নাকে লাগিয়ে নিয়ে নিতে হয়। সেই টিউবও দেখা গিয়েছে এই পরিত্যক্ত খনিতে। তবে সূত্রের খবর, টিউবটি ফেটে যাওয়ায় অপারেশন সফল হয়নি। ফলে স্থানীয় কাউকে খনিতে প্রবেশ ঝুঁকি নিতে চাইছে না পুলিশ প্রশাসন। পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা জানিয়েছেন, অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কাউকেই নামতে দেওয়া হবে না খনির ভেতর। তাই লাদেনকেও আপাতত কাজে লাগানো হচ্ছে না। যদিও বৃহস্পতিবার সকালে এনডিআরএফ-এর একটি দল পৌঁছেছে ঘটনাস্থলে। উদ্ধারকাজে নামতে পারেন সদস্যরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.