Advertisement
Advertisement

Breaking News

Birbhum

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জমানো লক্ষ-লক্ষ টাকা উধাও! ‘জালিয়াতি’তে সর্বস্বান্ত বীরভূমের কয়েক শো প্রান্তিক চাষি

ব্যাঙ্কের নামে দেওয়া নথিও ভুয়ো!

Hundred lost lacs in Bank scam in Birbhum

থানার বাইরে অভিযোগকারীরা। ছবি: সুশান্ত পাল

Published by: Paramita Paul
  • Posted:December 28, 2024 6:57 pm
  • Updated:December 28, 2024 7:12 pm   

নন্দন দত্ত, সিউড়ি: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জমানো টাকা উধাও! ব্যাঙ্কের কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট বা সিএসপি থেকে লক্ষ-লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠল মল্লারপুর থানা এলাকায়। ময়ূরেশ্বরের দক্ষিণ গ্রাম এলাকায় গ্রামেরই রামকৃষ্ণ দলুইয়ের মাধ্যমে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিয়েছিল এলাকার প্রান্তিক চাষিরা। দিন পনেরো আগে বাইক দুর্ঘটনায় রামকৃষ্ণের মৃত্যু হয়। তারপরেই ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে গ্রামবাসীরা জানতে পারে তাদের জমানো টাকা উধাও। মল্লারপুর থানায় লিখিত অভিযোগ জানান বাসিন্দারা। রামকৃষ্ণ দলুইয়ের মৃত্যু হলে তাঁর সহকারী প্রিয়া কোনাই এই কাণ্ডে জড়িত বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। কিন্তু অ্যাকাউন্ট নিয়ে খোঁজখবর শুরু হলে ছেলেকে নিয়ে ঘর বন্ধ করে গাঢাকা দিয়েছে প্রিয়া।

Advertisement

ময়ূরেশ্বরের দক্ষিণগ্রামে গ্রাহকদের সুবিধার জন্য গ্রামেরই ছেলে রামকৃষ্ণ দলুই ভাড়া ঘরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক একটি সিএসপির শাখা খোলে। এলাকাটি প্রান্তিক চাষিদের এলাকা। দক্ষিণগ্রাম ছাড়াও রাতগড়া, ধানগড়া, নন্দীগ্রাম-সহ আশেপাশের গ্রামের মানুষ ওই সিএসপি থেকে টাকা জমা ও তোলার কাজ করত। সম্প্রতি গ্রামেরই মোড়ে পথ দুর্ঘটনায় রামকৃষ্ণের মৃত্যু হয়। তারপরেই টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহকরা জানতে পারে তাঁদের অ্যাকাউন্টে একটি টাকাও জমা পরেনি। তাতেই মাথায় হাত গ্রাহকদের।

শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত এলাকার গ্রাহকরা লিখিতভাবে প্রায় ১০০ জন মল্লারপুর থানায় অভিযোগ জানিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, রামকৃষ্ণ গ্রামের ছেলে। গলায় মালা চন্দন ছিল। তুলসী গাছ লাগিয়ে বেড়াত। তাঁকে বিশ্বাস করেই টাকা রেখেছিলাম। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আট বছর ধরে রামকৃষ্ণ ওই সিএসপি চালায়। গত তিনবছর তাঁর সহযোগী হিসাবে গ্রামেরই মেয়ে প্রিয়া কোনাইকে রাখে। গ্রাহকদের অভিযোগ রামকৃষ্ণ ও প্রিয়া যোগসাজশ করে টাকা হাতিয়েছে।

গ্রামের গৌতম বায়েন জানান, “বাবার মৃত্যুর পরে কৃষক বন্ধুর জন্য সরকারের দেওয়া দুলক্ষ টাকা আমরা প্রিয়ার হাতে দিয়ে রামকৃষ্ণের মাধ্যমে ফিক্সড করেছিলাম। পুজোর সময় বাইরে ছিলাম। মা তুলসী বায়েন টাকা তুলতে গেলে কাগজে চারটে টিপ ছাপ দিয়ে নেয়। পরে ১০ হাজার টাকা দিয়ে মা কে ছেড়ে দেয়। এখন দেখি চারবার ৩০ হাজার করে টাকা প্রিয়া নিজের অ্যাকাউন্টে ও তার ভাই প্রতাপ কোনাইয়ের নামে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তুলেছে।” নন্দীগ্রামের বাসিন্দা চাঁদু কোনাই দাবি করেন, “দুবছর আগে আমার কাছে ২ লক্ষ টাকার ফিক্সড করিয়ে নেয় রামকৃষ্ণ। কিন্তু সবার কাছে শুনে ব্যাঙ্কে গিয়ে পাসবই দেখালে ব্যাঙ্ক জানায়, আমার কাছে থাকা কাগজ সব ভুয়ো। আমার অ্যাকাউন্ট ফাঁকা।” প্রান্তিক চাষি সাধন গড়াই বলেন, “গ্রাম সম্পর্কে প্রিয়া আমাকে মামা বলে ডাকে। তাঁদের দুজনের কথায়, আমি আমার কৃষক বন্ধুর ভাতা, ধান বিক্রির টাকা নিয়ে ২০২৩ সালে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা জমিয়েছিলাম। সবার কথা শুনে ব্যাঙ্কে গিয়ে অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করে জানলাম তাতে একটা টাকাও নাই।”

সকলেই শনিবার মল্লারপুর থানায় এসে জমানো টাকা ফেরতের দাবি জানায়। তাঁদের অভিযোগের পর গ্রামের কয়েক শো গ্রাহক সকলেই এখন কামরাঘাটের ওই ব্যাঙ্কের মূল শাখায় ভিড় জমাচ্ছে। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, সিএসপিতে ৯ হাজারের বেশি টাকা ফিক্সড হয় না। তাছাড়া গ্রাহকরা যা কাগজ দেখাচ্ছে তা ভুয়ো। তাহলে অভিযোগটা প্রমাণ হবে কী করে? মল্লারপুর থানা তদন্ত শুরু করেছে বলে জানায়।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ