সুমন করাতি: কালীক্ষেত্র হিসাবে কলকাতার নাম সর্বত্র। কালী আরাধনার ঐতিহ্যবাহী এই শহর। চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক কালীধাম। কালীঘাট মন্দিরের পাশাপাশি সেই সমস্ত মন্দিরের মাহাত্ম্যও বিপুল। আছে নানা গল্পকথা। যেমন দেবী হংসেশ্বরী। লোকমুখে প্রচারিত, বছরে একদিনই নাকি জিভ দেখা যায় এই মায়ের। দীপান্বিতা অমাবস্যায় রুদ্র রূপে পুজো হয় মায়ের। আর তাই কালীপুজোর রাতে বাঁশবেড়িয়ার এই মন্দিরে ঢল নামে ভক্তদের।
সামনেই কালীপুজো। জোর কদমে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সেজে উঠছে মণ্ডপ থেকে মন্দিরগুলি। ব্যস্ততা রয়েছে বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দিরেও। এই মন্দিরে সারা বছর শান্তরূপেই পূজিত হন দক্ষিণা কালী হংসেশ্বরী। থাকে না মায়ের জিভ! কিন্তু কালীপুজোর দিন এই মায়ের রূপ হয়ে ওঠে রুদ্র। শুধু তাই নয়, ‘রাজবেশে’ সেজে ওঠেন হংসেশ্বরী। পরানো হয় সোনার জিভ। মন্দিরের সেবাইত জানাচ্ছেন, ”বছরে এক রাতের জন্য রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন মা। কালীপুজোর দিন সন্ধ্যারতির পর তাঁকে রাজবেশ পরানো হয়। মায়ের শরীর জুড়ে থাকে সোনা-রুপোর বিভিন্ন গয়না। জিভে থাকে সোনা। ফুলমালায় সেজে ওঠেন হংসেশ্বরী।”
সেবায়েতের কথায়, ”কালীপুজোর রাতে এলোকেশী রূপে দেখা দেন মা। পুজো শেষে ভোর চারটেয় সেই সমস্ত সজ্জা আবার খুলে ফেলা হয়। শান্ত রূপে ফিরে আসেন মা।” শোনা যায়, রাজা নৃসিংহ দেবরায় ১৮০১ সালে মন্দির তৈরির কাজ শুরু করেন। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরই হংসেশ্বরী মন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এর পিছনেও রয়েছে ইতিহাস!
শোনা যায়, নিমকাঠের গুঁড়ি বেনারস থেকে গঙ্গায় ভেসে এসেছিল। সেই কাঠেই তৈরি হয় মূর্তি। স্থানীয়দের কথায়, মায়ের মূর্তি তৈরির ক্ষেত্রে কোনও জোড়া-তাপ্পি নেই। একটা নিম কাঠ কেটেই তৈরি হয় গোটা মূর্তির অবয়ব।
কালীপুজো ছাড়াও আরও একটি উৎসব হয় হংসেশ্বরী মন্দিরে। হয় মায়ের বিশেষ স্নানযাত্রা। দীপান্বিতা কালীপুজোর রাতের মতোই সেদিনও ঢল নামে ভক্তদের। জানা যায়, সাধারণভাবে সকাল সাতটায় মন্দির খোলে। দশটায় পুজো শুরু হয়। হয় ভোগ নিবেদন। সেই ভোগ পান মন্দিরে আসা ভক্তরাও। হাওড়া জেলা থেকে মায়ের দর্শনে আসা অমিতকুমার সামন্ত জানান, ”অনেকেই বলেন কৃপা না হলে এই মন্দিরে থাকা মায়ের দর্শন পাওয়া যায় না। মা কৃপা করলেন তাই দর্শন পেলাম। এখানে মায়ের রূপ খুব সুন্দর।”
বর্তমানে হংসেশ্বরী মন্দির হেরিটেজ সম্পত্তি। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মন্দিরের একাধিক জায়গায় পড়েছে বয়সের ছাপ! ফলে দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, হংসেশ্বরী মন্দির যেখানে রয়েছে তার পাশেও কয়েকটি মন্দির রয়েছে। রাজপরিবারের বাড়ির কিছু অংশ অবশিষ্ট রয়েছে। সেখানেও সংস্কার প্রয়োজন বলেই দাবি স্থানীয়দের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.