Advertisement
Advertisement
Katwa

জমি বিবাদে বদলেছে পুজোর জায়গা, সরকারি অনুদান পেতে বেনজির লড়াই দু’পক্ষের!

পুজো শুরুর মাত্র সাত দিন আগেই দুই পৃথক প্রতিমার পুজোর তোরজোড় শুরু।

Katwa puja committee split in half after receiving government help

ছবি: জয়ন্ত দাস

Published by: Anustup Roy Barman
  • Posted:September 21, 2025 5:39 pm
  • Updated:September 21, 2025 5:39 pm   

ধীমান রায়, কাটোয়া: কথাতেই আছে অর্থই অনর্থের মূল। প্রায় ৭০ বছরের পুরানো বারোয়ারি দুর্গাপুজো এতদিন একসঙ্গে চাঁদা তুলেই হয়ে আসছিল। সমস্যা শুরু হল সরকারি অনুদান পেতেই। দুর্গাপুজোয় সরকারি অনুদানের এক লক্ষ ১০ হাজার টাকার চেক হাতে আসার পরেই ভেঙে দু’ভাগ‌ পুজো কমিটি। পুজো শুরুর মাত্র সাত দিন আগেই তোরজোড় শুরু হয়েছে দুই পৃথক প্রতিমার পুজোর।

Advertisement

এই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। কাটোয়া থানার মূলগ্রাম ব্রহ্মাণীতলা দুর্গাপুজো কমিটির পক্ষ থেকে এবছর থেকে দুটি পৃথক প্রতিমায় পুজো হবে বলে জানা গিয়েছে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে কে পাবে সরকারি টাকা? অনুদানের চেকের উপর অধিকার কোন পক্ষের সেই নিয়ে শুরু হয়েছে জোর লড়াই। এই লড়াই পৌছে গিয়েছে পুলিশের কাছে। পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের একাংশ, শনিবার প্রশাসনের কাছ থেকে অনুদানের চেক নিয়ে চলে যাওয়ার পরেই কমিটির অন্য অংশ পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ বহুদিন ধরেই যেখানে বারোয়ারি পুজো হয়ে আসছে তাদেরই হাতে অনুদানের চেক দিতে হবে।

যদিও পুজো কমিটির বর্তমান সভাপতি সমীর ঘোষের দাবি, “একটি ব্যক্তিগত জায়গায় বারোয়ারি মন্দির ছিল। সেখানে কমিটির সদস্যরাও ছিলেন। কিন্তু ওই পরিবার আপত্তি তোলে। তাই আমরা বারোয়ারি পুজোর স্থান পরিবর্তন করে অন্য জায়াগায় পুজো করছি। এক গ্রামবাসী আমাদের পুজোকমিটির নামে জায়গা রেজেস্ট্রি করেও দিয়েছেন। ওই জায়গাতেই এবার স্থায়ী মণ্ডপ তৈরি হবে। সরকার আমাদের কমিটির হাতেই চেক দিয়েছে। সেই টাকাতেই পুজো হবে।”

জানা গিয়েছে মূলগ্রাম ব্রহ্মাণীতলা দুর্গাপুজো কমিটির পুজোর বয়স প্রায় সত্তর বছর। কিন্তু বায়োয়ারি পুজোর জন্য কমিটির নিজস্ব জায়গা ছিল না। ওই গ্রামের বাসিন্দা ঘোষ পরিবারের পূর্বপুরুষরা পুজোর জন্য চার ছটাক জায়গা দেন। সেই জায়গা মৌখিকভাবেই দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। সেখানেই মণ্ডপ বেঁধে পুজো হত আগে। প্রায় ১৫ বছর আগে সেখানে ছোট একটি মন্দির তৈরি করে পুজো হচ্ছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত দু’মাস ধরেই ওই জায়গার মালিকের সঙ্গে কমিটির কর্মকর্তাদের সংঘাত সৃষ্টি হয়। কয়েকজন যুবক ওই মন্দিরে সন্ধ্যায় তাস খেলতে গেলে আপত্তি তোলেন পরিবারের লোকজন। তারপরেই কমিটির সম্পাদক ত্রিদিব ঘোষ, সভাপতি সমীর ঘোষ সহ একাংশের সঙ্গে মতবিরোধ শুরু হয়। এই সংঘাতের পরেই গ্রামের সুফল ঘোষ নামে এক ব্যক্তি আধ কাঠা জায়গা দান করেন। সেই নতুন জায়গাতেই বারোয়ারি পুজো করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। শুরু হয়ে যায় পুজোর তোরজোড়। এতদিন বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি না হলেও, সমস্যা বাড়ে শনিবার সরকারি অনুদানের চেক পাওয়ার পরে। কমিটির পক্ষ থেকে সভাপতি এবং সম্পাদক চেক নিয়ে যাওয়ার পরেই একাংশ পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। দাবি চেকের আসল হকদার তাঁরাই।

গ্রামের বাসিন্দা নগেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “এতদিন কোনও সমস্যা হয়নি। মতবিরোধের কারণে ওরা দক্ষিণপাড়ার আদি মন্দির থেকে সরে গিয়ে উত্তরপাড়ায় আলাদা করে ঠাকুর পুজো করছে। যাঁরা কমিটির সভাপতি, সম্পাদক রয়েছে তাদের নামেই কমিটির উদ্বৃত্ত টাকা থাকে। ওই টাকা সুদে খাটানোও হয়। আমরা সেই নিয়ে এতদিন কিছু বলিনি। কিন্তু যেহেতু ওরা নিজেরাই সরে গিয়েছে তাই আদিকাল থেকে যেখানে পুজো হচ্ছে সেই কমিটিরই সরকারি অনুদানের চেক প্রাপ্য। তাই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।” জানা গিয়েছে, রবিবার দুই পক্ষকে কাটোয়া থানায় ডাকা হয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান এখনও হয়নি। কাটোয়া থানার আইসি তীর্থেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আপাতত চেকটি আটকে রাখা হচ্ছে। এরপর সমস্যার সমাধান হলে চেক ভাঙানো হবে।”

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ