Advertisement
Advertisement

পুজোর মরশুমে বাড়তি রোজগারের আশায় শিলিগুড়িতেই থাকতে চান নেপালি পরিযায়ীরা

পর্যটন মানেই বাড়তি রোজগারের সময়।

Labours from nepal will stay in bengal during puja for their income
Published by: Kousik Sinha
  • Posted:September 18, 2025 5:52 pm
  • Updated:September 18, 2025 5:52 pm  

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি : পুজো মানেই লম্বা ছুটি। দেশে ফেরার পালা, ঘরে ফেরার জন্য মন কেমন করা। কিন্তু ওদের মনে আনন্দ নেই। আছে শুধুই উদ্বেগ। পরিবারের কথা চিন্তা করে রাতের ঘুম উড়েছে। তবুও দেশে ফিরতে চায় না ওরা। রোজগার তো করতে হবে! শিলিগুড়িতে বসবাসকারী নেপালের নাগরিকদের এখন দীর্ঘশ্বাসই সম্বল। তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাসের কাছে এক পথ চলতি হোটেলে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নেপালের দোলখা জেলার বাসিন্দা বছর ৩০-এর ভীম বাহাদুর থামি (নাম পরিবর্তিত) বললেন, ‘দেশে ফিরে কী করব! খাবার কোথায় পাব। পুজোর মধ্যে কোথাও যাচ্ছি না। এখানে থেকে বাড়তি রোজগার করে দেশে পাঠাব।’

Advertisement

বছর পাঁচেক ধরে হোটেলে কাজ করছেন তিনি। ভীম বাহাদুর শুনেছেন তাঁর দেশের ‘জেনারেশন জি’ অথবা ‘জেন জি’ আন্দোলনের কথা। জানেন সুদান গুরুংয়ের নামও। তাঁর নেতৃত্বে কীভাবে অভ্যুত্থান হল, কে পি শর্মা অলির কমিউনিস্ট সরকারের পতন হল কীভাবে, কীভাবে ছড়াল চূড়ান্ত অরাজকতার কথা।

তবে এটুকু জেনেছেন যে তাঁর পরিবারের লোকজন নিরাপদে আছেন। এটুকুই স্বস্তি। কিন্তু পেট তো চালাতে হবে! বাহাদুর বলেন, “দেশে কাজ নেই। দু’বেলা খাবার জোটে না। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী ও সাত বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে। ওদের মুখের দিকে তাকিয়েই শিলিগুড়িতে এসেছি। দিনে হোটেলে কাজ করি, রাতে এক বাড়িতে পাহারা দিই। যা রোজগার হয় তার বেশির ভাগটা দেশে পাঠিয়ে খুব কষ্টে থাকি।” সামনে তো পুজো দেশে যাবেন না? এই প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলেন তিনি। বলেন, “করব কী দেশে ফিরে! খাবার কোথায় পাব।”

শুধু ভীম বাহাদুর একা নন, শিলিগুড়ি শহর, দার্জিলিং, কালিম্পং, সিকিমে ছড়িয়ে আছে তাঁর মতো লক্ষাধিক নেপালের বাসিন্দা। কেউ হোটেল-রেস্তরাঁয় মোমো-চাউমিন বানান, কেউ নৈশপ্রহরীর কাজ করেন, কেউ হাটে-বাজারে জড়িবুটি বিক্রি করেন। নেপালের চারিকোটের বাসিন্দা পেশায় পোর্টার, পাসাং তামাং বলেন, “পরিবারের লোকজন কাঠমান্ডুতে আছে। ফোনে যোগাযোগ হয়েছে। ভালো আছে। এখন বাড়িতে যাব না। তবে বাড়িতে টাকা পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে। দেখি চেনাজানা কেউ যায় কি না।” লক্ষ্মণ ভট্টের মতো কয়েকজন নেপালের বাসিন্দা জানান, বাড়ির লোকজন ফিরে যেতে বলেছে। কিন্তু ফিরে কী করবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না।

সামনেই পুজো। লম্বা ছুটি। পাহাড়ে পর্যটনের মরশুম। পর্যটন মানেই বাড়তি রোজগারের সময়। তাই পুজোয়  দেশে ফেরার কথা ভাবছেন না কেউ। ভীম বাহাদুর ও লক্ষ্মণ ভট্টের মতো নেপালের বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দেশ থেকে দরিদ্র পরিবারের ছেলেরা উত্তরে বিভিন্ন শহরে আশ্রয় নিয়ে বাবুর্চি, গৃহকর্মী, নিরাপত্তারক্ষী অথবা সামান্য বেতনের বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়েছে। নেপালের নাগরিক হিসেবেই থাকেন তাঁরা। দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত আছে। অন্য একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের তালিকার শীর্ষেও রয়েছে নেপাল। ওই দেশের ১৩ হাজারের বেশি ছেলেমেয়ে ভারতে পড়াশোনা করেন। তাঁরাও পুজোর ছুটিতে দেশে ফিরতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন দার্জিলিংয়ের সেন্ট জোসেফ স্কুলের ফাদার স্ট্যানলি।

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement