Advertisement
Advertisement

ছেলেধরা সন্দেহে গণপ্রহার অব্যাহত, দিনভর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি

গুজব ছড়িয়ে অশান্তি, গণপ্রহারের ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা পুলিশের।

Mass lynching in suspect of child lifter
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 19, 2019 7:19 pm
  • Updated:February 19, 2019 7:19 pm   

সৈকত মাইতি ও নবেন্দু ঘোষ: ফের ছেলেধরা সন্দেহে গণপ্রহারের ঘটনা রাজ্যের দু’প্রান্তে। এবারের ঘটনাস্থল পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের খারুই ইউনিয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্কুলের সামনে মঙ্গলবার সকালে এক ব্যক্তিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। যুবককে ধরে প্রহার করতে শুরু করে উত্তেজিত জনতা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ওই অজ্ঞাতপরিচয় যুবককে উদ্ধার করে স্কুলের ভিতরে নিয়ে গেলে, তাঁকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা। পরিস্থিতি এতটাই অশান্ত হয়ে ওঠে যে তমলুক থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। কমব্যাট ফোর্স নামিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্ত্বে আনা হয়।

Advertisement

[রেললাইনের ধারে কাঠবিড়ালী মেরে চলছে ভোজ, ক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা]

ঘটনার সূত্রপাত সোমবার। ভোকেশনাল ট্রেনিং চলছিল খারুই ইউনিয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। নিজের হাতের কাজ শেখাতে স্কুলে গিয়েছিলেন রাজস্থানের যুবক অশোক রাও। তাঁর কাছে কোনও পরিচয়পত্র ছিল না। ভাষাগত সমস্যাও হচ্ছিল। তাই অশোক রাওকে ওইদিনের মতো চলে যেতে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার ফের হাতের কাজ শেখাতে খারুই স্কুলে যান অশোক। তাতেই বিপদ বাড়ে। তাঁকে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় কয়েকজন অভিভাবক চড়াও হন তাঁর ওপর। আশেপাশের মানুষজনকে ডেকে স্কুলের গেটের বাইরে অশোক রাওকে ধরে চলে ব্যপক গণপ্রহার। স্কুলের বাইরে এমন হই-হট্টগোলের আওয়াজ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুপম জানা। তিনি কোনওক্রমে যুবককে উদ্ধার করে স্কুলের ভিতরে নিয়ে যান। খবর দেন তমলুক থানায়। কিন্তু ততক্ষণে পরিবেশ উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। অভিভাবকরা শিক্ষকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ভাঙচুর চলে স্কুলের গেটে। তাঁদের দাবি, নির্দিষ্ট পরিচয়পত্র ছাড়া ওই যুবককে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কেন তাঁকে স্কুলের ভিতরে নিয়ে গিয়েছেন, সেই প্রশ্ন তুলতে থাকে ক্ষিপ্ত জনতা। খারুই গ্রামের গণপ্রহারের ঘটনার খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে পাশের গ্রামগুলিতে। সকলে জড়ো হন স্কুলের সামনে। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে অভিভাবকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাঁধে পুলিশের। পরে কমব্যাট ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উত্তেজিত জনতার হাত থেকে রাজস্থানের যুবক অশোক রাওকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

[সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট, চাকরি ছাড়তে বাধ্য হলেন স্কুল শিক্ষক]

অন্যদিকে, ঠিক একইরকম ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ন্যাজাট এলাকা। ছেলেধরা সন্দেহে এদিন এক যুবককে ধরে, গাছের সঙ্গে বেঁধে চলেছে গণপ্রহার। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। সন্দেশখালি এক নম্বর ব্লকের ন্যাজাট থানার পার্শ্বেমারি গ্রামে এনিয়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। তাকে সন্দেহজনকভাবে ঘুরতে দেখে জনতার সন্দেহ হয়। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর থেকে এলাকায় গুজব ছড়িয়েছে, জঙ্গি, ছেলেধরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই সন্দেহেই এই ব্যক্তিকে ধরে চলে গণপিটুনি। ১৫ তারিখ অর্থাৎ পুলওয়ামা হামলার পরেরদিনও এইরকম ঘটনা ঘটে। সেখানেও পুলিশের হস্তক্ষেপে উদ্ধার পান তাঁরা। পরে দেখা যায়, ওই যুবক সম্পূর্ণভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন। এদিকে, হাওড়ার ডোমজুড় এবং বেলুড়েও গণপ্রহারের ঘটনা ঘটেছে। ডোমজুড়ের রাজাপুরে এক প্রৌঢ়কে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের তরফে কড়া নির্দেশ রয়েছে, এধরনের ঘটনা কড়া হাতে মোকাবিলা করতে। সেইমতো কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু তা সত্বেও এধরনের ঘটনা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে সকলের।    

nazat-lynch

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ